' নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি ' পড়ে লিখেছেন জয়িতা দে সরকার

সুপ্রকাশ প্রকাশিত কল্লোল লাহিড়ীর ' নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি ' পড়ে লিখেছেন জয়িতা দে সরকার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
.....................................

নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি। 
কল্লোল লাহিড়ী। 
সুপ্রকাশ প্রকাশনা 
প্রথম প্রকাশ জুন,২০২২.

গত সপ্তাহেই শেষ করেছি কল্লোল লাহিড়ীর  উপন্যাস নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি। 

গল্প বলার শুরুতেই একটা ধাক্কা। উৎসর্গ-এর পাতায় উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা "পৃথিবীর সব স্কুলের লাস্ট বেঞ্চকে..." লাস্ট বেঞ্চ মানেই তো একদল খারাপ ছেলেমেয়ে। প্রশ্ন জাগে তাহলে কি পুরো গল্পটাই খারাপ হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে? দেখাই যাক কি লেখা আছে এই ভেবে তাড়াতাড়ি পাতা উল্টে পড়তে শুরু করি। 

গল্পের শুরু কবি মন্টু সরকারের কবিতা এবং তার মৃত্যুকে ঘিরে। কে এই মন্টু? ওই যে যারা একটা গোটা পৃথিবীর বুকে একেবারে একা। যারা ভাবে "জ্বলে পুড়ে মরার চেয়ে ভালোবাসায় মরা অনেক ভালো। এই পৃথিবী মরে যাক ভালোবাসায়।" মন্টু আসলে ক্লাস টেনের লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা সেই ছেলেটা। 

গল্পের মূল চরিত্র মন্টু হলেও গল্প ঘুরে বেড়ায় কিংশুকের চারিদিকে। ষোলো বছরের কিংশুকের সামনেই মাধ্যমিক। অথচ বাংলা,জীবন বিজ্ঞানবিজ্ঞান, সম্পাদ্য,উপপাদ্যের গায়ে তখন জমছে ধুলো। এদিকে আবার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শরীরের বিরক্তি। মাধ্যমিকের প্রেসার কে উপেক্ষা করে গালের ব্রণর দিকে মন ছুটে যাচ্ছে বারবার। দিপালী কে ঘিরে তৈরি হচ্ছে একটা ঘোর। এটাই কি ভালোবাসা? গল্প ঘুরছে কিংশুকের বয়ঃসন্ধি কে ঘিরে। দিপালী,তমাল,পচা,কাকলি,হুলোদের ঘিরে। উপন্যাসের অনেকখানি অংশ জুড়ে রয়েছে স্কুল জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক লুকিয়ে রাখা গল্প। প্রথম চুমুর স্বাদ। প্রথম বন্ধু বিচ্ছেদের গল্প। প্রথম প্রেম ভেঙে যাওয়ার গল্প। অনেক নিষিদ্ধ গল্প কে উজ্জ্বল এবং সাবলীল ছন্দে বলিয়ে নেওয়া হয়েছে কিংশুকের বয়ানে। যে গল্প গুলো মন খুলে কাউকে না বলতে পারলে সারা জীবন কষ্ট চেপে ঘুরে বেড়াতে হয় অনেককেই। গল্পের শেষে হারিয়ে গেছে অনেক প্রিয় মুখ। না পাওয়ায় কষ্ট নিয়ে এগিয়ে গেছে জীবন। আবার জীবনের মধ্যিখানে লাশকাটা ঘরে মন্টুর হদিস পেয়েছে কিংশুক। সেই মন্টু যার কেয়োকার্পিনের গন্ধ আচ্ছন্ন করে রাখতো কিংশুককে। যার চোখ দেখে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করতো কিন্তু কখনো বলতে পারে নি কিংশুক। লেখাও হয়নি মুখস্থ করে রাখা কয়েকটা না বলা কথা। গল্পের শেষ ভাগে কিংশুক ভাঙা মন নিয়ে একখানা গোটা প্রেমপত্র লিখে দিয়েছে পচা কে। ফাটাফাটি হিট হয়েছিল চিঠি টা। অথচ কিংশুকের দুহাত ভরে তখন শুধু টুকরো হয়ে যাওয়া নিজের মন। পাশাপাশি পুজোর নাটকের মহড়া এবং মাধ্যমিক। আসলে আরও অনেক কিছু। সবটুকু লিখে দিলে গল্পের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এইটুকুই থাক। 

যদিও এইটা পাঠ প্রতিক্রিয়া। তবুও কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এখানে উল্লেখ করতে চাই। ছেলের এবার ক্লাস টেন। হঠাৎ করেই বদলে গেছে আমার রোজনামচা। সারাদিন ভয় লাগে এখন। নিজের ছেলেকেই যেন মাঝেমধ্যে কেমন অচেনা লাগে আজকাল। একটা দূরত্ব নদী, যা কখনও খুব সরু আবার কখনও খুব বেশি চওড়া হয়ে বয়ে যাচ্ছে আমাদের মা এবং ছেলের মধ্যিখানে। এই রকম একটা অবস্থায় আমার হাতে আসে কল্লোল লাহিড়ী বাবুর এই উপন্যাস টি। কিংশুকের গল্প বলা আমাকে বেশ আরাম দিতে পেরেছে। যেন বুঝিয়ে বলতে পেরেছে যা ঘটছে তা স্বাভাবিক। 

কল্লোল বাবুর কলমে কি জাদু আছে আমার ঠিক জানা নেই। তবে মানুষের মনের কোন দড়ি তে কখন টান পড়লে মন জুড়ে ভালোলাগার বৃষ্টি হতে পারে সেটা উনি খুব ভালোই বুঝতে পারেন। কোনো দিন দেখা হলে ওনাকেই জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছি কিভাবে সম্ভব হয় এই ম্যাজিক। যদিও কিভাবে ম্যাজিক হয় সেটা শিখে ফেললে, বুঝে ফেললে ম্যাজিক দেখার মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। তবুও জিজ্ঞাসা করবো। 

ইন্দুবালা পড়ে ওনার লেখার প্রেমে পড়ে যাই। সেই থেকেই শুরু। পরপর চলছে। একজন পাঠক হিসাবে শুধু এইটুকুই বলতে চাই। আরও অনেক প্রানবন্ত লেখার অপেক্ষায় থাকবো। অনেক চেনা গল্পের অপেক্ষায় থাকবো। অনেক প্রিয় গল্পের অপেক্ষায় থাকবো। 

নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি- শুধুই উপন্যাস নয়। এটি নব্বই দশকের একটি নস্টালজিয়ার দলিলও। যারা আমার মতোই ভাবছেন পুজোর কয়েকটা দিন বৃষ্টি হলে ঘরে বসেই কাটিয়ে দেবেন তাদের বলবো বইটিকে আপনার কাছেই রাখুন। ছেলেবেলায় ফিরে যান। ভালো লাগবে।

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

রাস্তার শুরু।। জয়া মিত্র।। সুপ্রকাশ।।