ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী

 “নারকেল কোরা হয়ে গেছে ইন্দুবালার। এই বয়সে দশটা নারকেল কোরা চাড্ডিখানি কথা নয়। ঘামছেন তিনি। এবার বাটতে হবে শিলে ফেলে পুরোটা। মিহি করে। যাতে একটু এবড়ো খেবড়ো কুচি না পড়ে মুখে। জিভে দেওয়ার সাথে সাথে যাতে গলে যায় চন্দ্রপুলি। দিনের বেলা হলে ধনঞ্জয় জোর করে মিক্সিতে বাটতে বলতো। কিন্তু ইন্দুবালা জানেন প্রাচীন এক শিলায় নারকেল বাটা আর যন্ত্রে বাটার মধ্যে অনেক তফাত থাকে। পাথরের ওই স্বাদটা কি তিনটে স্টেনলেস স্টিলের ব্লেড দিতে পারে? কখনোই না। ইন্দুবালা তাঁর শ্বশুর বাড়ির সেই কবেকার ভারী শিল খানা পাতেন। বাটতে বসেন। আর ওই দিকে তখন কবেকার যুগ এফাল ওফাল করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে বড় খোকা, ছোট খোকা তার কোলে আবার খুকী। “আমরাও খাবো মা”। ইন্দুবালা বলেন “আগে হোক। তারপর খেও। এখন ঘুমিয়ে পড় যাও”। কিন্তু কেউ যেতে চায় না। তিনজনেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ইন্দুবালার দিকে। ইন্দুবালা বুঝতে পারেন এরা এখান থেকে কেউ নড়বে না। মায়ের জেদ আর ধৈর্য্য দুটোই তারা পেয়েছে যে। বড় ছেলেকে উনুনে দুধটা নাড়তে দিয়ে ছোট ছেলেকে এলাচ ছাড়াতে বলেন। মেয়েটা কোলে ঢুললেও বারবার জেগে উঠছে। ছোটোর দিকে তাকিয়ে দাদ-দা বলছে। ও বাবা বলতে শেখেনি। কারণ বাবাকে ও দেখেনি। তাছাড়া এই বাড়িতে বাবা বলে কেউ কাউকে ডাকে না। তাই ওই শব্দটা আপাতত ওর জীবন থেকে উধাও। দুধ উথলে ওঠার হলে বড় খোকা ফু দেয়। ইন্দুবালা বকেন। “ওইভাবে মুখের হাওয়া দিতে আছে? ঠাকুর খাবে না?” ছোট খোকা এলাচ ছাড়াতে ছাড়াতে বলে “তাহলে আমরা কখন খাবো মা?” মেয়েটা কোল থেকে “মা... মা...” বলে ডেকে ওঠে। ইন্দুবালা নারকেল বেটে চলেন। রাত বাড়তে থাকে। ঘন দুধ ক্ষীর হলে তার মধ্যে ওই নারকেল বাটা চিনি দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকেন। যতক্ষণ না মন্ডটা শক্ত হয়। ছেলে দুটো ততক্ষণ বসে থাকে। রান্নাঘরের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ঢোলে। মেয়েটা ঘুমের মধ্যে কাদা। ছোট ছোট ছাঁচে পুর গুলো পোরেন ইন্দুবালা। বড় কাঁসার থালায় ভর্তি হতে থাকে ময়ূর, নক্সাকাটা নৌকা, পাঁপড়ি মেলা ফুল, জলের মধ্যে হাঁস, পদ্মপাতার আলপনা আরও কত কতকি। ঘুম থেকে তুলে দেখান দুই ছেলেকে। মেয়েটার তো তখন অতো বোঝার বয়েস হয়নি। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ছেলে দুটো। অবাক হয়ে। আর ইন্দুবালার ঠিক সেই মুহূর্তে কান্না পায়। ভীষণ কান্না। ফাঁকা রান্না ঘরে থালা ভরা চন্দ্রপুলি নিয়ে সত্তর পেরোনো ইন্দুবালা মুখে কাপড় গুঁজে হাহাকার করেন। পাছে ধনঞ্জয় শুনতে পায়। ছেলেদের ফোন করে ডাকে। ওরা যদি জেনে যায় ওদের মা সত্যি কত ভালোবাসে। ইন্দুবালা জানতে দিতে চান না তাঁর এই ভালোবাসা কাউকে। যাদেরই ভালোবাসতে গেছেন তারাই চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে। এটা যে অভিশাপ তাঁর জীবনে। উনি এই বয়সে সন্তান শোক পেতে চান না।”

আসছে

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
কল্লোল লাহিড়ী

প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য


#সুপ্রকাশ


অনলাইন অর্ডার লিঙ্কঃ https://thinkerslane.com/?product=indubala-bhater-hotel

বাংলাদেশে বইটি পেতে সুপ্রকাশের নাম করে নোকতা(বুবুক), তক্ষশিলা বা বাতিঘরে অর্ডার দিতে পারেন।



Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।