Posts

Showing posts from 2025

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ।।

Image
অনেকদিন পর স্মৃতির শহরে পা দিয়ে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। অবিরত চেনামুখগুলো কোথাও ধূসর, কোথাও ছায়া ভেঙে সামনে চলে আসে। কখনো আবার কোনো প্রাচীন ঘোলাটে চোখ তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তারপর দন্তবিহীন মাড়ি ছাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে, কীরে, কেমন আছিস? কবে এলি? তখন তার ঘোলাটে চোখ চকচক করে ওঠে। বেরিয়ে আসতে চায় দ্যুতি। ছুটোছুটি করতে চায় সামনে ছড়িয়ে থাকা সবুজ মাঠের ওপর। তাকিয়ে থাকি আমিও। উত্তর দিই, ভালো। কাল এসেছি। তুমি কেমন আছ? —এই আছি। তোর ঘরের খবর কী? সব ভালো তো? কুশল সংবাদ বিনিময় চলছে, আর আমি ভেতরে ভেতরে হাতড়ে চলেছি নাম। এই প্রাচীনের নামটা মনে করতে পারছি না। প্রাচীনত্ব কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইল। তারপর পেনাল্টি কিক মারার মতো শব্দ ছিটকে দেয়, ‘মনাটা মরে গেল।’ কোনো আবেগ নেই। দুঃখ নেই, শুধু সংবাদ। সেই ছিটকে আসা শব্দ দু-হাতে লুফে নিয়ে বললাম, ও তো আলাদা বাড়ি করেছিল। —বড়দাকে মনে আছে? সুনীলদা? সেও মারা গেছে। —শুনেছি। কথাটা বলার সঙ্গেসঙ্গে নামটা ভেসে উঠল-- নীরজদা। ভালো ফুটবল খেলত। শহরে প্রথম ডিভিশনে খেলত। কাজ করত কারখানায়। খেলা, কাজ আর সংসার নিয়েই ছিল তার যাপন। এখন, এই প্রাচীন বয়সে বাড়ির সামনে একটা গুমটি চায়ের দোক...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ

Image
করোটি পাহাড়ে উঠে আসার মুখে, একটা পাথরে নিজের ভর সঁপে বসে ছিল গায়াস। তার সেনা-পোশাকে লেগে থাকা রক্তের দাগ শুকিয়ে গাঢ় হয়েছে। গতকালের ভিড় অদৃশ্য হয়েছিল সন্ধের আগেই। তারপর থেকে ক্রুশবিদ্ধ শরীরগুলো পালা করে পাহারা দিয়ে গেছে অধীনস্থ সামারিটান সৈন্যরা। ক্লান্ত ছিল তারাও। আটদিন ধরে চলা নিস্তারপর্বে শহরে বহু পুণ্যার্থীদের আসা যাওয়া লেগে থাকে। সেই সময় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে কম শক্তিক্ষয় হয় না। নিস্তারপর্ব মিটতে না মিটতেই আবার বিচারসভা বসেছিল। সে-ও এক অশান্তির পরিবেশ। আর তারপর গতকালের অস্থিরতা। সবকিছু সামলানোর পরে একটু বিশ্রাম তাদেরও প্রাপ্য। এক রোমান সেঞ্চুরিয়ানকে করোটি পাহাড়ের মুখে উঠে আসতে দেখে নিজের ভাবনা থেকে সরে এল গায়াস। একটু দূরেই গভর্নর পিলেতের ব্যক্তিগত সচিব ম্যালিনাস উদাস মুখে দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি বাঁধা পড়ে রয়েছে ক্রুশবিদ্ধ নাজরাতীয় জিশুর নিষ্প্রাণ শরীরে। ম্যালিনাসকে আগে কখনো এতটা বিচলিত হতে দেখেনি গায়াস। বিচার শেষে এমন পরিণতি নতুন নয়। গলগাথার রাস্তায় এমন সারিবদ্ধ ক্রুশের অবস্থিতি বিষণ্ণতা এবং ভয় মিশ্রিত এক ধরনের অতীন্দ্রিয় অনুভূতির জন্ম দেয় বটে, তবে তা সাধারণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেক্রেটারি ম্...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ

Image
ভিড়টা করোটি পাহাড়ে উঠে এসেছে অনেকক্ষণ। সাব্যাথের আগেই যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে। এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল। সামারিটান সৈন্যরা খুশিমনে তা পালনে ব্যস্ত। ইহুদিদের প্রতি তাদের জন্মগত ঘৃণা। ফরীশী হোক কিংবা সদ্দূকী সম্প্রদায়ের— ধর্মগতভাবে ইহুদি হলেই তাদের প্রতি নিজেদের মনের ভাব সামারিটানরা আর আড়ালে রাখে না। শুরু থেকেই তারা দীর্ঘ দশকের সঞ্চিত ঘৃণা উজাড় করে দিয়েছে নাজরাতীয় জিশুর প্রতি। কাইয়াফাস ঠিক সেরকম নির্দেশই দিয়েছিলেন— অনুরাগীদের সামনে তাদের প্রভুকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার। গায়াস নিজে সেই পাপকার্যে অংশগ্রহণ করেনি, তবে নীরব ছিল। মান্য করার এক সুদীর্ঘ অভ্যাস তাকে চালিত করেছে। কিন্তু এরপর যা হতে চলেছে, তা সহ্য করা অসম্ভব মনে হচ্ছে। ওই তো, একজন সামারিটান সৈন্য এগিয়ে যাচ্ছে ক্রুশবিদ্ধ মানুষটার দিকে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। অপরাধীর পা দুটো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া, যাতে মৃত্যুর আগেও তীক্ষ্ণ যন্ত্রণার অনুভবে অতৃপ্তি না থাকে। খানিক আগে বাকি দুই সাধারণ অপরাধীদের ক্ষেত্রেও একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। ক্রুশবিদ্ধকরণের এ এক বহু অভ্যাসজনিত পদ্ধতি। গায়াসের হাতের মুঠো অজান্তেই আরও জোরে চেপে বসল প্রাচীন বর্...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ।।

Image
হ্যাঁ, অল্পস্বল্প আলাপ হয়েছিল সিনেমাপাড়াতেই। কোনো এক সিনেমার শুটিং পর্বেই আলাপ। খুব মিশুকে লোক ছিলেন তিনি, জমিয়ে আড্ডা দিতে পারতেন। বললেন, ‘তুমি তো বসুশ্রী কফি হাউসে বসো।’ বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তখন রবিবার সকালে আমি, তরুণ চৌধুরী আর কয়েক জন বসুশ্রী কফি হাউসে বসতাম। শিয়ালদার বোর্ডিং হাউসে থাকি তখন। ওই বসুশ্রীতেই অন্যপাশে অনিল চট্টোপাধ্যায় বসতেন কয়েক জন সিনেমা-লেখকের সঙ্গে। তাঁরা সিনেমা সমালোচনা ছাড়াও তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে লিখতেন। তবে, সিনেমাপাড়ার সঙ্গে তেমন প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল না। ওখানেই তিনি দেখেছিলেন আমাকে। শুটিং-এর ফাঁকে কথা বলতে বলতে বেশ জমে গেল। আসলে, তিনি তো ছিলেন আড্ডাবাজ। তবে, মাঝেমধ্যেই তিনি উধাও হয়ে যেতেন। চলে যেতেন ঘাটশিলায়। ওখানে ‘বিভূতিভূষণ স্মৃতিরক্ষা কমিটি’র সভাপতি ছিলেন। সিনেমাপাড়ার শিল্পী-কলাকুশলী সংগঠনেরও তিনি শীর্ষে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চলচ্চিত্র উন্নয়ন পর্ষদের শীর্ষেও বোধ হয় ছিলেন বেশ কিছুদিন। এত সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেও কিন্তু মানুষটা এক-শো ভাগ ছিলেন সিনেমার মানুষ। কয়েক দিনের আড্ডাতেই তিনি জেনে নিলেন আমার হাল-হকিকত। আমিও যে উড়নচণ্ডী, সেটা জেনে বললেন, আমিও তো উড়নচণ্ডী। এখন ...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
সত্যদার কথা বলেছি। সত্যদা—মানে, সত্য মজুমদার। পেশায় প্রযুক্তিবিদ, নেশায় বেহালাবাদক। বেহালা ছিল তাঁর আনন্দ, তাঁর আবেগ। সুরের সাধনায় তিনি নির্জন হয়ে যেতেন নিজের ভেতর। বোধ হয় তাঁর কখনো মন খারাপ করত না। কখনো মন এপাশ-ওপাশ করলেই বেহালায় ছড় টেনে সুরের নদীতে সাঁতার কাটতেন। ডুবসাঁতার। স্নাত হলে কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টির আঁচল ছড়িয়ে দিতেন নীলিমে। তারপর মৃদু হেসে বলতেন, বলো। বলার কিছু থাকে কি? শুধু তাঁর সঙ্গে স্নাত হওয়া ছাড়া। সুরের এই ঝরনাতলায় স্নান ছাড়া আর কী-ই-বা হতে পারে! সুরের মতোই তাঁর গভীর দু-চোখে ছিল আলোকবর্ণ। মাঝে মাঝে মনে হত, সারাদিন লোহালক্কড়ের সঙ্গে সহবাস করেও একটা সুরেলা মন কীভাবে পুষে রাখা যায় হৃদয় কোটরে! পরে বুঝেছি, সুর ও সংগীত পারে মানুষকে এভাবে গড়ে তুলতে। কোন ছোট্টবেলা থেকে দেখেছি তাঁকে। যখন আমরা পুব-পাকিস্তানের দর্শনায় ছিলাম, বাবা দর্শনার কেন অ্যান্ড কোম্পানির চিনির কলে ছিলেন, সেখানেও ছিলেন তিনি। যখন আমরা চলে এলাম এপারের পলাশিতে, তিনিও এলেন। রামনগর কেরু অ্যান্ড সুগার কোম্পানি। সত্তর দশক পর্যন্ত রমরম করে চলত। পলাশির চিনি বিদেশে রপ্তানি হত। বাংলার বাজারে আসত। সত্তরের দশকেই মূলত শ্রমিক...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
না, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস নয়। এ ছিল কৃষ্ণনগর জজ কোর্টের মোড়ে লেখরাজদার চায়ের দোকান। আমরা বলতাম কফি হাউস। কেননা, নামে চায়ের দোকান হলেও, চরিত্রে ছিল কফি হাউস। আড্ডার মেজাজও ছিল তেমনি। পাওয়া যেত মাখন টোস্ট। দুধের সরের টোস্ট, ডিম টোস্ট, অমলেট। আর চা তো ছিলই। আমরা ছিলাম চা বিলাসী। কখনো-সখনো দুটো চা চার-পাঁচজন ভাগ করে খাওয়া। কারণ, তখন আমাদের পকেটের অবস্থা ছিল নিদারুণ দুখী, এখনকার বয়ানে দারিদ্র্যসীমার নীচে। লেখরাজদার দোকানটা ছিল ইংরেজি এল অক্ষরের মতো। দু-দিকে দুটো লম্বা টেবিল। টেবিলের দু-দিকে দুটো বেঞ্চ। বাইরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় দু-পাশে আরও দুটো ছোটো বেঞ্চ। ভেতরের দিকে টেবিলে আমরা বসতাম। মূলত সন্ধের পর আড্ডা জমত। রবিবার বা ছুটির দিনে দু-বেলা। দুটো টেবিলের পালিশ ক্রমশ কালো রঙের হয়ে গিয়েছিল। যে টেবিল থেকে রাস্তা দেখা যেত, তারই একপ্রান্তে লেখরাজদা ক্যাশবাক্স নিয়ে বসে থাকতেন। দোকানে একজন কর্মচারী থাকত, সে-ই চা করত। ডিম টোস্ট করত। বৃদ্ধ লেখরাজদা ক্যাশবাক্স আগলে রেখে চারদিকে নজর রাখতেন। তাঁকে কখনো রাগতে দেখিনি। খুব উঁচুস্বরে কথা বলতেন এমনও নয়। প্রাচীন বৃক্ষর মতো তিনি অবলোকন করে গেছেন বিচিত্র ...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
যতদূর মনে পড়ছে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে। স্মৃতি কি একটু বিশ্বাসঘাতকতা করল? হতে পারে। তবে এটা মনে আছে, কয়েক জনের উদ্যোগে কৃষ্ণনগরে পাত্রবাজারে শোভন মুদ্রণী থেকে একটা ট্যাবলয়েড বেরোতে শুরু করে। সংবাদপত্র। সাপ্তাহিক। গ্রাম-গ্রামান্তর। এটুকু মনে পড়ছে এককালীন নকশাল নেতা রামু ব্যানার্জি এই উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন। চার পৃষ্ঠার ট্যাবলয়েড। নিউজপ্রিন্টে ছাপা। প্রকাশক ও মুদ্রক প্রেসের মালিক নীহার বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদনার দায়িত্ব বর্তাল তরুণ কবি ও গদ্যকার শতঞ্জীব রাহার ওপর। (জনান্তিকে বলে রাখি, একসময় শতঞ্জীব বদলে ‘সতঞ্জীব’ করে নিয়েছিল। জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেছিল, শত বছর নয়, সৎভাবে বাঁচতে চাই।) আর শতনকে (এই নামেই আমরা ডাকতাম) কাঁধ দেওয়ার জন্য ছিল এই উড়নচন্ডী। আমরা অবৈতনিক। কীসের টানে, কোন মতাদর্শে যে সংবাদপত্র করে যাচ্ছিলাম, কে জানে! কিন্তু, ক্রমশ নেশা হয়ে গেল। সকাল-বিকেল দু-বেলা প্রেসে হাজির। তারই মাঝে খবর সংগ্রহ, টিউশনি, প্রেসে বসে বিস্তর কাজ। লেটার প্রেসের যুগ। হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকি আমরা দু-জন। টিউশনির পয়সায় মুড়ি চিবুই। ক্রমশ শহরের অন্য ট্যাবলয়েডকে পেছনে ফেলে ‘গ্রাম-গ্রামান্তর’ এগিয়ে...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
কাজ করতাম ‘নবম দশম’ পত্রিকায়। কিন্তু, সিনেমাপাড়ার খবর লিখতাম অন্য কাগজে বেনামে। মাঝেমধ্যে  ‘পরিবর্তন’-এও লিখতাম। তা ছাড়া, সিনেমাপাড়ায় যাতায়াত ছিল অনেকদিন ধরেই। ফলে, একটা টান ছিলই। অফিস ছুটির পর প্রায়ই চলে যেতাম সিনেমাপাড়ায়। কোনোদিন সমীরণ থাকত, নাহলে আমি আর অরুণদা। কখনো একাই চলে যেতাম। আর, স্টুডিয়োতে ঢোকা এত কড়াকড়ি ছিল না। ইচ্ছেমতো যাতায়াত করা যেত। অনেকের সঙ্গেই চেনা-জানা হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুত্ব হয়েছিল কারো কারো সঙ্গে। তাঁরা ছিলেন সিনেমার নেপথ্যের কারিগর। দু-চারজন পরিচালক আর শিল্পীর সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কৃষ্ণনগর থেকে অমল শূরের সঙ্গে আলাপ। পরে ঘনিষ্ঠতা। অমলদা যখন ‘রসময়ীর রসিকতা’ করেছিলেন, তখন দু-চারদিন শুটিং-এও ছিলাম। সম্পাদনার কাজ যখন চলছিল, তখন সেখানে কাজ দেখার জন্য থাকতে দিয়েছিলেন। অনেক কারিগরি বিষয় শিখেছিলাম তাঁর কাছ থেকে। অমলদা বলতেন, সিনেমার খুঁটিনাটি না-জানলে ভালো সমালোচক হওয়া যায় না। তা, সেই সান পাবলিসিটির দৌলতে একদিন রায়বাবুর বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায় হাতেখড়ি দিলেন ‘ফটিকচাঁদ’ ছবি করে। ছেলের পরিচালনায় প্রথম ছবি। বাবা সত্যজিৎ পেছন থেকে মদত দিয়ে যাচ...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলেছি। পাত্রবাজারের মধ্যে দিয়ে। তখনই দেখি মজনু এগিয়ে  আসছেন তাঁর স্বভাব-ভঙ্গিমায়। ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত, চোখে চশমা, বাবরি চুল, কপালের ওপরের চুল সরে গিয়েছে অনেকখানি। কাঁধে কাপড়ের ঝোলা। হাঁটছেন, তিনি হাঁটছেন। শহরের রাজপথ মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন কবি মজনু মোস্তাফা। ওই ঝোলায় হাত দিলে নিশ্চয় পাওয়া যাবে তাঁর কবিতার ডায়েরি। মজনু নামটা ষাট, সত্তর, আশির দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত শহরকে আলোড়িত করেছিল। কবিতায় ছিল সরলতা। আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করতে ভালোবাসতেন। পেশায় ছিলেন ইংরেজির শিক্ষক। নেশায় কবি। আরেকটা নেশাও ছিল। রাত একটু বাড়লে অথবা না-বাড়লে তিনি আসবাসক্ত হতেন। তখন তিনি উদ্দাম। বয়সের শিকল খুলে ছুড়ে ফেলে দিতেন শহরের পথে। বুকের ভেতর জমে থাকা সমস্ত অভিমান ক্রন্দন হয়ে ছড়িয়ে পড়ত। বামপন্থায় ছিল বিশ্বাস, আবার বামপন্থার তীব্র সমালোচকও বটে। শহরের এক এক মানুষের কাছে তাঁর এক এক গল্প। তাঁর পৃথিবী ত্যাগের চল্লিশ বছর পরেও তিনি একইরকম সজীব শহরের বৃত্তে। একটু উসকে দিলেই শোনা যাবে তাঁর কাণ্ডকারখানা। জাত বোহেমিয়ান। আমি বলি, উড়নচণ্ডী। তিনি বলতেন, রাঁবো ছিল তার প্রিয়। রাঁবোর মতোই তিনি উদ্দাম। ভণিতা...

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'প্রতিযাত্রা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন ফারজানা রহমান। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................................................ বই : প্রতিযাত্রা লেখক : দুর্লভ সূত্রধর প্রকাশক : সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০ টাকা   বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) তার দৃষ্টিপাত বইয়ে লিখেছিলেন, "ডিসেম্বরের সাঁইত্রিশ ডিগ্রির শীতে গালে ঠান্ডা জল দেবার চাইতে চড় দেয়া ভালো"। দুর্লভ সূত্রধরের "আহাম্মকের খুদকুড়ো" এবং "অনন্যবর্তী" এর ম্যাজিকে মোহাচ্ছন্ন হয়ে যখনই "প্রতিযাত্রা" ধরবেন, তখনই অনুভব করবেন সেই ঠান্ডা চড়! দুর্লভ সুত্রধর তার "প্রতিযাত্রা" দিয়ে শুরুতেই পাঠককে একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেন। প্রতিযাত্রার সবচেয়ে উজ্জ্বল চিহ্ন তার ভাষার স্বকীয়তা। পাঠক তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন; অনুভব করবেন। এহেন ভাষার স্বকীয়তা এবং পাশাপাশি উপমা-রূপকে সজ্জিত মায়াজাল পাঠককে চাবুকের মতো আঘাত করবে। কারন পূর্ববর্তী দুটো বই পাঠ শেষে খুব স্বাভাবিকভাবেই পাঠক একটু আয়েশ...

টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত কৌশিক ঘোষের বই 'টুক্কা’ পড়ে মতামত জানিয়েছেন কৌশিক বাজারী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ........................................................................... সেইসব দিনের কথা,  যা আবার একদিন ফিরে আসবে বলে আমাদের মতো মানুষ অপেক্ষায় বসে থাকে। আমাদের মতো, মানে আমরা যারা পঞ্চাশ পেরোচ্ছি। সেই অতি ধীর সকাল, শান্ত দুপুর, আর হলুদ বিকালের দিন। যখন কাচের গুলি-মার্বেল পকেটে  নিয়ে কেউ রাজা কেউ ফকির। সেই পুচিল, সেই প্রিয় টল মার্বেল যা দিয়ে টুক্কা মারা হবে। সেই জলসার রাত, যখন রফি আর লতাকন্ঠী দুজনেই পুরুষ মানুষ,  আর আমরা হতবাক হয়ে দেখতাম একটা গাল বসে যাওয়া খোঁচা দাড়ির লোক কোঁচকানো  পাঞ্জাবী গায়ে মাইক হাতে দুলে দুলে গাইছে— সিসা হো ইয়া দিল টুট যাতা হ্যায়… একদম হুবহু লতা! আরেকজন লম্বা মতো ফর্সা লোক গাইছে— আ যা তুঝকো পুকারে মেরে গীত… দর্শক হৈহৈ করে উঠছে পিছন থেকে… আর?  আর ধীরে ধীরে দিন বদলে যাচ্ছে, গল্পের চরিত্র (আসলে গল্প নয়) নিমাই পাত্র হেরে যাচ্ছে। সাবোতাজ হচ্ছে দলের মধ্যেই। ৮৯ এ বার্লিন প্রাচীর ভেঙে গেল, সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েতে...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
আমাদের তখন হাফপ্যান্টের বয়স। সেইসময় পুরো স্কুলজীবনটাই হাফপ্যান্টে কেটে যেত। কলেজে ঢুকলে ফুল প্যান্ট পরার অধিকার জন্মাত। তা সেই বয়সে, আমরা তখন নবম শ্রেণি। তখনই কালু চলে গেল। বীভৎসভাবে। তখনও মৃত্যু সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। বাংলার নবাবি আমলের সূর্য অস্ত গেল যে পলাশির যুদ্ধে, বহু বছর পর্যন্ত তার স্মৃতি ছড়িয়ে ছিল যে গ্রামে এবং এখনও একটি স্মৃতিস্তম্ভ বিরাজ করছে, সেই বিস্তৃত পলাশির এক অংশে চিনির কারখানা। সেই কারখানার সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে কর্মীদের আবাসন। এসবই কারখানার মালিকের। আছে হাসপাতাল, সমবায় দোকান এবং কারখানার মালিকের পৃষ্ঠপোষকতায় একটা হাইস্কুল। সেই স্কুল অবশ্য সরকারপোষিত এবং আজও দীপ্যমান। পলাশি সুগার মিল কলোনি নামে সন্নিকটস্থ গ্রামের মানুষের কাছে পরিচিত হলেও, আসলে সে ছিল এক উপনগরী। সেই উপনগরীর একদিকে সমবায়িকার পাশেই তাদের দুই কুঠুরি আবাসন। চলতি কথায় কোয়ার্টার। পড়ত পলাশি হাইস্কুলে। আমাদের সহপাঠী। একসঙ্গে খেলাধুলো, একসঙ্গে ইস্কুল। রবীন্দ্রজয়ন্তী কি স্বাধীনতা দিবস— সবখানেই কালু আছে সঙ্গে। তা, সেই কালুও চলে গেল। সে গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের শেষদিকের ঘটনা। বাংলা জুড়ে খাদ্য আন্দোলন হয়ে গে...

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের বই 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' পড়ে মতামত জানিয়েছেন মৈনাক সরকার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................ #পাঠ_অনুভূতি        দুর্লভ সূত্রধর বাবুর লেখা 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এক টাইম মেশিনে চেপে নিজের অতীত জীবনে পৌঁছে গিয়েছি, তারপর ফেলে আসা জীবনের প্রতিটা ধাপ যেন আবার নিজের চোখে ঘটতে দেখছি। এই বই যেন এক দর্পণ। আসলে বিংশ শতাব্দীর পূর্বে জন্মানো ছেলেপুলেদের ছোটবেলায় মুঠো ফোনের বাড়াবাড়ি বা অভিশাপ ছিল না, তাই মা ও প্রকৃতির আঁচলের ছায়ায় বেড়ে ওঠার গল্পগুলো, তাদের ছেলেবেলা, স্কুলজীবন, কৈশোর পার করার গল্প গুলো কমবেশি প্রায় একই রকম। লেখক নিজেকে যেরকম আহাম্মক মনে করেছেন, সে সময় সেই রকম আহাম্মকের সংখ্যা আসলেই অনেক বেশি ছিল। বইটির প্রথম পৃষ্ঠা থেকে হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করে হাঁটতে হাঁটতে কখন যেন বড় হয়ে শেষ পৃষ্ঠায় চলে এলাম অথচ ঘোর সেই বইয়ের মধ্যেই রয়ে গেল।       বইয়ের পৃষ্ঠা এবং ছাপার কোয়ালিটি অত্যন্ত ভালো। আর প্রচ্ছদটিও আলাদাভাব...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
আলবার্তো মোরাভিয়া ‘আমার দেখা ভারত’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘নৌকো পৌঁছোলো ঘাটে, একটি লরি, একটি কি দুটি গো-যান, কয়েকটি পরিবার, কয়েকজন ভবঘুরে উঠলো নৌকোর উপর। যেন যা এলো তাই গেল ফিরে, পারাপারের প্রয়োজনটাই যেন ফালতু হয়ে যায়।’ (বঙ্গান্তর : ফাদার দ্যতিয়েন) এই নৌকাই তো সেই জীবন-নৌকা, যা ভবঘুরের মতো উড়নচণ্ডী জীবনকে এপার-ওপার করে, ঘাটে ঘাটে ভিড়িয়ে দেয়। আসলে, জীবনটাই তো জীবন-ছুট। এ জীবন মেলে তো ও জীবন মেলে না। জীবনে জীবনে যোগ করার কত কথাই তো শুনি। কিন্তু, সত্যি হয় কি? বোধ হয় না। আর, হয় না বলেই চিরকাল উড়নচণ্ডী হয়ে ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়ালাম। এই ঘুরে বেড়ানো বা উড়ে বেড়ানোর বয়সও তো কম হল না। সেই সকাল থেকে বিকেলের দিকে গড়াচ্ছিল যখন বয়স, তখনই বাবা বলেছিল, উড়নচণ্ডীর মতো ঘুরে বেড়ালে চলবে? একটা কাজকামের চেষ্টা করো। চেষ্টা ছিল না এমন নয়, সকলেরই যেমন চেষ্টা থাকে, সেই জৈবিক চেষ্টা হয়তো ছিল, কিন্তু জীবনটাকে এতোল-বেতোল করে দিতেই আনন্দ ছিল ঢের। কিন্তু, সুয্যি মাঝমাঠ থেকে পেনাল্টির দিকে বল গড়িয়ে দেবার আগেই ঘাটের মাঝি নৌকাটাকে বেঁধে ফেলল খুঁটিতে। পায়ে পড়ল ভদ্দরলোকের বেড়ি। কিন্তু, মন যেখানে রাখাল রাজা, সেখানে বেঁধে রাখে কা...

নৈশ অপেরা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের বই 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন কুর্চি সুমনা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ....................................................... ঝাড়খণ্ড রাজ্যের একটি ছোট টাউন। একসময় মিনি ইংল্যান্ড হিসেবে পরিচিত ছিল এই শহরটি। কিন্তু সময়ের স্রোতে শহরটি হারিয়েছে এর বিদেশি জৌলুস। টাউনটি এখন মৃ ত গঞ্জ যেখানে বাস করে মাত্র কয়েকটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার আর সেই অঞ্চলের কিছু আদিবাসী মানুষ। শোনা যায়, এই গঞ্জে যারা বাস করেন, তার মধ্যে অনেক মানুষই মৃ ত। যেন তারা বেঁচে থাকে ছায়ায়। জীবিত ও মৃ তদের না কী আলাদা করা যায় না। এর মধ্যে গঞ্জে লুকিয়ে থাকা কাঠ মাফিয়াদের নিয়ে খবর করতে আসেন ক্রাইম রিপোর্টার তনয়া ভট্টাচার্য ( "শেষ মৃ ত পাখি"তে উল্লিখিত সাংবাদিক)। তনয়া থাকতে শুরু করেন গঞ্জের জঙ্গলের ভেতর চার্চের পাশে ডেভিড ব্রাউনের স্যাংচুয়ারি হোমস্টেতে যার এখন মালকিন ডেভিড কন্যা বারবারা। এই বাড়ি থেকে বহু বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল বারবার ভাই এডওয়ার্ডের দুই বছরের শিশু ক্রিস, যদিও ক্রিসকে সেই বাড়ির জলাভূমির কাছে এখনও প্রায়ই দেখা যায়। ...

নৈশ অপেরা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন নীরা মুখার্জি। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। .................................................... "লীন হয়ে গেলে তারা তখন তো - মৃত। মৃতেরা এ—পৃথিবীতে ফেরে না কখনো। মৃতেরা কোথাও নেই; আছে?" - জীবনানন্দ দাশ একটা মৃত গঞ্জ. যেখানে বাস করা প্রতিটা মানুষই মৃত. তারা কেবল বেঁচে থাকে ছায়ায়. সময় এখানে ক্লান্ত আর অন্ধকার নিস্পন্দ. শুধু অতীতের কঙ্কালরা কুয়াশার গায়ে মাখিয়ে রাখে ভুলে যাওয়া ইতিহাস ও স্মৃতিদের. গঞ্জে বেড়াতে আসা ক্রাইম রিপোর্টার তনয়া হঠাৎই সম্পৃক্ত হয়ে যায় এই ইতিহাসের সঙ্গে. গঞ্জের ডেভিড ব্রাউনের বাড়ী থেকে অতীতে হারিয়ে গিয়েছিল এক শিশু. ক্রিস. ক্রিসের অন্তর্ধান রহস্যের মাঝেই সামনে এসে দাঁড়ায় আরো এক চরিত্রের কাহিনী - যাকে এই গঞ্জ ভুলে গেছে অথবা ভুলে যেতে চেয়েছে. সে হলো অ্যাগনেস ও'ব্রায়েন. অন্তর্ধান হয়েছিল সেও ক্রিস কাহিনীর পাঁচ বছর আগে. কিন্তু স্মৃতির আনুগত্যে লুকিয়ে থাকা বিস্ময় আর প্রশ্নেরা সব সময়ই শক্তিশালী. তাই, অ্যাগনেস মুছে গিয়েও গ...

নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২।। প্রবাসে দুর্দৈবের বশে : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়।। অনন্ত জানা

Image
বঙ্কিমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রা-সংক্রান্ত একটি বইয়ের আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন :    ‘কিছুদিন হইল বাঙ্গালার যাত্রা নামে একখানি ক্ষুদ্র গ্রন্থ আমরা পাইয়াছিলাম। গ্রন্থখানি বিলাতে বসিয়া বিলাতি ভাষায় লিখিত হয় এবং বিলাতেই তাহা মুদ্রিত হইয়াছে। মূল্য দুই সিলিং। লেখক বাঙ্গালি আমাদের সুপ্রসিদ্ধ নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়। আমরা সেজন্য বিশেষ আহ্লাদ পূর্ব্বক ইহা পাঠ করিয়াছি।’ (যাত্রার ইতিবৃত্ত :১২৮৯) বাংলার যাত্রা-বিষয়ে এই ধরনের গ্রন্থ আলোচনার সম্পূর্ণ অধিকার সঞ্জীবচন্দ্রের ছিল। কেননা ইতোপূর্বেই তিনি বঙ্গদর্শন ও ভ্রমর পত্রিকার পাতায় বাংলার যাত্রা নিয়ে তিনখানি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধগুলি নিয়ে তাঁর ‘যাত্রা সমালোচনা’ (১৮৭৫) নামে একটি  গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। সে-নিয়ে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আমরা বিস্তারিত হতেই পারি। কিন্তু  গ্রন্থ-সমালোচনামূলক এই রচনায়  সঞ্জীবচন্দ্র আলোচ্য গ্রন্থটি নিয়ে ‘ইদানিং ঢাকা অঞ্চলে ‘স্বপ্নবিলাস’ প্রভৃতি তিনখানি যাত্রা রচিত হয়েছে। তথাকার বিস্তর লোক এই যাত্রার পক্ষপাতী। নিশিকান্তবাবু সেই যাত্রা উপলক্ষ করিয়া এই  গ্রন্থ লিখিয়াছেন’–ইত্যা...

নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২।। সার্কাসের ইতিকথা।। বরুণদেব।।

Image
১৮৭৯ সালে চিয়ারিনির রয়‍্যাল ইটালিয়ান সার্কাসের তাঁবু পড়ল বোম্বের বোরিবন্দর রেলস্টেশনের কাছে ক্রস ময়দানে। এই বোরিবন্দর রেলস্টেশন থেকেই ছাব্বিশ বছর আগে ভারতীয় রেল শুরু করেছিল তার যাত্রা। ১২ই ডিসেম্বর, ১৮৭৯-তে চিয়ারিনির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন বোম্বে প্রদেশের গভর্নর রিচার্ড টেম্পল। এর কয়েকদিন পর ক্রিসমাসের রাতে দর্শকপূর্ণ তাঁবুতে চিয়ারিনি ছুঁড়ে দিলেন চ্যালেঞ্জ— আমি জানি, ভারতে কোনো সার্কাস দল নেই। আরও অনেক বছর ভারতকে অপেক্ষা করতে হবে নিজেদের সার্কাসের জন্য। চ্যালেঞ্জ করছি, যদি কেউ আমার মতো ঘোড়ার খেলা দেখাতে পারে, তাকে আমি ভারতীয় মুদ্রায় এক হাজার টাকা দেব। সেই সঙ্গে আমার প্রশিক্ষিত ঘোড়াগুলোর মধ্যে যে কোনো একটা ঘোড়া দিয়ে দেব। ছ'মাস সময় দিচ্ছি। আছেন কেউ? কেউ আছেন? থাকলে এগিয়ে আসুন। এই বিস্ময়কর ইউরোপীয় শিল্পের সম্মোহন প্রত্যক্ষ করতে সার্কাসের তাঁবুতে সে সন্ধ্যায় হাজির দেশীয় রাজারা, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দর্শকাসনে সপারিষদ উপস্থিত মহারাষ্ট্রের কুরুন্দওয়াদ প্রদেশের রাজা বালাসাহেব। আর ছিলেন অশ্বারোহী বিষ্ণুপন্থ মোরেশ্বর ছত্রে, কুরুন্দওয়াদ রাজপ্রাসাদের আস্তাবলের সুপারিনটেনডেন্ট। ইস্ট ইণ...

নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২।। সীমান্ত রেখা।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ

Image
চারপাশে অন্ধকারটা ঝাঁপিয়ে নেমেছে। এমন অন্ধকারের একটা গন্ধ আছে, যেন ভেজা ভেজা ঝোপঝাড়ের গন্ধ। কানু শুধু গন্ধটা পায়। সারা রাস্তাটায় এখন ইলেকট্রিক পোস্টে পোস্টে আলো লাগানো হয়েছে। কিন্তু অবনীদের বাড়ি পেরিয়ে চুলের কাঁটার মতো এই বাঁকানো মোড়ের কাছে দু তিনটে পোস্টের আলো কারা যেন ভেঙে দিয়ে যায় নিয়মিত। কানুর সাইকেলের আলোটা আবার খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিকষ অন্ধকারে ঢুকে পড়ে ভিজে ভিজে গন্ধটা ছ্যাঁত করে তার নাকে লাগে। বুকের ভিতরে একটা ঢিব ঢিব শব্দ শুনতে পায় সে। কানুর হাত-পায়ের পেশী শক্ত আর কঠিন হয়ে ওঠে। কোথা থেকে একটা অলৌকিক শক্তি যেন তার দেহের ভিতরে ভর করে। সাঁ সাঁ করে প্যাডেল ঘুরিয়ে সে অন্ধকারটা পেরিয়ে যায়। আরও প্রায় দু তিন কিলোমিটার তাকে সাইকেল চালিয়ে যেতে হবে। রাস্তাটা এবার ফাঁকা মাঠের মধ্যদিয়ে। চারপাশে বাড়ি ঘর নেই। দু পাশে লম্বা লম্বা গাছের সারি। আধুনিক নব্য সভ্যতা যেন এই পর্যন্ত এসে থেমে গিয়েছে। এর পর থেকে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে নিজেকে নিয়ে গড়েছে, ভেঙেছে আর মুচকি হেসে মানুষের যাবতীয় আধুনিক সভ্যতার হিসেব নিকেশকে ওলটপালট করে দিয়েছে। এই রাস্তাটা পার হতে কানুর বেশ ভয় ভয় করে। কিসের ভয় কানু ঠিক জানে না। ...

নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২।। উপন্যাস।।

Image
অন্ধকার নামে… হ্যারিকেনের আলোয় মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নাকি কোষ বিভাজন—কোনটা আগে পড়া দরকার সেই নিয়ে দোদুল্যমান নবা এলোমেলো একবার অমূল্যভূষণ, আরেকবার প্রভাতাংশু মাইতি খোলে। মন বসে না তার। বাইরে ভেসে আসে প্রতিবেশীদের বিবাদ, মসজিদ থেকে আজান, মাঠ থেকে ছেলেদের হুল্লোড়—সব মিলিয়ে তার মনে হয়, চারপাশে এত শব্দ থাকলেও নিজের ভিতরেই যেন সবচেয়ে বড় অন্ধকার। দীপেন স্যার বলেছিলেন—‘কাজেই কাজেই দেখতে পাচ্ছ, বস্তুটি যে অবস্থানেই থাকুক, মোট শক্তির যোগফল ধ্রুবক।’ কিন্তু নবার মনে হয়েছিল, মানুষের জীবনে কি সত্যিই শক্তির যোগফল ধ্রুবক থাকে? নাকি কোথাও না কোথাও প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয় হয়—আশা, স্বপ্ন আর ভালোবাসার ভেতর? উপন্যাস ........................ জলের কাছে কৌশিক ঘোষ ........................ প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী  অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত  নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২ মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা আসছে......

নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।। প্রবাসে দুর্দৈবের বশে : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ

Image
বঙ্কিমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রা-সংক্রান্ত একটি বইয়ের আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন :    ‘কিছুদিন হইল বাঙ্গালার যাত্রা নামে একখানি ক্ষুদ্র গ্রন্থ আমরা পাইয়াছিলাম। গ্রন্থখানি বিলাতে বসিয়া বিলাতি ভাষায় লিখিত হয় এবং বিলাতেই তাহা মুদ্রিত হইয়াছে। মূল্য দুই সিলিং। লেখক বাঙ্গালি আমাদের সুপ্রসিদ্ধ নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়। আমরা সেজন্য বিশেষ আহ্লাদ পূর্ব্বক ইহা পাঠ করিয়াছি।’ (যাত্রার ইতিবৃত্ত :১২৮৯) বাংলার যাত্রা-বিষয়ে এই ধরনের গ্রন্থ আলোচনার সম্পূর্ণ অধিকার সঞ্জীবচন্দ্রের ছিল। কেননা ইতোপূর্বেই তিনি বঙ্গদর্শন ও ভ্রমর পত্রিকার পাতায় বাংলার যাত্রা নিয়ে তিনখানি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধগুলি নিয়ে তাঁর ‘যাত্রা সমালোচনা’ (১৮৭৫) নামে একটি  গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। সে-নিয়ে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আমরা বিস্তারিত হতেই পারি। কিন্তু  গ্রন্থ-সমালোচনামূলক এই রচনায়  সঞ্জীবচন্দ্র আলোচ্য গ্রন্থটি নিয়ে ‘ইদানিং ঢাকা অঞ্চলে ‘স্বপ্নবিলাস’ প্রভৃতি তিনখানি যাত্রা রচিত হয়েছে। তথাকার বিস্তর লোক এই যাত্রার পক্ষপাতী। নিশিকান্তবাবু সেই যাত্রা উপলক্ষ করিয়া এই  গ্রন্থ লিখিয়াছেন’–ইত্যা...