সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

এমাদের প্রথমে উতরাই, তারপর চড়াই ভাঙতে হলো। মিনিট দশ-বারো হাঁটল তারা। আঁটোসাঁটো সুড়ঙ্গপথ একটা প্রশস্ত গুহায় এসে থেমেছে। এখান থেকে পাশাপাশি কতগুলো মুখ নতুন কোনো গন্তব্যের দিকে হাঁটা দিয়েছে হয়তো। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না। মুখগুলো যেন হাঁ করে অন্ধকার বমি করবে বলে মুখিয়ে আছে! দুটো মুখে আবার ইস্পাতের মোটা রড দিয়ে তৈরি দরজা।

'কয়েদখানা! এখানে তার কী প্রয়োজন?'

প্রশ্নটা এমার মগজে আঁচড় কাটল। বোঝাই যাচ্ছে গুহাটার অবস্থান পাহাড়ের ঢালে। একেবারে মাথায় পাথর কেটে নিখুঁত বৃত্তাকার গর্ত তৈরি করা। লম্বাটে সেই গর্ত দিয়ে কোনাকুনি দৃষ্টি আকাশকে ছুঁতে পারে।

এলিন বলল, 'বাইরে আলো মরে আসছে। এত তাড়াতাড়ি!'

'দিনের খুব কম সময়ের জন্য সূর্য উপত্যকার এদিকে পা রাখতে পারে।'

সুড়ঙ্গে প্রবেশের পর থেকে সামিরা প্রায় পুরো রাস্তা নিজের উপস্থিতি জাহির করেনি। দুই ভাইবোনও বিস্ময় এবং রোমাঞ্চের আধিক্যে তার উপস্থিতি ভুলেই বসেছিল। এতক্ষণে বুঝি তাদের মনে পড়ল অভিযানে তৃতীয় একজনও আছে।

'আপনি কি আগেও এই পথ ব্যবহার করেছেন?'

সামিরা এলিনের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল, 'গুহার পাঁচটা মুখ। কোন মুখ নেওয়া উচিত হবে বলুন তো, ড. মিলার?'

এমার চোখও হাত-বাতির স্বল্প আলোয় গুহার ইতিউতি ঢুঁ মারছিল। দু-পা এগিয়ে মাটি থেকে কিছু কুড়িয়ে নিল সে। বাঁ-হাতের আঙুলে ধরা জিনিসটা এলিনেরও পরিচিত। এর নেশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে সে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছাকে আশকারা দিতে ধরায়। সিগারেট। এমার আঙুলে ধরা সিগারেটের ফিল্টার। টাটকা!

'পঞ্চম থেকে অষ্টম শতাব্দের মধ্যে এই বস্তুটির আবিষ্কার হয়নি নিশ্চয়ই, কী বলেন, মিস সামিরা?'

এমার কথা শেষ হওয়ামাত্র দরজাবিহীন গুহার মুখ থেকে জোরালো ফ্ল্যাশলাইট এসে দুই ভাইবোনকে অন্ধ করে দিল।

'সাবধান, এমা!' আলোর ফলা থেকে বোনকে হাত দিয়ে আড়াল করার ফাঁকে চিৎকার করে উঠল এলিন। মুহূর্তের মধ্যে ছিটকে জায়গা বদলে নিল সে। এমাকেও টেনে নিল পাশে। তারা ফাঁদে পড়েছে! বিপদের আভাস পাওয়ামাত্র জ্যাকেটের মধ্যে হাত গুঁজে দিয়েছিল এলিন। উপযুক্ত কারণ খুঁজে না পেলেও প্রতিদিন বুকের কাছে ঝোলা হোলস্টার থেকে সাহস জুগিয়ে গেছে প্রিয় স্প্রিংফিল্ড এক্স ডি পিস্তল। হাতের তালুতে ধাতব স্পর্শ পাওয়ামাত্র তাকে চমকে দিয়ে অস্বাভাবিক স্বরে চেঁচিয়ে উঠল সামিরা, 'সাবধান, এলিন! আমার দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওটা বের করার আগেই আপনার কপালে মৃত্যুর টিকা পরিয়ে দিতে পারি আমি।'

ফ্ল্যাশলাইটের আলো আবার তাদের বেঁধে ফেলেছে। অন্ধকার গুহার গর্ভ ফালাফালা করে দিচ্ছে। সেই আলোতে এলিন নতুন করে সামিরাকে চিনল। থরথর করে কাঁপতে থাকা মুখ। দুটো পা সামান্য ফাঁক করে দাঁড়িয়ে। পেশাদার আক্রমণের ভঙ্গি। ডান হাতটা সোজা। এতটুকু কাঁপছে না। বাদামি রঙের গলাবন্ধ ম্যাকিনটশ কোটের বোতাম এখন ঘর-হারা। গলার কাছটায় একটা ট্যাটু আঁকা। সম্ভবত গোলাপের। হাতের মুঠোয় বিষধর সাপের মতো ছোবল মারতে প্রস্তুত সিগ সাওয়ার পি২২৬। এলিন ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়াল। এমার হাতের মুঠো তার বাইসেপসকে কামড়ে ধরেছে। বাঁ-হাত দিয়ে বোনকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিল সে।



সৌভাগ্যশলাকা
অলোক সান্যাল

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত 

মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা

সুপ্রকাশ 
      
     

Comments

Popular posts from this blog

এক যে ছিল গ্রাম।। অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। সুপ্রকাশ।।

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।