অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।

'প্রথমে তনয়দের বাড়ি। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রাস্তার দু-পাশের বাড়িগুলোর আলো জ্বলে উঠেছে, শাঁখ বাজছে কোথাও কোথাও। মিউনিসিপ্যালিটির রাস্তার আলো এখনও জ্বলেনি।

তনয়দেরও বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। রাস্তার দিকের দুটো জানালার একটা শীতের সন্ধ্যায় বন্ধ। আর খোলা জানালাটা দিয়ে একটি মনুষ্যমূর্তির পৃষ্ঠদেশে অনেকটা আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাকিটা রাস্তায় এসে পড়েছে। গত বছরের রেজাল্টের দিনের মতোই জানালায় দাঁড়িয়ে আছে টুকু। —'দাদা, এই দাদা।

টুকুর ডাকে সদর দরজার দিকে না গিয়ে আমরা জানালার কাছে এগোই। —'কী করছিলিস্ এতক্ষণ। প্রায় ধমকায় টুকু।

তনয় গলা নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে— আমরা সবাই কুন্তীর ওপারে গিয়েছিলাম। তোর জন্য টম্যাটো, ছোলা এনেছি। তনয় জানালা দিয়ে পকেট দেখায়।

—“চাই না ওসব। সেই কোনকালে স্কুলে গেলি....রেজাল্টের দিন—চিন্তা হয় না?' টুকুর মুখ ভার কাটে না।

টুকুর এবার ক্লাস এইট। 

টুকুও কি বড়ো হয়ে গেল ?

তনয় আরও গলা নামিয়ে ফেলে—'কে চিন্তা করছে? তুই?—এই দেখ রেজাল্ট। বুক পকেটের ভাঁজ করা হালকা তুঁতে রঙের কাগজটা জানালা দিয়েই বাড়িয়ে দেয় তনয়।

ভাঁজটা খুলেই আলোর সোজা পিঠে টুকুর নজর যায় কাগজটার ডান দিকে লাল কালিতে দাগানো 'দ্বিতীয়' লেখাটার উপর।

টুকু জানালার টোয়ার ওপর প্রায় লাফিয়ে ওঠে।

তোমারটা দেখি শোভনদা। জানালা দিয়েই হাত বাড়ায় টুকু।

আমারটাও চালান যায় ওর হাতে। তনয়েরটার ওপর দিয়ে আমারটা খুলে আবার চাপা উল্লাস টুকুর—'বাপরে! তোমার থার্ড!' 

— তোরটার কী খবর?"

রাস্তার তেরছা আলোয় টুকুর পরিপূর্ণ হাসি।

যদিও টুকুর মুখটা আলোর বিপরীতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, তবু অনতি-সন্ধ্যার আলোয় বোঝা গেল টুকু বিকালে হালকা করে পাউডার মেখেছে, কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরেছে। ওর গায়ে নীল সোয়েটার। ওর গা থেকে এতটা দূরেও ভেসে আসছে হালকা জুঁই ফুলের গন্ধ। বৈমাত্রেয় দাদা আর তস্য বন্ধুর স্ট্যান্ডে আপাতত সেই মুখে উল্লাসের লালিমা।' 


অনন্যবর্তী
দুর্লভ সূত্রধর 

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: সৌজন্য চক্রবর্তী 

মুদ্রিত মূল্য: ৩২০ টাকা 
#সুপ্রকাশ



Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।