পূরব দিগন্ত পানে অন্তিম পূরবী। শতঞ্জীব রাহা

 'ডাকঘর' নাটকটিকে মৃত্যুলীন ধূসরতার লিরিকতর লিরিক হিসেবে দেখার একটা সাধারণ প্রবণতা আছে। প্রমথনাথ বিশী 'ডাকঘর' রচনাকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথের অন্তরে জেগে ওঠা মৃত্যুবোধের সূত্রে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, নাটকটি তাঁর নিজেরই মৃত্যুকল্পনা অবলম্বনেই লেখা। প্রমথনাথ নিজ বক্তব্যের স্বপক্ষে রবীন্দ্র-সাক্ষ্য ব্যবহারও করেছিলেন।

রবীন্দ্ররচনার মর্জিমহলে প্রবেশ ও পদসঞ্চারের জন্য রবীন্দ্র-সাক্ষ্যের ব্যবহার বহুক্ষেত্রেই যে ঝুঁকিসাপেক্ষ তা প্রমথনাথ নিজেও জানতেন বলেই রাজ-কবিরাজের আগমনে অমলের ঘুমিয়ে পড়াটাকে শেষপর্যন্ত কিছুতেই তাঁর মৃত্যু বলে মনে হয় না--- অমলের এই ঘুমকে 'প্রতীক-নিদ্রা' বলে মনে হয় তাঁর। কেউ কেউ এটাকে খ্রিস্টীয় রেজারেকশান জাতীয় কিছু বলে মনে করেছেন-- প্রমথনাথ এটাও উল্লেখ করেন।
এই নাটকের প্রধান বিষয় মৃত্যু নয়--চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত জীবন, এবং সেই জীবন সম্বন্ধে অমলের অনাবিল প্রতীক্ষা। সুধা বলেছিলঃ "বোলো যে, সুধা তোমায় ভোলেনি।"--এই তো ডাকঘর নাটকের ধ্রুবপদ।

রাজার আগমন-সংবাদের আশ্বাসে অমলের দু চোখ জুড়ে যে প্রশান্তির ঘুম নেমে আসে, তা মৃত্যু তো নয়ই, 'প্রতীক-নিদ্রা' ও নয়। রাজার আগমনের পূর্বে রাজদূত ও রাজ-কবিরাজের আগমন সেই জীবনেরই সম্ভাবনার দরজা-জানলা উন্মুক্ত করে দেয়-- যে জীবনে শুশ্রূষা আছে, আছে আরোগ্যের আশ্বাস---আছে নতুন ভোরের জন্য অনাবিল প্রতীক্ষা। পাঁচমুড়া পাহাড়ের নীচে, শামলী নদীর ধারে ছবির মতো গ্রামটিতে অমলের প্রতিদিন নতুন করে জেগে ওঠা। এ তো নবজন্ম নয়, পুনর্জন্মও নয়--- তাকে আমরা পুনরুত্থান বলতে পারি। এই পুনরুত্থান কতটা খ্রিস্টীয় বিশ্বাস অতিক্রমী এবং কতটা 'মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে ছড়ানো' আকীর্ণ জীবনের সঙ্গে বিজড়িত, তা যথাস্থানে আমরা বলতে চেয়েছি। 'ডাকঘর' নাটকের কালে সূচিত রবীন্দ্রনাথের এই জীবনানুশীলন মুক্তি-ডানায় ভর করে 'প্রান্তিক' কাব্য-কাল ছুঁয়ে উড়াল দেয় জীবনের দিগন্ত আকাশের দিকে।

'পূরব দিগন্ত পানে অন্তিম পূরবী' থেকে।
শতঞ্জীব রাহা

মুদ্রিত মূল্যঃ একশো আশি টাকা
#সুপ্রকাশ


অনলাইন অর্ডার লিঙ্কঃ https://thinkerslane.com/?product=puraba-diganta-pane-antim-purabi

বাংলাদেশে বইটি পেতে সুপ্রকাশের নাম করে নোকতা(বুবুক), তক্ষশিলা বা বাতিঘরে সুপ্রকাশে নাম করে অর্ডার দিতে পারেন।


Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।