প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।
ভিক্ষুদল আহতদের চিকিৎসার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করলেন।
সারবানবিহারের বৈদ্যকাচার্য মহাভিক্ষু প্রবোধাশিস এবং তাঁর শিষ্য মহাঅনিন্দ্যর চিকিৎসাবিদ্যার প্রয়োগ দেখে তাঁরা যতটুকু শিখেছিলেন সেটুকু আজ কাজে লাগলো।
ইতোমধ্যেই আহতদের পূর্বপল্লীর অন্তরাপনে নিয়ে আসা হয়েছে।
অধিকাংশেরই অগ্নিক্ষত। পলায়ন করতে গিয়েও অনেকে আহত হয়েছে, অনেকেই হস্ত-পদে আঘাতপ্রাপ্ত, বহুজনের দেহে যষ্ট্যাঘাতের চিহ্ন! অর্থাৎ আক্রমণকারীরা যষ্টিদ্বারাও আঘাত করেছে।
প্রিয়ঙ্কর সৌভাগ্যক্রমে অন্তরাপনের নিকটেই ঘৃতকুমারীর একটা বিস্তৃত গুম্ব পেয়ে গেলেন। ঘৃতকুমারীর রস দগ্ধক্ষতের মহৌষধ। পিপল তরুর খোঁজে গেলেন ভিক্ষু বুদ্ধশাসন। পিপলের বক্কলে ঘৃত মাখিয়ে দগ্ধ ত্বকে লাগালে আরাম পাওয়া যায়। দীপ্তঙ্কর ও অভয়ঙ্কর ধর্মাঙ্কুরকে নিয়ে অন্তরাপনের দোকানিদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে ঘৃত, নালিকের তৈল এবং তিল তৈল সংগ্রহ করে আনলেন। এই তিন তৈলাক্ত পদার্থই দন্ধিল ক্ষতের জ্বালা উপশমে খুবই কার্যকর।
দেখা গেল পূর্বেই আহতদের সেবায় ভিক্ষুণীসঙ্ঘের সেবিকারা আত্মনিয়োগ করেছেন। বধূ নম্রতাও আছেন। প্রিয়ঙ্কর তাঁদের গৃহস্থ বাড়ি থেকে চন্দন ও হরিদ্রাচূর্ণ সংগ্রহ করে আনার জন্য অনুরোধ করলেন। সকলবস্তু সংগৃহীত হবার পর ভিক্ষু করুণাকেতন, ভিক্ষুণী নম্রতা ও অপরাপর ভিক্ষুণীদের সহায়তায় প্রিয়ঙ্কর দ্রুত অগ্নিদগ্ধ মানুষগুলির ক্ষতজ্বালার উপশম ঘটালেন। রক্তপাত বন্ধের জন্যও হরিদ্রাচূর্ণ এবং গৃহবতিকার থেকে ঢোলকলমির পত্ররস প্রয়োগ করা হলো। সকলকর্মেই আদিত, দৈশিন এবং তার রক্ষীদল সহায়তা করছিল।
প্রায় এক প্রহরকাল পরে, অতিক্রান্ত-মধ্যযামে যখন ভিক্ষুদল এবং তাঁদের সহযোগীরা ফিরে এলেন বিরামোদ্যানে তখনও তাঁরা দেহে কোনোপ্রকার ক্লান্তি অনুভব করলেন না।
ভিক্ষুণীসঙ্ঘের প্রধানা প্রজ্ঞাবিদীপ্তা এবং ভিক্ষুণী নম্রতার সঙ্গে আলাপিত হয়ে তাঁরা দেখলেন যে, এই দুই সেবিকাই অত্যন্ত অগ্রমনা। পাঠ, মার্গানুশীলন, বুদ্ধবাণীর সেবাব্রতে নিবেদিতপ্রাণা। উদয়নগরীতে ঘটে-চলা অনভিপ্রেত ঘটনাবলীর জন্য নির্বোধ ও নেশাবিবশ স্বামী কুমার বৃতিধর্মার সূত্রে তাঁরও যে দায় বর্তায়—এই কথা মনে করে নম্রতার আত্ম-আক্ষেপের সুরটিও বুঝতে পারলেন ভিক্ষুরা।
বিরামোদ্যানে ফিরে এসেও এই রাত্রে আর শয়নের সময় ছিল না।
তবু শরীরের দাবিকে তো কোথাও এড়ানো যায় না। তাই মাত্র কয়েক দণ্ডের জন্য হলেও তাঁরা শয়ন পর্যবেক্ষণ গ্রহণ করলেন।
বিরামোদ্যানের তরুতলে শয়ন করে নক্ষত্রবিরল আকাশের দিকে চোখ মেলে আদিতের সহসা উত্তরার কথাই মনে হলো! এটা নিশ্চিত যে, সেই মধ্যপ্রভাতে পলাণ্ডুসহযোগে দুটি উদকায়িত তণ্ডুল ভক্ষণ করে গৃহ হতে বহির্গত হওয়ার পর উত্তরা নিশ্চয়ই নিরাহারে শুধুমাত্র তার কথাই ভেবে গেছে, নগরীতে অশান্তি ও প্রাণহানির সংবাদে নিশ্চয়ই কেঁপে উঠেছে বারে বারে, সে গৃহে না-ফেরায় নিশ্চয়ই নীলনয়না উত্তরার অশ্রুসজল প্রতিটি পল কেটেছে নির্ঘুম প্রতীক্ষায়!
হায় রে! আদিতের চোখেও জল দেখা দিল নাকি!
সে স্থির করল—আর নয়, উত্তরার প্রতি অন্যমনস্ক ঔদাসীন্য আর নয়!
উত্তরাকে সে ভালোবাসে!
...........................................................
প্রতিযাত্রা
দুর্লভ সূত্রধর
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০ টাকা
সুপ্রকাশ
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিতব্য
স্টল : ৪৯৯
Comments
Post a Comment