নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।। প্রবাসে দুর্দৈবের বশে : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ
বঙ্কিমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রা-সংক্রান্ত একটি বইয়ের আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন :
‘কিছুদিন হইল বাঙ্গালার যাত্রা নামে একখানি ক্ষুদ্র গ্রন্থ আমরা পাইয়াছিলাম। গ্রন্থখানি বিলাতে বসিয়া বিলাতি ভাষায় লিখিত হয় এবং বিলাতেই তাহা মুদ্রিত হইয়াছে। মূল্য দুই সিলিং। লেখক বাঙ্গালি আমাদের সুপ্রসিদ্ধ নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়। আমরা সেজন্য বিশেষ আহ্লাদ পূর্ব্বক ইহা পাঠ করিয়াছি।’ (যাত্রার ইতিবৃত্ত :১২৮৯)
বাংলার যাত্রা-বিষয়ে এই ধরনের গ্রন্থ আলোচনার সম্পূর্ণ অধিকার সঞ্জীবচন্দ্রের ছিল। কেননা ইতোপূর্বেই তিনি বঙ্গদর্শন ও ভ্রমর পত্রিকার পাতায় বাংলার যাত্রা নিয়ে তিনখানি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধগুলি নিয়ে তাঁর ‘যাত্রা সমালোচনা’ (১৮৭৫) নামে একটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। সে-নিয়ে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আমরা বিস্তারিত হতেই পারি। কিন্তু গ্রন্থ-সমালোচনামূলক এই রচনায় সঞ্জীবচন্দ্র আলোচ্য গ্রন্থটি নিয়ে ‘ইদানিং ঢাকা অঞ্চলে ‘স্বপ্নবিলাস’ প্রভৃতি তিনখানি যাত্রা রচিত হয়েছে। তথাকার বিস্তর লোক এই যাত্রার পক্ষপাতী। নিশিকান্তবাবু সেই যাত্রা উপলক্ষ করিয়া এই গ্রন্থ লিখিয়াছেন’–ইত্যাকার ধর্্তাইটুকু ব্যতিরেকে নিশিকান্তের রচনার তেমন কোনো আলোচনা করেননি। তিনি জানিয়েছেন যে, নিশিকান্তের গ্রন্থের নামটি পড়ে ‘মনে করিয়াছিলাম বাঙ্গালার সাধারণ যাত্রার কথা এই গ্রন্থে আছে’। কিন্তু গ্রন্থটি ‘আহ্লাদ পূর্ব্বক পাঠ’ করতে গিয়ে তাঁর সেই প্রত্যাশা পূরণ না-হওয়ায় গ্রন্থালোচনার পরিবর্তে নিজেই বাংলার ‘সাধারণ যাত্রার’ বিষয়ে আলোচনা অগ্রসর হয়েছিলেন। অথচ বিদ্যাচর্চার বৈশ্বিক ক্ষেত্রে নিশিকান্তের গ্রন্থটির ভূমিকা, গ্রন্থটি রচনার রোমহর্ষক ইতিবৃত্ত, বাঙালির মানস-ইতিহাসের মাইল ফলক হিসেবে লেখক নিশিকান্ত ও তাঁর গ্রন্থটি যে গুরুত্ব দাবি করতে পারে সঞ্জীবচন্দ্র তা উপলব্ধি করতে পারেননি। সম্ভবত এই কারণেই নিশিকান্তের গ্রন্থের প্রকৃত নামটিও তাঁর রচনায় অনুল্লেখিত রয়ে যায়। গ্রন্থ-লেখক সম্পর্কে ‘আমাদের সুপ্রসিদ্ধ নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়’-এর মতো বাক্যবন্ধ ব্যবহার করলেও সম্ভবত সেকালে নিশিকান্ত অতিমাত্রায় সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন বলেই লেখকের বিশেষায়িত পরিচয় দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন মনে করেননি সঞ্জীবচন্দ্র। এই জাতীয় রচনার ক্ষেত্রে উত্তরকালের পাঠকের কাছে আলোচকের যে দায় থাকে তা-ও সঞ্জীবচন্দ্র মনে রাখেননি।
এমন শৈথিল্য, নিশিকান্তের জীবনে বার বারই জুটেছে। নিশিকান্তের বাংলার যাত্রা-বিষয়ক গ্রন্থটির পরিচয় গ্রহণের আগে এই সূত্র-উপাদানবিরল এবং স্বল্পালোচিত মানুষটির জীবনকথার পুনর্নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।
.............................................
প্রবাসে দুর্দৈবের বশে : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়
অনন্ত জানা
...............................................
নির্মুখোশ শারদ ১৪৩২
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা
আসছে.....
Comments
Post a Comment