বাঘাচাঁদের কথাকাব্য।। অনিল ঘোষ।। সুপ্রকাশ।।
'রণসাজে সজ্জিত হয়ে চলল বাঘাচাঁদ শিবতলি অভিমুখে। পিছুপিছু তার সঙ্গীসাথী, গাঁ-গঞ্জ ভেঙে আসা অসংখ্য মানুষজন। রণধ্বনি সকলের মুখে। হাতে অস্ত্রের ঝনঝনা।—
শিবতলি গাঁয়ে বাঘা আসিয়া পৌঁছিল
হাত তুলিয়া যুদ্ধের নিয়ম শিখাইল।
রক্ত না ঝরাইবে না কাটিবে মাথা
বশ করিবে ভয় দিয়া তারপরে কথা।
বলব কী ভাই, শিবতলির ভিন ধরমের, ভিন জেতের মানুষজন, যাদের চেহারা নাকি দানবের মতন, নিষ্ঠুর বলে নাম কিনেছে ইতিমধ্যে, যারা কথা নেই বার্তা নেই গরিবগুর্বো মানুষের জমিন কেড়েছে, ঘর থেকে বেঘর করেছে— হ্যাঁ বাবা, তারাই বাঘাচাঁদের হাঁক শুনে আর সঙ্গীসাথীর যুদ্ধ উন্মাদনা দেখে হয়ে গেল একেবারে ইঁদুরের পারা। মুখ-বুক শুকিয়ে আমসি। আরে বাবা, এটা তো মানতেই হবে, ওরাও হাত পা-ওয়ালা গরিবগুর্বো মানুষ। ওরাও এই বাদায় এসেছে বাঁচতে। আর বাঁচার টানেই লড়াই। বাঁচার টানেই শিকড় গেড়ে বসার চেষ্টা। তবে এও সত্যি, ওরা বাদার নিয়ম জানে না। তাই ভাইচারায় দাগ বসিয়েছে। এজন্য শাস্তি ওদের প্রাপ্য।
সঙ্গীসাথীর এমন হুংকারে ওরা হাতে অস্ত্র নয়, সোজা হাত তুলে আত্মসমর্পণ।—
বাঘাচাঁদের পায়ে ওরা লুটিয়া পড়িল
একে একে আসিয়া দোষ মানিল।
হাত ধরিয়া বাঘা বলে, শোনো ভাই
বাদার দেশে দুর্জনের নাই ঠাঁই।
বাঘাচাঁদের কথা কী বুঝল কে জানে, সবাই মিলে জোর গলায় বলল, কার এঁজ্ঞে? বাঘাচাঁদের এঁজ্ঞে—।
বাঘাচাঁদ বলল, ওভাবে বলিলে কিছুটি হবে নাকো। বাদার দেশে আইছ য্যাখুন, বাদার নিয়মকানুন মানিতে হবে।
ওরা বলল, মানিব।
—বাদার মানুষ তোমগা ভাই।
—মানিব।
—এখানে কুনো জাত নাই, ধরম নাই।
—মানিব হে রাজা, মানিব।
—এ বাদা সকলার। যাও হে বাদার পুরুষ জঙ্গল হাসিল করো, জমিন তোলো, ফসল ফলাও। বিপদ এলে আমারে শরণ করো।
—তাই হবে হে দ্যাওতা। বলো ভাই সবাই মিলে, কার এঁজ্ঞে? বাঘাচাঁদের এঁজ্ঞে—।
বাঘাচাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে ওরা চলে যায় গাঙ পার হয়ে, গভীর গহন বাদাবনে। সেখানে ওরা জঙ্গল হাসিল করবে, জমিন তুলবে, ফসল ফলাবে। ওদেরও পরিচয় হবে আবাদে।'
.............................................
বাঘাচাঁদের কথাকাব্য
অনিল ঘোষ
.............................................
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
মুদ্রিত মূল্য : ২৮০ টাকা
সুপ্রকাশ প্রকাশিতব্য। আসছে কলকাতা বইমেলায়।
স্টল : ৪৯৯
Comments
Post a Comment