সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ

ভিড়টা করোটি পাহাড়ে উঠে এসেছে অনেকক্ষণ। সাব্যাথের আগেই যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে। এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল। সামারিটান সৈন্যরা খুশিমনে তা পালনে ব্যস্ত। ইহুদিদের প্রতি তাদের জন্মগত ঘৃণা। ফরীশী হোক কিংবা সদ্দূকী সম্প্রদায়ের— ধর্মগতভাবে ইহুদি হলেই তাদের প্রতি নিজেদের মনের ভাব সামারিটানরা আর আড়ালে রাখে না। শুরু থেকেই তারা দীর্ঘ দশকের সঞ্চিত ঘৃণা উজাড় করে দিয়েছে নাজরাতীয় জিশুর প্রতি। কাইয়াফাস ঠিক সেরকম নির্দেশই দিয়েছিলেন— অনুরাগীদের সামনে তাদের প্রভুকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার। গায়াস নিজে সেই পাপকার্যে অংশগ্রহণ করেনি, তবে নীরব ছিল। মান্য করার এক সুদীর্ঘ অভ্যাস তাকে চালিত করেছে। কিন্তু এরপর যা হতে চলেছে, তা সহ্য করা অসম্ভব মনে হচ্ছে। ওই তো, একজন সামারিটান সৈন্য এগিয়ে যাচ্ছে ক্রুশবিদ্ধ মানুষটার দিকে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। অপরাধীর পা দুটো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া, যাতে মৃত্যুর আগেও তীক্ষ্ণ যন্ত্রণার অনুভবে অতৃপ্তি না থাকে। খানিক আগে বাকি দুই সাধারণ অপরাধীদের ক্ষেত্রেও একই কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। ক্রুশবিদ্ধকরণের এ এক বহু অভ্যাসজনিত পদ্ধতি। গায়াসের হাতের মুঠো অজান্তেই আরও জোরে চেপে বসল প্রাচীন বর্শার গায়ে। আর ঠিক তখনি সূর্যদেবতা অদৃশ্য হলেন আকাশ থেকে! গায়াসের হৃদয় চুঁইয়ে অন্ধকার জমতে শুরু করল করোটি পাহাড়ে। সমবেত অনুরাগীদের কান্না যেন জাগিয়ে তুলল পৃথিবীকে! কেঁপে উঠল মাটি। জেগে উঠল গায়াসও। অনুগত রোমান সৈনিক, তার দীর্ঘ যোদ্ধাজীবনের ধর্ম ভুলে ছুটে গেল সামনে।

পাশাপাশি তিনটি ক্রুশবিদ্ধ শরীর। দু-জন সাধারণ অপরাধী। মাঝের জন, মাথায় কাঁটার মুকুট এবং মুখে ঐশ্বরিক হাসি নিয়ে এমনকী মৃত্যুকেও সমানে হতাশ করে চলেছে। রোমান সেঞ্চুরিয়ান গায়াস কাসিয়াস তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মুহূর্তের জন্য থমকে গেল সে। ক্রুশবিদ্ধ নাজরাতীয় রাজার ভেঙে পড়া কণ্ঠস্বর তার কানে এল,

'হে ঈশ্বর, এদের তুমি ক্ষমা করো, এরা কী করেছে নিজেরা জানে না।'

বোধহয় এই কথাটুকুই যথেষ্ট ছিল গায়াসের কাছে।

'হে ঈশ্বরের সন্তান, এবার অন্তত তোমার পিতার কাছে যাও!'

মনের মধ্যে কথাগুলো ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দারুণ দক্ষতায় গায়াসের হাতের বর্শা স্পর্শ করল ক্রুশবিদ্ধ শরীরকে। সেই স্পর্শে জন্ম নেওয়া হৃদয়ের ছিদ্রপথে ছুটে বেরিয়ে এল পবিত্র রক্ত। ভিজিয়ে দিল রোমান সেঞ্চুরিয়ানের মুখমণ্ডল। সহসা গায়াসের ধূসর দৃষ্টি কেউ যেন মুছে দিল! সযত্নে। পৃথিবীকে বুঝি অন্ধকারের চাদর দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। চারপাশে এক দুর্ভেদ্য নিস্তব্ধতা। সেই অদম্য অন্ধকারে দৃশ্যমান কেবল গায়াসের হাতে ধরা বর্শাফলক। সোনার হৃদয় ফুঁড়ে দেওয়া ফলকের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে নেমে আসছে সোনালি তরল! তার নেমে আসার পথে বদলে যেতে চলেছে রোমান সেঞ্চুরিয়ান গায়াস কাসিয়াসের পরিচিতি। জন্ম নিতে চলেছে এক অবিস্মরণীয় অলৌকিক শ্রুতিকথা।
...................................
সৌভাগ্যশলাকা
অলোক সান্যাল

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত 

মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা

সুপ্রকাশ প্রকাশিতব্য। আগামী সপ্তাহে আসছে।

Comments

Popular posts from this blog

এক যে ছিল গ্রাম।। অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। সুপ্রকাশ।।

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।