বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

"রাঙা পথের ধুলো ওড়ে। কালো পিচ রাস্তা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে কাঁকড় বিছানো রাঙাপথ। এগিয়ে চলেছি উদ্দেশ্যহীন। সঙ্গী সদ্য কলেজ-উত্তীর্ণ স্থানীয় দুই যুবক। ওরা এখন আমার বন্ধু। আমি তো ভিন জেলার মানুষ। এখানে এসে গেঁড়ে বসার চেষ্টা করছি। পরিত্যক্ত চিনির কারখানা সরকারি বদান্যতায় নতুন করে সেজেগুজে আবার চালু হয়েছে। বাবার দৌলতে ওখানেই ছোটো একটা কাজ পেয়েছি। একটা ইস্টিশান আছে এখানে— আহমদপুর। লোকের মুখে আমোদপুর। বীরভূমের অখ্যাত জায়গাটা চিনির কলের সৌজন্যে এখন বেশ নাম করেছে। 
এই বীরভূমের রাঙা মাটিতেই তো নকশালবাড়ি আন্দোলনের বহু কাহিনি লেখা হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছে, সেইসব বিপ্লবের জায়গাগুলোকে ছুঁয়ে যাওয়া। তখনও বিপ্লবের গোপন আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে ইতিউতি। সময়টা তো সত্তরই। ক্ষমতায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সরকার। জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছে। মানুষের চোখে চোখে সন্দেহ। নতুন মানুষ দেখলেই প্রশ্ন, কোথাকার মানুষ বটে?
আমার শহর কৃষ্ণনগর থেকে দেবগ্রাম হয়ে ঘাট পেরিয়ে কাটোয়া। ওখানে ন্যারোগেজ, চলতি কথায় ছোটো ট্রেন ধরার অপেক্ষায় বড্ড টান ধরছে পেটে। ইস্টিশানের পাশেই এক ঝুপড়িতে ঢুকেছি চা খাব বলে। পাশে বসে অন্য এক অভুক্ত মানুষ। তার সামনে এসে পড়ল লাল ঝোল সমৃদ্ধ কয়েক টুকরো আলু। দোকানির বয়ানে ‘আলুর দম’। চোখ দুটো জুল জুল করে উঠল। ওই লাল ঝোল ডাকছে আমায়। বললাম— দাও এক প্লেট। 
একটা বাটিতে কালো উঁচু লম্বা টেবিলে যত্ন করে আলুর দম এল। দোকানির পরের প্রশ্ন, রুটি দেব?
— না। 
উদ্দেশ্য তো আলুর ঝোল দিয়ে জিভের ইচ্ছে পূরণ করা। ঝোলের মধ্যে চুবিয়ে দেওয়া চামচ দোকানির গায়ের আবলুস রঙের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার খেলায় মেতেছে। আলুর দম সামনে পড়তেই খিদে খিদে ব্যাপারটা অনুভূত হলো। চামচে করে চুমুক মুখে দিতেই টের পেলাম লবণ আর গুঁড়ো লঙ্কার সহাবস্থান। তবুও মনে হলো— আহ! কী স্বোয়াদ!"

লাল আলু ভাতে ডাকছে আয় আয়
সমরেন্দ্র মণ্ডল

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া
সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

#সুপ্রকাশ
সঙ্গের ছবিঃ শুভ্র দাস

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।