জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

"সমুদ্রের তলদেশ ।

নীল স্বচ্ছ পানির মধ্যে লাল পাথরের চাঁই ঘিরে কিছু ছোটো ছোটো দোতলা বাড়ি । অন্য বাড়িগুলোর থেকে আকৃতিতে বড়ো একতলা একটা বাড়িতে ঝিনুকের দীর্ঘ লাইন। প্রত্যেকের হাতেই মুক্তো। কারোটা ছোটো কারোটা বড়ো। কারোটা সাদাটে গোলাপি, কোনোটা আবার লালচে। একদিকের দীর্ঘ লাইনে মুক্তো জমা দিয়ে ঝিনুকেরা চলে যাচ্ছে। পাশেই হিসেব রাখছে একজন ব্যাংকার। কোন মুক্তো ঝিনুক জমা দিচ্ছে। আর অন্যপাশের লাইনে সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণী, কেউ চিংড়ি, কেউ শামুক, কেউবা চিতল মাছ। অক্টোপাসও আছে। তারা সামুদ্রিক মুদ্রা নিয়ে সে মুক্তোগুলো কিনতে এসেছে। ঝিনুকের এই ব্যাংক মূলত মুক্তোর বাজারে পরিণত হয়েছে। সমস্ত সমুদ্রে মুক্তোর সরবরাহ এখন এই ব্যাংক করে। এইসব মুক্তোর প্রচুর চাহিদা । ফলে ঝিনুকের এখন রমরমা অবস্থা। যে ঝিনুক যত বেশি মুক্তো উৎপাদন করতে পারে সে ঝিনুকের তত বেশি দাম, তত বেশি সম্মান।

ব্যাঙ্ক থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবতে ভাবতে উদাস হয়ে পড়ে জাফি। এমনিতে অবশ্য জাফি উদাস কমই হয়। সে অরুণোদয়ের তরুণ ঝিনুক। সারাদিন হল্লা করতে করতে তার সময় কাটে। এই সে ঝিনুকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাচ্ছে, তো এই বাইমমাছের ডিমের সাথে খেলা করছে। এই সে একঝাঁক তারা মাছের সাথে লাফাতে লাফাতে চলে যাচ্ছে একেবারে অন্ধকার সমুদ্রের গহীনে। সারাক্ষণ ছটফটের মধ্যে তার থাকা। এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না। তবে শুধুমাত্র, মুক্তো দেখলেই তার শ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। মনটা হঠাৎই খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মাকে মনে আসে। অথচ বাবা-মায়ের মুখ ঠিকঠাক মনে আসে না তার। সেই ছোটোতে দেখেছিল..... 

তারপর...

তারপর কোনো এক কুৎসিত দিনে তার বাবা-মাকে আরো অনেক ঝিনুকের সাথে ধরে নিয়ে যায় দুপেয়ে মানুষেরা। মানুষের মতো হিংস্র, লোভী, পরশ্রীকাতর প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। এরা নিজেরা মুক্তো উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু মুক্তো খুব পছন্দ করে। ফলে মুক্তোর চাহিদা মেটাতে ঝিনুক ধরে নিয়ে যায়। মুক্তো সংগ্রহ করে ঝিনুকগুলোকে মেরে ফেলে। কী নৃশংস!

জাফি এত কথা ভাবতে পারে না, কিন্তু কথাগুলো বলেছিলেন মহামান্য সোমু। মহামান্য সোমু প্রাচীন শামুক। তার বয়স কত কেউ বলতে পারে না। এলাকার সবচেয়ে বৃদ্ধ শামুকটি বা ঝিনুকটি পর্যন্ত বলে সেও মহামান্য সোমুকে বৃদ্ধ অবস্থায় দেখেছে। তো মহামান্য সোমুর দীর্ঘ চুল-দাড়ি-গোঁফ। গোঁফদাড়ির ভেতর তার ঠোঁট দেখা যায় না। যখন কথা বলেন মনে হয় দাড়িগোঁফের জঙ্গলের মধ্যে কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে শব্দ করছে।" 




জাফির অ্যাডভেঞ্চার 
আহমেদ খান হীরক

প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০ টাকা

#সুপ্রকাশ


Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।