বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর উপন্যাস ' বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য ' পড়ে লিখেছেন দীপ মাহান্তী । আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
.................................
উফ্! উফ্! উফ্!
কী পড়লাম! কী পড়লাম!
বহুকাল হলো এইরকম লেখা আমি পড়িনি।
শেষ এইরকম উপন্যাস পড়েছি মণিশংকর দাদার “কালু ডোমের উপাখ্যান”। আর আজকে পড়ে শেষ করলাম “ বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য”
___________________________________
বহুদিন ধরে এই বইটি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওই যে যখন আমি লিখি তখন কারো বই পড়িনা। আর আমার লেখালেখি চলছিল ছয়মাস ধরে। লেখা শেষ হতেই শুরু করলাম একটার পর একটা উপন্যাস পড়া এবং তারপর শুরু করি “বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য”
____________________________________
গায়ে জ্বর,গলা বসে আছে গত চারদিন। কথা অবধি বলতে সমস্যা হচ্ছে, তবুও আমি রাত জেগে পড়ে চলেছি “ভীষ্ম বাগাল” কে। হ্যাঁ ভীষ্ম বাগালই খুন করেছিল “বীরেশ্বর সামন্ত” কে। কিন্তু কেন করেছিল খুন? কেন এক অন্ধকার বৃষ্টিস্নাত রাত্রে গলায় দড়ি দিয়ে টেঙে দিয়েছিল “বীরেশ্বর সামন্ত” কে ভীষ্ম বাগালের শাখাপ্রশাখা ?
কে ছিল এই “বীরেশ্বর সামন্ত”?
এখানে কে খুন করেছে? কখন খুন করেছে? সেটা বড় প্রশ্ন নয়। কারণ গল্পের চরিত্রের সাথে সাথে পাঠকেরাও বুঝে গিয়েছিল যে বীরেশ্বর সামন্তকে একদিন মরতে হবে। খুন হতে হবে। বইয়ের মলাটে অবধি লেখা আছে সেই খুনির নাম। কিন্তু কেন? এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন এই উপন্যাসের । যার উত্তর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ২৩৩ পাতার প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে।
_____________________________________
তবুও শেষমেষ প্রশ্ন থেকে যায় সত্যি কি “ভীষ্ম বাগাল” খুন করেছিল “বীরেশ্বর সামন্ত” কে? ঠিক এই ভাবনাটাই এবং এর উত্তর পড়তে পড়তে গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে। কেমন যেন একটা শিরশিরানি ভাব অনুভব করি মনের আনাচে কানাচে।
তবুও শেষমেষ প্রশ্ন থেকে যায় কী লাভ হলো “বীরেশ্বর সামন্ত” কে হত্যা করে?
_____________________________________
এই উপন্যাস কোনো রহস্য উপন্যাস নয়। তবুও আপনি নিজের মনের ভেতর বারবার প্রশ্ন করবেন কেন? কেন? কেন? যখন মনে হবে আপনি ঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন ঠিক তখুনি প্রমাণিত হবে আসলে আপনি ভুল।
এই উপন্যাস কোনো থ্রিলার উপন্যাস নয়। তবুও প্রতিটি পাতা পড়তে পড়তে আপনার মনে শিহরণ জাগা দেবে।
এই উপন্যাস কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বোনা উপন্যাস নয় কিন্তু তবুও প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে রাজনীতির গন্ধ বেরোবে।
এই উপন্যাস কোনো সামাজিক উপন্যাস নয় কিন্তু আপনার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে আপনি কোন সমাজের কোন ক্লাসে বাস করেন আর আপনার চিন্তাভাবনা, আপনার মুখে ছেটাবে একদলা থুতু। সেসব ভেবে আপনার গা ঘিন ঘিন করে উঠতেই পারে।
গা ঘিন ঘিন করে উঠতে পারে এই বইয়ের ভাষা দেখে। এই বই পড়তে পড়তে মনে হবে সমরেশ বসু “প্রজাপতি” “বিবর” এ অনেক শুদ্ধ বাংলা লিখেছেন। কিন্তু যা সত্যি তাহা শাশ্বত। তাই এই বইয়ের ব্যবহৃত সব ভাষা অতন্ত্য প্রয়োজনীয়। যা সবকিছু থেকে পৃথক করে দেয় শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের লেখনশৈলীকে।
_____________________________________
এই বই পড়তে গেলে সবার আগে প্রাপ্তমনস্ক হওয়া সবথেকে বেশি প্রয়োজন। নাহলে কখনো কখনো ঘা ঘিনঘিন করে উঠতে পারে। বমি পেতে পারে। ভাবনাচিন্তায় অস্থির করে আপনার ঘুম কেড়ে নিতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই বই ভূতের নয়।
আসলে এই বই ভূতের। যে ভূত ইতিহাস হয়ে মানুষের সামনে বর্ণিত হয় সবসময়। আর মানুষ কানে ঠুলি ঠুকে গদগদ করে মুখস্ত করে বমি করে দেয় পরীক্ষার খাতায়।
আসলে এই বই ভূতের এবং ভবিষ্যতের। যা এক ইনফিটির সংকেতের রুপ ধরেছে। যা চলেছে ক্রমাগত একটা লুপে। এই লুপে আছি আমি,আপনি এবং আমরা। বেরোনোর পথ নেই।
বেরোনোর একটাই পথ বিপ্লব।
__________________________________
মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০.০০ টাকা
প্রকাশক : সুপ্রকাশ
পাতা সংখ্যা :২৩৩
হার্ডকভার বাইন্ডিং
_________________________________
এইরকম রিভিউ লেখলাম কেন? অ্যায়সে হি,সেক্সি লাগা।
ডায়লগটা “গ্যাংগস অফ ওয়াশিপুর” সিনেমার। কিন্তু বইয়ের পাতা একজায়গায় তুলে ধরা হয়েছে
“তারাই বা কেন সব জেনেও আগে থেকে পুলিশকে জানায়নি,সেটা তাদের জিজ্ঞাসা করলে হয়ত মাথা নেড়ে ফ্যালফ্যালে হাসত। বেঁড়েপাকা ছেলেছোকরাদের দলকে জিজ্ঞাসা করলে বিলিতি কায়দায় কাঁধ ঝাঁকিয়ে অ্যায়সে হি,সেক্সি লাগা বলত না যে,তেমনটাও জোর দিয়ে বলা যাবে না।”
_____________________________________
ধন্যবাদ
Comments
Post a Comment