উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ।।
অনেকদিন পর স্মৃতির শহরে পা দিয়ে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। অবিরত চেনামুখগুলো কোথাও ধূসর, কোথাও ছায়া ভেঙে সামনে চলে আসে। কখনো আবার কোনো প্রাচীন ঘোলাটে চোখ তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তারপর দন্তবিহীন মাড়ি ছাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে, কীরে, কেমন আছিস? কবে এলি? তখন তার ঘোলাটে চোখ চকচক করে ওঠে। বেরিয়ে আসতে চায় দ্যুতি। ছুটোছুটি করতে চায় সামনে ছড়িয়ে থাকা সবুজ মাঠের ওপর। তাকিয়ে থাকি আমিও। উত্তর দিই, ভালো। কাল এসেছি। তুমি কেমন আছ? —এই আছি। তোর ঘরের খবর কী? সব ভালো তো? কুশল সংবাদ বিনিময় চলছে, আর আমি ভেতরে ভেতরে হাতড়ে চলেছি নাম। এই প্রাচীনের নামটা মনে করতে পারছি না। প্রাচীনত্ব কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইল। তারপর পেনাল্টি কিক মারার মতো শব্দ ছিটকে দেয়, ‘মনাটা মরে গেল।’ কোনো আবেগ নেই। দুঃখ নেই, শুধু সংবাদ। সেই ছিটকে আসা শব্দ দু-হাতে লুফে নিয়ে বললাম, ও তো আলাদা বাড়ি করেছিল। —বড়দাকে মনে আছে? সুনীলদা? সেও মারা গেছে। —শুনেছি। কথাটা বলার সঙ্গেসঙ্গে নামটা ভেসে উঠল-- নীরজদা। ভালো ফুটবল খেলত। শহরে প্রথম ডিভিশনে খেলত। কাজ করত কারখানায়। খেলা, কাজ আর সংসার নিয়েই ছিল তার যাপন। এখন, এই প্রাচীন বয়সে বাড়ির সামনে একটা গুমটি চায়ের দোক...