জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

"..আর ঠিক এ রকম সময়ে, হঠাৎই প্রচণ্ড এক শব্দ হলো। মনে হলো যেন বাজ পড়েছে। দানু জাফির বাহুলগ্না হয়ে ঘুরতে ঘুরতে প্রায় নেতিয়ে পড়েছিল। শব্দে সম্বিৎ ফিরল তার। বলল, শালা হাঙর...!

জাফি কিছুই বুঝল না। তবে সবাইকে তটস্থ মনে হলো খুব। যে যেভাবে পারছে জায়গাটা ছেড়ে পালাবার তাল করছে। ছুটছে ক্রমাগত।

আবার শব্দ।

এবার ধসে এলো একটা বড় পাথরের চাঁই। চাঁইটা গড়াতে গড়াতে এসে পড়ল বৃত্তের মাঝামাঝি জায়গাটিতে, একটু আগে যেখানে উদ্দাম নৃত্যরত ছিল দিলিয়া। এখন থাকলে পাথরচাপা পড়ে ঘিলু বেরিয়ে যেত নিশ্চিত।

জাফি কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি। আসলে পরিস্থিতিটা যে কী সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না। পাশ দিয়ে ব্রেকে ছুটে যেতে দেখল। ঘাড়ে গোঁত্তা লাগিয়ে, পানি কেটে ব্রের কাছাকাছি গিয়ে বলল, কী হয়েছে?

ব্রে তার ছোটার গতি বিন্দুমাত্র কমালো না। বলল, ভাগো.....

"কিন্তু কেন?"

“কেন? হাঙরদের হামলা! তুমি বুঝতে পারছ না... ব্যাটারা ক্ষেপে গেছে... গত বছরের দিকেও একবার এমনটা করেছিল... মাথানষ্ট হাঙর... সামনে যা পাবে গুঁড়িয়ে দেবে! ভাগো !' 

পাথরের আরেকটা চাই গড়িয়ে এলো। ব্রে তার ফাঁক গলে কোনদিকে হারিয়ে গেল কে জানে! জাফি তার সাথে ছুটে আর পেরে উঠল না।

প্রচুর ধুলো আর বালি মিলে জায়গাটা এখন অন্ধকার। তাছাড়া যে আলোগুলো জ্বলছিল তার বেশিরভাগই নিভে গেছে। কোনো কোনোটা ভেঙেই শেষ। শৈবালের গোড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে অন্ধের মতো।

আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না জাফি। সবাই সবার মতো ভেগেছে। সমুদ্রের পানিতে তীব্র তোলপাড় তুলে অবশেষে সামনে এলো এক হাঙর। জাফি, এর আগেও হাঙর দেখেছে, এমনকি খেলেছেও তাদের সাথে, কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর দর্শনের কাউকে আগে দেখেনি। জাফির অন্তরাত্মা দুইবার খাবি খেল। ঠিক বুঝল হার্টবিট থেমে গেছে একবার !

হাঙরটার নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস করে বাতাস-বুদ্বুদ বেরোচ্ছে। ভীষণ রাগান্বিত চোখ, লাল... মনে হচ্ছে মরিচ গোলানো। তবে সে চোখ দেখে মনে হলো উদভ্রান্ত।

ফুঁসে এলো হাঙরটা গোঁয়ারের মতো। পাগলের মতো হুঙ্কার করতে করতে। আর তখনই হঠাৎ এক ডুব দিল জাফি। পৌঁছে গেল একেবারে তলদেশে। নীচ থেকে হাওরটাকে আরো ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। বিশাল শরীরটা আলগোছে ঘুরিয়ে ফেলল সেটা। তারপর আরো একবার ভয়ানক চোখে তাকাল জাফির দিকে। কিন্তু জাফির মনে হচ্ছে হাঙরটা ঠিক তাকে দেখছে না, বরং তার পেছনের কিছু একটা দেখছে। জাফি ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘাড় ঘোরালো।...."


জাফির অ্যাডভেঞ্চার
আহমেদ খান হীরক

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্য : ১৮০ টাকা

#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

এক যে ছিল গ্রাম।। অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। সুপ্রকাশ।।

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।