জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।
"দু হাত-পা লাগিয়ে, বুক ঠেকিয়ে তার ঠেলে ঠেলে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে জাফি। একটু উঠছে ওপরে, আবার পরক্ষণেই পিছলে যাচ্ছে। পানিতে থেকে থেকে তারটাও অনেকটা পিচ্ছিল হয়ে গেছে।
পানি থেকে এবার বেশ খানিকটা ওপরে উঠে গেছে জাফি। বাতাস বইছে। রাতের অন্ধকার আছে, তবে আকাশে মৃত চাঁদ থাকার জন্য যথেষ্ট আলোও রয়েছে। তাতে আশপাশের কিছুদূর মোটামুটি স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।
বড়ো করে দম নেয় জাফি। নৌকার গলুই দেখতে পাচ্ছে সে। আর কিছুটা উঠলে বুঝতে পারবে এটাই কাঙ্ক্ষিত নৌকা কিনা । তবে হাত টনটন করছে তার। মাংসপেশী কাঁপছে। যে কোনো মুহূর্তে তার থেকে হাত পিছলে যেতে পারে। ফলে এখন তাকে অনেকখানি ভরসা করতে হচ্ছে পায়ের ওপর। পা দিয়েই সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করছে সে। ওপরের দিকে নিজের পুরো শরীরটা ঠেলে দিচ্ছে। তারপর শরীরটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুবই শ্লথ গতিতে ওপরের দিকে শক্তি দিয়ে যাচ্ছে। শরীর ঘোরাতে গিয়ে কয়েকবার খোলসের সাথে তারের সংঘর্ষও হয়েছে। প্রতিবার পিঠ বেদনায় ভরে উঠছে।
মাছের লোভে সমুদ্রে ঘুরতে থাকা একটা মাছরাঙা দূর থেকে দেখতে পেল জাফিকে। একটা ঝিনুক ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে, এ দৃশ্যটা ঠিক হজম হলো না তার। দূর থেকে তারটা সে দেখতে পাচ্ছে না। ফলে তার মনে হলো একটা ঝিনুক আসলে শূন্যে আকাশে উঠে যাচ্ছে। শৈশবে দাদিমার কাছে শোনা সমস্ত ভূতের গল্প তার মনে পড়ে গেল— মাথাটা একেবারে ঘুরে উঠল মাছরাঙাটার।
একবার গোঁত্তা খেল পানিতে, তারপর আবার চক্কর কাটল সে। আবার জাফিকে দেখার চেষ্টা করল এবং নিশ্চিত হলো এটা একটা আধিভৌতিক ঘটনা। ফলে সেদিনের মতো মৎস্য-শিকার স্থগিত রেখে, আর্তস্বরে একবার ডেকে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেল। বাকিটা জীবন সে এই আধিভৌতিক গল্পটা শোনাবে ছেলেপুলে নাতিপুতিদের। জানাবে যে, নিজের চোখে সে একটা ভূত-ঝিনুক দেখেছিল। যা সমুদ্র থেকে শূন্যে উঠে যেতে পারে একা একা। হয়তো সে আকাশেই যাচ্ছিল।
ধীরে ধীরে হলেও জাফি কিন্তু নৌকার মাথায় পৌঁছে গেল। সে পরিশ্রান্ত। হাঁফাচ্ছে। থরথর করে শরীরটা কাঁপছে। এখন তার প্রার্থনা নৌকাটা যেন ঠিক নৌকা হয়। জাফি নৌকার গলুই দেখে নিজের শরীরটা আর ধরে রাখে না। তার থেকে যেন খসে পড়ে... একেবারে পাটাতনে।"
জাফির অ্যাডভেঞ্চার
আহমেদ খান হীরক
প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০ টাকা
#সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment