দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’-এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুমনা চৌধুরী

সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’-এর পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুমনা চৌধুরী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
.................................

পাঠ প্রতিক্রিয়া
************* 
'আহাম্মকের খুদকুড়ো'
দুর্লভ সূত্রধর
প্রকাশক : সুপ্রকাশ
প্রচ্ছদ: সৌজন্য চক্রবর্তী
মূল্য : ২৮০/- 

"ডুমাটোলার দাদু বলেছিলেন, 'বুঝলে দাদুভাই, এই জীবনটা ছাড়া জীবনে অপ্রয়োজনীয় বলে কিছু নেই। হমারা জীবন সির্ফ হমারা অকেলা নহি হ্যায়, সবারটা মিলিয়ে তবে আমাদের এক-একটা জীবন। তোমার জমানো খুদকুড়োর মধ্যে দেখবে আছে কত লোকের জীবনের দিনরাত, কিতনে লোগো কো জীবিত রহনা। কতজনের কত কথার কত শব্দ, দিল কী বাত, কতজনের কত গান, বুদ্ধি কী কিতনা সুগন্ধ, বিচারো কা হীরা-জহরৎ। সোচো দাদুভাই, ইয়ে কেবল আপকি চিজেঁ নহি হ্যায়---বলতে গেলে তোমারই নয়। তাই আলো-ভালোগুলোকে আগলে রেখো। যেদিন দেখা যাবে খুদকুড়োও নেই, ফুটন্ত ভাতের গন্ধ নেই কোথাও, সেদিন হয়তো এগুলোরই খোঁজ পড়বে। কোনোকিছু অপচয় করো না। ইয়াদ রাখনা, অপনে দিলমে কোই তরহা কোই অপেক্ষায়েঁ রাখা চলবে না। অর ফির ইসকে লিয়ে অপনে আপ মে কোই অভিমান নহি রাখনা চাহিয়ে।" -----

এভাবেই শুরু হচ্ছে 'আহাম্মকের খুদকুড়ো'র শুরুর কথা। লেখক যার নাম দিয়েছেন 'কথা: কিছু অনাবশ্যক'। সেই অনাবশ্যক কথার ধারা ধরে একে একে লেখক খুলে গেছেন তাঁর স্মৃতির প্যান্ডোরা বক্স। সে স্মৃতির ভিড়ে কখন যেন পাঠকও মিশে যাবে নিজের-ই অজান্তে। মনে হতে থাকবে - এ স্মৃতি শুধুমাত্র লেখকের-ই একান্ত যাপন নয়,  এ-যাপন কোথাও যেন আমাদের মতো তুচ্ছ সাধারণ, যারা কিনা লেখকের মতোই 'ডিফার করার ঠেলা আছে জেনেও ফট করে ডিফার করে বসে, নিজের মতটা বলে বসে।--সকলের চক্ষুশূল হওয়ার ঠেলা সামলায়।'--- তেমন 'আহাম্মক'দেরও ফেলে আসা কোনো জীবনের টুকরো ছবি। 'পোড়ের ভাতে'র আখ্যান থেকে 'মা অন্নপূর্ণা' হয়ে 'রিপাবলিকের পাবলিকেরা', 'ক্ষয়িষ্ণু শীত-সকাল ও তেল-হলুদে স্নান' কিংবা রূপেশ্বরীর তীরে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় 'বেদনার পরম গোপন কথাখানি' বুকে নিয়ে বসে থাকা কিশোরটির সাথে কোথাও যেন মিশে যাবে আমাদের কারুর কারুর চলমান জীবনের পিছুটান। আর এখানেই লেখকের ডুমাটোলার দাদুর কথাগুলো পাঠকের কাছেও একান্ত সত্য হয়ে উঠবে--- 'তোমার জমানো খুদকুড়োর মধ্যে দেখবে আছে কত লোকের জীবনের দিনরাত…'।

১৮৯ পাতার বইখানাকে লেখক ভাগ করেছেন একুশ খানা পর্বে। সেই পর্বে কখনো এসেছে জ্বরমুখে পোড়ের ভাতের স্বাদ, কখনো বা পিতলের নাগরা-জুতোর বিস্ময়। জলখাবারের সমারোহ অথবা নিখুঁত সুতার টানে আধখানা ডিম খাওয়ার নিত্য নৈমিত্তিক মধ্যবিত্ত যাপনের অভ্যেস পেরিয়ে গোটাগোটা দুটো ডিম খাওয়ার বিস্ময়। শ্রেণীর বিস্ময়। সরকারি স্কুলে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত  শ্রেণীর ছাত্রের মাঝে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর কোনো প্রতিনিধির বৈভবের বিচিত্র বিস্ময়, যে কিনা গোটা দুটো ডিম প্রাতঃরাশে পায়--- সেসব লেখকের স্মৃতির সীমানা ছাড়িয়ে আমাদেরকেও ছুঁয়ে যাবে। মা অন্নপূর্ণা আর দয়াবতী দিদিদের মুখে কখন যেন আমাদের ঘরের অন্নপূর্ণা কিংবা দয়াবতীদের আদল ফুটে উঠবে। আর স্মৃতি হাতড়ে লেখকের মতো আমরাও দুঃখু-দুঃখু মুখ করে ভাববো "---মায়েদের অনন্ত পরমায়ু পাওয়া দরকার---আমাদের সেদিনের বয়েসটা আর আজকের সক্ষমতাটুকু একসঙ্গে থাকলে কত যে ভালো হতো!' 

আমাদের মতো পাবলিকেরা, যারা কিনা ভাঙা ভাঙা দরজা, সংকীর্ণ অফিসঘর, দেওয়ালে দেওয়ালে পরীক্ষার টুকলিক্রিয়ার কালিমাসহ কোনো আদ্যিকালের পুরোনো ঘরে শিক্ষাজীবনের কয়েক ধাপ পেরিয়ে এসেছি, তাদের সাথে লেখকের 'রিপাবলিক ও তার পাবলিকেরা' অবলীলায় এসে জুড়ে যাবেন। 'রিপাবলিকের সাড়ে-সতেরো মজা' পেরোতে পেরোতে আমরা চলে যাব রিপাবলিকের দেওয়াল পত্রিকার অভিনব সব মণি-মুক্তোয় ভরা বিচিত্র ও মৌলিক রচনায়। স্কুলের প্রতি প্রেম নিবেদন করে চার চরণের পয়ার, মানিক্য'র 'পিঁপড়ে-পোষার উপকারিতা' নামক গূঢ় চিন্তার নিবন্ধ কিংবা ক্লাস নাইনের অমৃতের ইলিশ ও নারকেল নিয়ে সাড়া জাগানো নিবন্ধ  'ইলনারতত্ত্ব' আমাদের নির্মল আনন্দ দিয়ে যাবে। মাণিক্যকে শেষমেষ তার বন্ধুরা ডেঁয়ো পিঁপড়ের ঢিবিতে পাঠিয়েছিলো কিনা, কিংবা অমৃত ইলিশ নারকেল তত্ত্ব ভজনার জন্য রিপাবলিকের নানাবিধ গঞ্জনা পেরিয়ে  শেষমেষ 'ইলিশ ও নারকেল সেলিব্রেশন' বন্ধ করেছিল কিনা, সেকথা লেখক আর সবিশেষ জানাননি। তবে এইসমস্ত মৌলিক ও বিচিত্র রচনার ফলে মাস্টারমশাইয়েরা যে আর দেওয়াল পত্রিকা নিয়ে খুব বেশী স্বস্তিতে থাকতে পারতেন না, একথা 'ইলনারতত্ত্বে'র শেষে লেখকের ভাষ্যেই জানতে পারি আমরা। 

প্লেটোর রিপাবলিকের মতোই লেখকের রিপাবলিকও ছিলো একটি আইডিয়াল কমনওয়েলথ বা আদর্শ রাষ্ট্র। সে রিপাবলিকের মাস্টারমশাইয়েরা ছিলেন নিজের নিজের ক্ষেত্রে স্বরাট-সম্রাট। ইস্কুলের মনোগ্রামে লেখা 'তমসো মা জ্যোতির্গময়' শ্লোকটির মতোই তাঁরা সেই রিপাবলিকের নাগরিকদের অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যাওয়ার ঐকান্তিক চেষ্টা করে যেতেন। শুধু পড়াশোনায়-ই নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই। "পরিস্থিতি আর যুদ্ধ-সময়" পর্বে যা আরোও স্পষ্টভাবে আমরা দেখতে পাব। লেখকের মুন্সিয়ানা এখানেই তিনি শুধু হাসি-মজাতেই রিপাবলিককে বেঁধে রাখেননি। বরং তার ফাঁকেই বলে গেছেন জীবনের গূঢ় কথাও। বোধের কথা। যেখানে ম্যাজিক লন্ঠনওয়ালা রহিমুদ্দি'র 'হিরণ্যকশিপু বধ' আর 'দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ" পালার প্রত্যেক দফা বর্ণনার পর শ্রোতাদের উচ্চকিত জয়ধ্বনি আমাদের মাঝে একটা যুগ বা সময়কে নির্মাণ করে দিয়ে যায়। যে সময়টা আজকের এই চুড়ান্ত মেরুকরণের সময় থেকে ছিলো অনেকটাই আলাদা। যেখানে রহিমুদ্দীদের অভিনব সুন্দর গলায় --

"কহ দামোদর, কৌরব ঈশ্বর
ভীমে গদা প্রহারিল।
ভীম মহাবল, হইয়া বিকল,
যুদ্ধে হৈল অচেতন।।" 

---- শুনে, কিংবা পটের গানের শিল্পীদের গানের শুরুতেই মহাদেবের ছবি মেলে ধরে বলা ----"শোনেন বাবুমশাইরা, শোনেন ছেলের দলেরা, কী করে মোরা পটুয়া হলাম শোনেন কান ভরিয়া।। মোরা ছিলাম বিশ্বকর্মার বংশ, আমাগের এক দাদামশায় করলেন তায় ধ্বংস।। মহাদেবের আজ্ঞা ছাড়াই মহাদেবের নাম রচেছিলেন কবি।। মহাদেবরে আতে দেখে ভয়ে সারা হলেন, রঙসুদ্দু তুলিখানি মুখে পুরে দিলেন।। মহাদেব তো রেগে আগুন---ক্যান নুকোলি তুলি, মুখে দিয়ে তুলিটারে সকড়ি করে দিলি।।এঁটো ঐ তুলি দিয়ে কী হবে তুই বল, এই নে তুই মোর সনে নুকোচুরির ফল।। এখন থিকে গুষ্টিসুদ্দু নি-জাত গণ্য হবি, নমাজ পড়বি মোচলমানের আর হিঁদুর গুণ গাবি।। ও বাবুমশাইয়েরা, সেই থিকে বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে মোরা পালি মোচলমানের রীতি, ছবি আঁকি হিঁদু-দেবের আর গাই তাঁহাদের গীতি।। সেই থিকে মোরা হিঁদু-মোচল নই, ভাঙা-ঘরে  এ দুই নিয়ে এক গরেতে রই।। রাম আর রহিম সব একই তো হলো, সবাই মিলে আল্লা-রসুল হরি হরি বলো।।"---- চমকপ্রদ জাতি বর্ণনা শুনে কেউ চোখ রাঙিয়ে মাথায় ফেট্টি বেঁধে তেড়ে আসতো না। বরং বড়ো স্নিগ্ধ আর নির্মল আনন্দে মানুষ সেসব উপভোগ করতো। রিপাবলিকের মাস্টারমশাইয়েরা পটের গানের শিল্পীদের ডেকে রিপাবলিকের ছাত্রদের শুনাতেন সেসব। তার সাথেই হয়তো এক সমতার বোধ ছড়িয়ে দিয়ে যেতেন উত্তরোতর প্রজন্মের মাঝে। এক আইডিয়াল কমনওয়েলথের স্বপ্নে বিভোর হয়েই হয়তো বা! দুটো সময়কে মেলাতে মেলাতে আমরা যারা 'আহাম্মক' তাদের গলার কাছটা কেন জানি না দলা পাকিয়ে উঠতে চাইবে!

একইভাবে আমরা 'পরিস্থিতি আর যুদ্ধসময়ে" পৌঁছাব। অধুনা বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির স্বপ্নে বিভোর। শেষদিকে ভারতও যুদ্ধে নামে। আমরা সেসব ইতিহাস জানি। কিন্তু সেসময়কার পরিস্থিতিতে এদেশের পূর্ব-বাংলা সীমান্ত ঘেষা মানুষেরা কেমনভাবে দেখেছিলেন সে সময়টাকে? রিপাবলিকের সেই যুদ্ধ বছরেই ক্লাস নাইনে উঠা  দেবা'র মুখেই শোনা যাক সে ভাষ্য অথবা বোধ ---
"----আরে একটা দেশ লড়ছে মুক্তির জন্য, অপমান আর শোষণের হাত থেকে, অত্যাচারীদের নাগপাশ থেকে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য--- তাকে ঝামেলা বলবি! দেবা প্রায় শাসিয়ে ওঠে।
সবুজ জমির উপর লাল গোলকের মধ্যে চ্যাপটা ম্যাপওয়ালা পতাকাটা আমরা প্রথম দেখি দেবারই হাতে।"

অথবা হেডমাস্টারমশাই যখন ইস্কুলে জরুরী সভা ডেকে ছাত্রদের গীতা-উপনিষদের শ্লোক টেনে বুঝান --- "এ-ও আসলে এক-ধরনের ধর্মযুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধ কিন্তু ঠিক ক্রুসেড নয়। এ যুদ্ধ ধর্ম-সম্প্রদায়ের জন্য নয়---এ হলো বাঙালির জাতিসত্তা ও ভাষা-স্বাতন্ত্র্য রক্ষার লড়াই। আমাদের পাশের দেশটা অন্য দেশ হলেও তার মানুষগুলো আড়াই দশক আগেও আমাদেরই অংশ ছিলেন---এখনও তারা আমাদেরই লোক, আমাদের ভাষাতেই কথা বলেন---আমাদের মতো করেই খাওয়া-দাওয়া করেন, জীবনযাপন করেন। তাঁরা আজ আক্রান্ত। তাঁরা অনাচারী-অত্যাচারী-প্রজাপীড়ক-হানাদার রাজশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। সেই কারণেই বিপন্ন সাধারণ মানুষেরা নিরাপত্তার সন্ধানে আমাদের দেশে এসেছেন। তাঁরা আমাদের অতিথি। এ যেন অত্যাচারীর বিনাশ আর সাধারণ-সাধুজনদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরও কিছু করতে হবে, মানবধর্মের পক্ষে থাকতে হবে। এঁদের সকলকে যথাসাধ্য আতিথ্য দিতে হবে---যথা ধর্ম তথা জয়, জয় আমাদের হবেই।"--- পড়তে পড়তে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে এনআরসি-ডিটেনশনক্যাম্প-ডি-ভোটার উত্তর অধুনা ভারতবর্ষ। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাঙালি শব্দের অর্থের বিনির্মাণ। আর বড় শূন্যতায় আমরা খুঁজে বেড়াবো রিপাবলিকের হেডমাস্টারমশাইয়ের মতো একজন মানুষকে। যিনি কিনা এইসময়ে এসে শুধু 'রিপাবলিকের পাবলিকদের'ই নয়, গোটা দেশের মানুষকে 'মানবধর্মের পক্ষে থাকার' পাঠ পড়িয়ে যাবেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রিপাবলিকের সম্মিলিত ছাত্রের প্রথম দিনের  প্রেয়ার হলের মতোই গোটা দেশের মানুষকে শিখিয়ে যাবেন এই বীজমন্ত্র - "স্বাধীনতা বেঁচে থাকুক আমাদের ইচ্ছার মধ্যে।"   

অথবা দেবা, 'পরিস্থিতি' সামলে উঠলে আমীরা নামক মেয়েটির তার দাদার সাথে নতুন দেশে ফিরে যাওয়া যার রোগাটে মুখে এঁকে দিয়েছিলো বিষাদের আল্পনা। বেজনা বিলের জলে সেই বেদনাহত কিশোরের ছায়ার মাঝেই একদিন শহর স্বাভাবিক হয়ে আসে। রিপাবলিক খুলে যায়। বরুণকে দুলিয়ে দিয়ে যায় বেতসলতা মেয়েটির নাকছাবির 'ছিলা-কাটা বিন্দু-পাথরের অরোরার ছটা'। যুদ্ধসময়ে রিপাবলিকের পাবলিকেরা দ্রুত বড়ো হয়ে ওঠে। 

সেই বড়ো হওয়া সময়ে গিয়ে আমরা পাবো প্রণবদাকে। মায়েদের প্রণব, ঠাকুমা-দিদিদের পনা বা পোনু। বউদিদিদের প্রণব ঠাকুরপো। তাকেও আমরা একদিন খুঁজে পাবো দেবার-ই মতো বিষাদঘন মুখে প্রত্যেক বিকেলে ঘুড়ি উড়াতে। "নীল আকাশের মাঝে সাদা থোপা থোপা মেঘের পাশে উড়ছিল 'দিন-রাত্তির', শেষ বিকেলে প্রণবদা সাঁ সাঁ করে উড়িয়ে দিল 'মোমবাতি'। 
'দিন-রাত্তির'ও জেতেনি, মোমবাতিও জেতেনি।" 

হেরে যাওয়া প্রণবদার বিষাদ চোখের কাছে চিক-চিক করার মাঝেই আমরা দেখতে পাবো ছন্দিতাদের পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া। আর সে বিষাদগাঁথা বুকে নিয়ে এক আহাম্মককে, "যার সাদা-মাটা জীবনে পুঁজি-পাটা ছিল কম। তবু কী করে যেন ছন্দিতা নামের সেই মেঘদূতীর মুখে বাহ্যত ফুটে না-ওঠা দুঃখের রেখা সে পড়তে শিখেছিল। আ-কৈশোর ত্বকের ভেতরে সেই বালিকার মুকুল-মুকুল গন্ধকে লালন করেছিল--- নিজের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে ঝিম্-ধরানো নৃত্যের ছন্দকে অভিযোজিত করেছিল সে। সেই ছেলেটিই একমাত্র বুঝতে পেরেছিল---'বেদনার পরম গোপন কথাখানি'--- যে কথা কাউকে বলা যায় না, কারোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায় না।" গোপন দুঃখ বুকে নিয়ে সে কিশোরকে তার পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাবো  রূপেশ্বরী নদীর পাড়ে। এপার ওপারের পারাপার দেখতে দেখতে, শ্যাম ঘোষের অপূর্ণ জীবন বয়ে চলার মাঝে দরদ ঝরে পড়া কণ্ঠে --- "ও আধে গো/চইলা গেলি কেনে?/মোরে ফেইলা কুথায় গেলি?/কোন্ সুখেরই টানে/চইলা গেলি কেনে?" শুনতে শুনতে আহাম্মকটাও অস্ফুটে বলে উঠবে ---'আমি তো ছিলামই, আমি তো আছিই, আমি তো থাকছিই!' আর এভাবেই নিজের নিজের রূপেশ্বরীর জলে সমস্ত দুঃখ ভাসিয়ে পাঠকও সেই ডুমাটোলার দাদুর কথা-র মতো - 'আলো-ভালোগুলোকে আগলে রাখতে' আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসবে। গলার কাছটার ব্যথা অথবা চোখের কোনের চিক-চিক নিয়েই।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।