মগ্নপাষান।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের ঐতিহাসিক উপন্যাস 'মগ্নপাষাণ' পড়ে লিখেছেন অনিরুদ্ধ রায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।

...................................................................

গতকাল পড়লাম একটি ঐতিহাসিক কাহিনী নির্ভর উপন্যাস " মগ্নপাষাণ " , সুপ্রকাশ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত, মূল্য ~ ৩৯০/- ।

সূর্যনাথ ভট্টাচার্য প্রণীত এই উপন্যাসটি আবর্তিত হয় মগধনরেশ দেবনাংপিয়ানো পিয়দসি অশোক  এর সিংহাসনে আরোহণ কে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে অন্তঃসলিলা হয়ে ভেসে চলে প্রেম ,বিরহ, আশাভঙ্গ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ইত্যাদি নানাবিধ জাগতিক বন্ধন। খৃষ্টজন্মের দুইশত সত্তর বৎসর পূর্বে মগধ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন বিন্দুসার পুত্র অশোক । কিন্তু এই অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম ছিল না। কারণ অশোক বিন্দুসারের এক অখ্যাত রাণীর পুত্র। অগ্রমহিষী পুত্র না হওয়ার কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অধিকার অনেকাংশেই কম ছিল সিংহাসনের উপর। তিনি অগ্রমহিষী পুত্র সুসীম কে পরাস্ত করে কীভাবে তিন দশক রাজত্ব করলেন সেই কাহিনীই লেখকের কলমে ফুটে উঠেছে এই পরিসরে ‌। 

উপন্যাস টি শুরু হয়েছে খৃষ্টপূর্ব ২৪১ এ , যেখানে দেখা যাচ্ছে সম্রাট প্রিয়দর্শন ( উপন্যাসে এই নামেই পরিচিত ) রাজ্যজয়,যুদ্ধ এসকল ত্যেজে ধর্মযাত্রায় ব্রতী হয়েছেন, তিনি পাথরের উপর খোদাই করাচ্ছেন নানাবিধ ধর্মবিষয়ক রাজাজ্ঞা। তাঁর মনে হয়েছে হত্যা করতে হলে স্বীয় আকাঙ্ক্ষা কে হত্যা করা উচিত। তিনি সহচর প্রবরকে বলেন "অনেক পুণ্যে মানবজন্ম পেয়েছো প্রবর । প্রবৃত্তির দাসত্ব করে তাকে পশুজন্মে পরিণত কোরো না।"

এর ঠিক কিছু পরেই পাঠক প্রবেশ করবে মূল‌ আখ্যানে। সম্রাট সহচর প্রবরকে বলবেন দূরের পর্বতের দিকে তাকিয়ে একটি ছোট্ট গ্রাম তিন্দারির কথা যেখানে তিনি লাভ করেছিলেন তাঁর দ্বিতীয় পত্নী কারুবাকী কে । তারপরই পূর্বাবর্ত শিরোনামে খৃষ্টপূর্ব ২৭৬-২৭২ থেকে শুরু হবে সম্রাট প্রিয়দর্শনের তিন্দারি যাত্রার এবং পরবর্তী নানা ঘটনার ইতিহাস। এরই মধ্যে পাওয়া যাবে দুটি মূল নারী চরিত্রদের যাদের উপস্থিতি এই  পরিসরে সিংহভাগ এবং লক্ষ্যণীয়। যথাক্রমে কারুমালি এবং কারুবাকী। এই কারুমালি যে পরবর্তীতে কীভাবে হয়ে উঠবে নামজাদা নগরনটী অশ্মলেখা , বন্য রাজকুমার তথা চন্ড নামে লোকখ্যাত রাজকুমার ভাগ্যচক্রের খেলায়  প্রিয়দর্শন কীভাবে হয়ে উঠবেন মগধ নরেশ , অশোকের শিলালিপি তে কীভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে খোদাই হবে

" তীভলজননী কারুবাকী" র নাম, রাজকুমার সুসীম যার কিনা সম্পূর্ণ অধিকার সিংহাসনে আরোহণ করার তারই বা অন্তিম পরিণতি কী হবে তা জানতে চাইলে পড়তে হবে " মগ্নপাষাণ " । সবশেষে পাঠকের মনে হয়ত সত্যিই মনে আসবে ধর্মজয়যাত্রাকালে সম্রাট যে শিলালিপি তিন্দারি গ্রামেও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা কি কালের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে‌ নাকি আজও সে লালিত আছে পরম স্নেহে প্রকৃতিমায়ের কোলে ।

পুনশ্চ ~ লেখকের শব্দ চয়ন অত্যন্ত ভালো। আমার ভীষন ভালো লেগেছে ওনার শব্দ চয়ন এবং তৎসহ বাক্য গঠন । আমি ব্যক্তিগত ভাবে বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন প্রমুখের লেখার ভাষা বা একটু অলঙ্কার, উপমা দেওয়া লেখা একটু বেশি ভালোবাসি সেই কারণেই বোধহয় এই ভালোলাগা।



Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।