বাঘাচাঁদের কথাকাব্য।। অনিল ঘোষ।। সুপ্রকাশ।।
'বিদ্যা নদী বিশাল নদী। তার বুকভরা জল, পাড়ভরা জঙ্গল। আকাশে চাঁদ বাঁকা, সাত তারার শরীর বাঁকা, পিঠে বাতাসের চলন বাঁকা। সবাই মিলে যেন বলে, কই যাও হে! বিদ্যা নদীর পাড়ে বসে এইসব সাত-পাঁচ ভাবে বাঘাচাঁদ। ভাবে আর চোখ মেলতে চোখে পড়ে নদীর বুক বেয়ে ভেসে চলেছে ছোট্ট একখানি নাও। ছোট্ট হলেও সুন্দর করে সাজানো। পাতাপুতা আর ফুলে ফুলে ঘেরা। আর তার পাটাতন আলো করে বসে আছে পরমা সুন্দরী এক রমণী। তার মেঘবরণ চুলের রাশি উড়ছে মিষ্টি মধুর বাতাসে। বিশাল বিদ্যার সবুজ বুক ওই রমণীর রূপের ছটায় যেন ঝলমল করছে। আর রূপসীর রূপ পূর্ণতা পেয়েছে ওর হাতে ধরা ধবধবে সাদা বক পাখি।
বাঘাচাঁদের চোখ স্থির। বুকের ওঠানামা স্তব্ধ। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাথরের মতো অনড়। কে ওই নারী, যার অমন রূপ বাদার দেশকে আলোকিত করে দিচ্ছে! অবশেষে চোখে চোখ পড়ে দুই মানুষের। পুরুষ আর নারীর। দুজনের দৃষ্টি স্থির। বিস্ময়ে শিহরিত। বাঘাচাঁদের চোখের পলক পড়ে না। মুখের ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছে। বাদাও যেন গভীর বিস্ময়ে দেখছে দুজনকে।
ধীরে ধীরে বাঘাচাঁদ নিজের মধ্যে ফিরতে পারে। মুখের ভাষাও ফিরে পায়। হাসি হয়ে তা ফুটে ওঠে। তখন তাদের মধ্যে কথা হয়। সেকথা এরকম—
বাঘাচাঁদ: কোন বা দেশের কন্যা তুমি
কোন বা দেশে যাও।
তুমি ওগো রূপের নদী
বারেক ফিরা চাও।
কন্যা: শালিডাঙার কন্যা আমি
নাম বলিতে নাই।
কে গো তুমি বীরপুরুষ
তোমায় জানিতে চাই।
বাঘাচাঁদ: বাঘাচাঁদ নাম আমার
বাদার দেশে বাস।
তোমায় যদি পাই কন্যে
হইব ক্রীতদাস।
কন্যা: মা-বাপেরে কইও
বাঘা শালিডাঙায় গিয়া।
বিহার কথা পাড়ো সেথায়
সাতশো টাকা দিয়া।
চলে যায় কন্যে। যায় দখিন দেশে। আর বাঘাচাঁদের বুকের কথা, মুখের ভাষা, মনের ইচ্ছা, কামনা-বাসনা সব যেন এক লহমায় শুষে নিয়ে যায়। সবকিছুই তার অসার লাগে। সেই বিদ্যা নদীর পাড়ে একা বাঘাচাঁদ পা দাপায়। বুকে চাপড় মারে ঘন ঘন। বিশাল বুকের গহ্বর ছিঁড়েখুঁড়ে উড়ে আসে গভীর দীর্ঘশ্বাস। ঝড় নয়, কিন্তু ঝড়ের মতো। সেই শব্দে বাদাবন যেন হু হু করে কেঁদে ওঠে। নোনা নদীর ঢেউ উথাল পাথাল হয়ে যায়। যারা ছিল কাছাকাছি, আশেপাশে, তারা সবাই চমকে ওঠে। কে এমনধারা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে! খোঁজ খোঁজ। বোঝা গেল, এ বাবা যে-সে মানুষের দীর্ঘশ্বাস নয়। এ নিশ্চয়ই বাঘাচাঁদ।'
.................................
বাঘাচাঁদের কথাকাব্য
অনিল ঘোষ
.................................
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
মুদ্রিত মূল্য : ২৮০ টাকা
সুপ্রকাশ প্রকাশিতব্য। আসছে কলকাতা বইমেলায়।
স্টল : ৪৯৯
Comments
Post a Comment