কীর্তনীয়া।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত সমরেন্দ্র মণ্ডলের উপন্যাস 'কীর্তনীয়া' পড়ে লিখেছেন সোমদত্তা রায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
................................

তিনদিনের ছুটিতে গোটা পৃথিবীর মানুষ(?!) যখন কোথাও না কোথাও ঘুরতে গেছে, সেই অবস্থায় গৃহবন্দি আমি এই বইটা পড়া শুরু করলাম। জাস্ট পড়া শেষ করে এটাই মনে হল ভাগ্যিস!!
এই বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া কিভাবে লিখব বুঝতে না পারা আমি এটাও বুঝলাম যে কিছু না লেখাটাও ধৃষ্টতা। যারা পড়তে ভালোবাসেন তারা এই বইটা পড়ুন আমি মন থেকে চাই। বৃষ্টির দিনে এই বই পড়তে পড়তে যেন আশেপাশের থেকেও ভেসে আসছে কীর্তন গানের সুর, সোঁদা গন্ধ। এক সাধারণ বাড়ির ছেলের জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার পথই এই বইয়ের সারমর্ম। সঙ্গীতের ব্যাপ্তি যে কতখানি এবং সেই সঙ্গীতের সাথে যাপন করা মানুষের জীবন যাপনও যে কি অদ্ভুত সেটা টের পেলাম এই বই পড়ে। খ্রিষ্টান পরিবারের ছেলে রাফায়েল। তাকে ঘিরেই এই গল্প। বাবার কীর্তন দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে বের করে নিয়ে যায় বাড়ির থেকে সঙ্গীত সাধনার উদ্দেশ্যে, শেখার উদ্দেশ্যে। সত্যিই তো এভাবে শিখতেই বা ক'জন চায় বা পারে?! বাড়িতে অসুস্থ মা, বাবা আর ভাইকে ছেড়ে রাফায়েল আচমকাই এসে পৌঁছায় বোষ্টম সঙ্গীতের এক ব্যক্তিত্ব সুরেন গোঁসাই এর বাড়িতে। সেখানে এসে সে একে একে পরিচিত হয় বাংলার হিন্দু কীর্তন থেকে বাংলা লোকগান সাথে তাদের যাপনের সঙ্গে। এরপর ঘটনাচক্রে সে গিয়ে ওঠে আরেক ভেকধারী বোষ্টুমী তুলসী দাসীর কাছে। সেখানেও শেখে নানারকম পালাগান সাথে তাদের জীবনযাপন। তবু তার খোঁজা আর শেখার শেষ হয়না। সে ফিরে আসে আবার তার বাড়িতে। ততদিনে তার মা আর নেই। আছেন অথর্ব বাবা আর ভাই। সেই ভাইও একদিন সবার অমতে বিয়ে করে ঘরে তোলে রেবেকা কে। যে রেবেকা কোনও এক সময়ে খ্রিষ্টান কীর্তন গাইতেন আর রাফায়েল যাকে না চেয়েও চেয়েছিল যেন। অদ্ভুত সব মনস্তাত্বিক ঘটনার ঘনঘটা গোটা গল্প জুড়ে। সবকিছুকে ছাপিয়ে রাফায়েলের লক্ষ্য একটাই বাবার গানের দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সে পথে অনেক দূর এগিয়েও যায় যেন। এই বই না পড়লে জানতেই পারতামনা খ্রিষ্টান কীর্তন বা যীশুর গানের দল থাকতে পারে। জানতামনা সেখানেও দলের নানান ধরনের মানুষের কথা। কর্তাভজা থেকে শুরু করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সহজিয়া ভাব যে কি সেসব থেকে অজ্ঞই থাকতাম হয়তো বা। পুরো বই জুড়েই আছে গ্রামের মেঠো পথের নানান গল্প। এর মাঝেই ঘটনা আবর্তিত হতে থাকে নরু বিশ্বাস মানে রাফায়েলের বাবার সংসার ঘিরে। একে একে বাবার মৃত্যু, ভাইয়ের আলাদা হয়ে যাওয়া, একই বাড়িতে ভাগাভাগি থেকে শুরু করে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ, আচমকাই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত কিছু ঘটনা যা নাড়া দিয়ে যায়। শেষ বেলায় এসে তুলসী দাসীর সাথে আবার ক্ষণিক মোলাকাত যে কি অদ্ভুতভাবে দাগ কেটে যায়। রেবেকা আর তার মেয়ে রুমকির দায় কিভাবে কে এসে বর্তায় রাফায়েলের ওপর সেসব দিয়েই চলতে থাকে ঘটনাপ্রবাহ। দলের ভার বা পরম্পরা কে বয়ে নিয়ে যাবে এই ভাবনায় যখন রাফায়েল চিন্তিত ঠিক তখনই প্রভু যীশু যেন নিজেই তার সমাধান করে দেন। দিনের শেষে আবার মনে হয় সত্যিই তো এটাই সত্য "what you seek is seeking you"

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।