শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন রাকা দাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
.............................................................................
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

বইঃ শেষ মৃত পাখি
লেখকঃ শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
প্রকাশকঃ সুপ্রকাশ
পৃষ্ঠাঃ ৪০৩
মূল্যঃ ৫২০/- টাকা

বর্ষাকালের দার্জিলিঙের পটভূমিতে উপন্যাসটির সূচনা হয়। সময়কাল ২০১৯। এক সাংবাদিক তনয়া এসে উপস্থিত হয় এক বিখ্যাত সাহিত্যিক অরুণ চৌধুরীর বাড়ি। চুয়াল্লিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক অমীমাংসিত খুনের রহস্য নিয়ে এক ডকুমেন্টারি লেখার উদেশ্যে তার আগমণ। কিন্তু ধীরে ধীরে সে জড়িয়ে পরে এই রহস্যের সঙ্গে।এই মনে হচ্ছে সে রহস্যের সমাধানের দিকে এগচ্ছে, পরক্ষণেই আবার কুয়াশার মতো ভীড় করে আসছে রহস্যের ভিন্ন এক রূপ। দার্জিলিঙের আবহাওয়ার মতো রহস্যের মেঘ ঘিরে ফেলছে তনয়াকে সাথে পাঠকদেরও।

অপরাধ ও শাস্তি। কে আসল অপরাধী? এবং তার কী শাস্তি হওয়া উচিত?

উপন্যাসটি মাঝে মাঝে আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে নকশাল আন্দোলনের সময়ের সেই অশান্ত পরিবেশে। সেই সময়ের উদীয়মান কিছু তরুণ কবিদের লেখায় গর্জে উঠছে রাগ, দুঃখ, প্রতিবাদ। তাদেরই মধ্যে একজন যার নাম অমিতাভ মিত্র। তার সাথে গল্পে একবারও সরাসরি ভাবে আমাদের আলাপ না হলেও তাকে চিনতে পারি আমরা তার পরিচিতদের জবানবন্দি শুনে। এইভাবেই একাত্ব হয়ে উঠি আমরা অমিতাভ মিত্রর সাথে। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ি। তার রাগ দুঃখ হতাশা  সব কিছু অনুভব করতে পারি। এই অমিতাভ মিত্রেরই হত্যা রহস্য রয়ে যায় অসমাধিত। খুনি রয়ে যায় অধরা। চুয়াল্লিশ বছর পর তনয়ার হাত ধরে সেই রহস্য আবার পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে। 

লেখকের লেখনীশৈলী অত্যন্ত সাবলীল। উপন্যাসটির সাহিত্যগুণ উপন্যাসটিকে রহস্য উপন্যাস ছাড়াও অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে। উপন্যাসটির গতি ধীর। রহস্য উদঘাটনের কোন তাড়াহুড়ো নেই। পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে থেমে গিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে। চরিত্র গঠন, সংলাপ রচনা আমার বেশ মন কেড়েছে। তবে মূল চরিত্র তনয়াকে আরও চেনা বাকি রয়ে গেছে। তার অতীত, তার অনুভুতি, তার চরিত্রের দোষ গুন অজানা রয়ে গেছে। তার চরিত্র এখনও এক রহস্য। এই চরিত্রকে নিয়ে লেখক পরবর্তীকালে আরও উপন্যাস লিখলে আশা করি আরও বিস্তারিতভাবে জানতে ও চিনতে পারব তাকে। বাকি চরিত্রগুলি প্রায় সবাই আমার মনে ছাপ ফেলে গেছে। দোষে গুণে ভরা প্রতিটি চরিত্রই। উপন্যাসের শেষে আবারও নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে আসল অপরাধী কে? আসলেই কি কেউ অপরাধী? না সবাই টালমাটাল পরিস্থিতির শিকার? বেশ বুঝতে পারছি এই উপন্যাসের রেশ বেশ কয়েকদিন থাকবে আমার মনে। চরিত্রগুলিকেও মনে থাকবে অনেকদিন। মনে থাকবে বাবলার কুকুরটিকেও।  

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।