হ্যান্ডবিল। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

 'কলি যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অদ্ভুত অবতার' হেডিং-এর হ্যাণ্ডবিল অনেকের হাতেই এসেছে, আসতে বাধ্য। কারণ এইসব হ্যাণ্ডবিল জি পি সিরিজে ছড়ায়। যার হাতে পড়ে, হ্যাণ্ডবিল অনুসারে তাকে কিন্তু ছেপে বিলি করতেই হবে, এরকমই নির্দেশ থাকে। 'দক্ষিণ ভারতের তিরুপতির মন্দিরে কলিযুগের এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ওই মন্দির থেকে এক সর্প বেরিয়ে অনেক অপেক্ষা করে এক ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করলো।' তারপর ওই মন্দিরের পূজারীকে সর্পরূপী ব্রাহ্মণ বলে যে, আমার নামে ১০০০ কাগজ ছেপে বিলি করার ১৪ দিনের মধ্যে তাঁর মানসিক চিন্তা দূর হবে, নানারকম মঙ্গল হবে, আর ১৪ দিনের মধ্যে না করলে অমঙ্গল হবে।

সর্পরূপী ব্রাহ্মণ এই কথা বলে ওখান থেকে ৩৬ পা পিছিয়ে অন্তর্ধান করলেন।
হ্যাঁ, অন্তর্ধান করার জন্য ৩৬ পা-ই প্রয়োজন হয়েছে ১৯৭৮-এর হ্যাণ্ডবিলে, ৮৪-তে, ৯৫-তে, ৯৮-তে। বিভিন্ন সময়ে পাওয়া এই হ্যাণ্ডবিলগুলিতে ভাষার তেমন পরিবর্তন নেই।

আর একটি এই গোত্রের হ্যাণ্ডবিল হলো, মুঙ্গের জেলাতে সন্তোষী মাতার দর্শন।
সন্তোষী মাতার মন্দিরে এক মহিলা পূজা করিতেছিলেন। সন্তোষী মাতা তাঁকে দর্শন দেন এবং ওই মহিলাকে বলেন আমি কলিযুগে মেয়েছেলের রূপ ধারণ করে কলিকে ধ্বংস করে অনাচার দূর করব। আর সকলকে সমান করে রাখব। 'এই সংবাদকে যে লোক প্রচার করবেন তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ হবে ও ধনধান্যে...' তারপর সেই একই ফর্মুলা। একজন ৫০০ ছাপিয়ে বিলি করল, সে মোকদ্দমায় জিতল, এবং সন্তোষী মা স্বপ্ন দিলেন তোমার বাড়ির পশ্চিমে ধন পোঁতা আছে। আর যে অবিশ্বাস করলো, তার সাবালক ছেলে...।

বিশ্বাসে মিলায় ধন, তর্কে বহুদূর-- এই থিওরিতে বিশ্বাসী বহু মানুষ কম্পিত হস্তে হ্যাণ্ডবিল বিলিয়েছে।

📕
ঈশ্বরীয় নিমন্ত্রণের চিঠি পাননি কখনও? পরমাত্মা শিব-ভগবানের প্রত্যক্ষতার আনন্দ সংবাদ? একটি হ্যাণ্ডবিল পড়ে জানতে পারলাম গীতার 'যদা যদাহি ধর্মস্য...' শ্লোক অনুযায়ী সাধুদের সুরক্ষা এবং দুষ্কৃতীদের বিনাশের জন্য ভগবান ১৯৩৬ সালে ব্রহ্মলোক থেকে অবতারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন ধাপে কাজ করে বর্তমানে জগৎমাতা জগদম্বার(শ্রীমতি কমলাদেবী দীক্ষিত) সহযোগিতায় বিশ্ব পরিবর্তনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি এই পৃথিবীর বুকে বৈকুণ্ঠ(প্যারাডাইস) স্থাপন করবেন, আর ভ্রষ্টাচারী পতিত কলিযুগী দুনিয়ার বিনাশ সাধন করে স্বর্গরাজ্য স্থাপন করবেন এবং আগামী ২৫০০ বছর অপার শান্তি ও আনন্দে পূর্ণ থাকবে এই বিশ্ব। এখন ভগবান উত্তরপ্রদেশের কম্পিল গ্রামের শ্রীবীরেন্দ্রদেব দীক্ষিতের শরীরে প্রবেশ করে গীতার প্রকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। শ্রীবীরেন্দ্রদেবের কাছ থেকে ঈশ্বরীয় ব্যাখ্যা জানার জন্য সাত দিনের বেসিক কোর্স ও পাঁচ দিনের অ্যাডভান্সড কোর্স চালু হয়েছে সল্টলেকের অমুক ঠিকানায়। এই সু-সমাতার জানাচ্ছে শিবশক্তি ও পাণ্ডবসেনা।

📕
একটা হ্যাণ্ডবিল এরকমঃ
'জয়গোপাল যোগানন্দ বলবি
অন্ধকারেও আলো দেখবি।'
হ্যাণ্ডবিলটি পাগল যোগানন্দ আশ্রম থেকে প্রচারিত। হাবড়ার অন্তর্গত রাজীবপুর হাট। রেজি নং...।
হ্যাণ্ডবিলের ওপর পাগল যোগানন্দ বাবার ছবি। তারপর বাণীঃ 'শ্রীশ্রীগুরুমাতার আশীর্বাদ নিয়ে তোরা এগিয়ে চল, ভয় নেই, আমি তো আছি।'
'বাবার বিলাপ' সাবহেডিংটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। 'আমার ইচ্ছা ছিল ঘরে ঘরে করুণাময়ী তৈরী করে যাব। মহাশক্তির অংশ নারীকে সংসারের মাঝে মাতৃরূপে প্রকাশ করব। কিন্তু মা সাজতে গিয়ে ওরা মায়া সেজে বসল...।'

📕
পীড়িত পুরুষ পতি পরিষদ আবার একটি নারী বিরোধী সংগঠন। তারা অবশ্য সে কথা স্বীকার করে না। তাদের হ্যাণ্ডবিলে লেখা আছে-- নারী নয়। কেবলমাত্র অ-মানবতাবাদী, দজ্জাল, স্বার্থান্বেষী, কুচক্রী, অর্থলোলুপ, বিকৃতিমনস্ক নারীদের বিরুদ্ধেই আমাদের আমৃত্যু সংগ্রাম চলছে ও চলবে।
এই মানবতাবাদী সংগ্রামে বেশ কিছু মহিলা সহযোদ্ধাও আছেন। তাঁদের নামও দেওয়া আছে ওই হ্যাণ্ডবিলে। তাঁদেরই অন্য এক হ্যাণ্ডবিলে পীড়িত পুরুষদের একটি সভায় যোগদানের আহ্বানের ভাষা এরকম--
"গিনিপিগদের অশ্রু প্রদর্শনী।
প্রিষ নিপীড়িত মানব সন্তানগণ।
আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ (রবিবার) বিকাল সাড়ে চারটায় পীড়িত পতি পরিষদের একদল গিনিপিগ(নারীবাদীদের চোখে অধম মানবপুত্র) মহাজাতি সদনের সেমিনার হল-এ দজ্জাল স্ত্রী এবং নারী কর্তৃক অত্যাচারিত পুরুষ তাঁদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী শোনাবেন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চারজন মানবতাবাদী নারী...।"

📕
২০০৪ সালের ভ্যালেন্টাইন ডে-র প্রাক্কালে ইন্টারন্যাশানাল লাভার্স ফোরাম একটি হ্যাণ্ডবিল ছেড়ে বলছেঃ
'কে আছো লাভার পথে এগোও এবার
হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি
খেতে হবে চুমু পথে।
কলকাতায় নয় কেন ? কীসের আইন ? কীসের অশ্লীলতা? সারা পৃথিবীতেই রাস্তায়, পার্কে, মেট্রোয়, বাসস্ট্যাণ্ডে ইচ্ছে হলেই পরস্পরের সম্মতিতে চুমু খাওয়া যায়, কেন নয় কলকাতায়? আসুন প্রেমিক-প্রেমিকারা, ভ্যালেন্টাইন ডে-র পুণ্য বিকেলে, প্রেম চুম্বনে শুরু হোক প্রেম আন্দোলন।'

খবরের কাগজ পড়ে জেনেছিলাম, এই আন্দোলনে বাঙালি সাড়া দেয়নি তেমন। বোমা এবং চুমা এখনও গুপ্তভাবেই রচিত হয়।


'হ্যাণ্ডবিল'-এর অংশ।
আলাপ বিলাপ
স্বপ্নময় চক্রবর্তী

মুদ্রিত মূল্যঃচারশো টাকা
#সুপ্রকাশ


অনলাইন অর্ডার লিঙ্কঃ https://thinkerslane.com/?product=alap-bilap

বাংলাদেশে বইটি পেতে সুপ্রকাশের নাম করে নোকতা(বুবুক), তক্ষশিলা বা বাতিঘরে অর্ডার দিতে পারেন।


Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।