Posts

Showing posts from October, 2025

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
কাজ করতাম ‘নবম দশম’ পত্রিকায়। কিন্তু, সিনেমাপাড়ার খবর লিখতাম অন্য কাগজে বেনামে। মাঝেমধ্যে  ‘পরিবর্তন’-এও লিখতাম। তা ছাড়া, সিনেমাপাড়ায় যাতায়াত ছিল অনেকদিন ধরেই। ফলে, একটা টান ছিলই। অফিস ছুটির পর প্রায়ই চলে যেতাম সিনেমাপাড়ায়। কোনোদিন সমীরণ থাকত, নাহলে আমি আর অরুণদা। কখনো একাই চলে যেতাম। আর, স্টুডিয়োতে ঢোকা এত কড়াকড়ি ছিল না। ইচ্ছেমতো যাতায়াত করা যেত। অনেকের সঙ্গেই চেনা-জানা হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুত্ব হয়েছিল কারো কারো সঙ্গে। তাঁরা ছিলেন সিনেমার নেপথ্যের কারিগর। দু-চারজন পরিচালক আর শিল্পীর সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কৃষ্ণনগর থেকে অমল শূরের সঙ্গে আলাপ। পরে ঘনিষ্ঠতা। অমলদা যখন ‘রসময়ীর রসিকতা’ করেছিলেন, তখন দু-চারদিন শুটিং-এও ছিলাম। সম্পাদনার কাজ যখন চলছিল, তখন সেখানে কাজ দেখার জন্য থাকতে দিয়েছিলেন। অনেক কারিগরি বিষয় শিখেছিলাম তাঁর কাছ থেকে। অমলদা বলতেন, সিনেমার খুঁটিনাটি না-জানলে ভালো সমালোচক হওয়া যায় না। তা, সেই সান পাবলিসিটির দৌলতে একদিন রায়বাবুর বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায় হাতেখড়ি দিলেন ‘ফটিকচাঁদ’ ছবি করে। ছেলের পরিচালনায় প্রথম ছবি। বাবা সত্যজিৎ পেছন থেকে মদত দিয়ে যাচ...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলেছি। পাত্রবাজারের মধ্যে দিয়ে। তখনই দেখি মজনু এগিয়ে  আসছেন তাঁর স্বভাব-ভঙ্গিমায়। ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত, চোখে চশমা, বাবরি চুল, কপালের ওপরের চুল সরে গিয়েছে অনেকখানি। কাঁধে কাপড়ের ঝোলা। হাঁটছেন, তিনি হাঁটছেন। শহরের রাজপথ মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন কবি মজনু মোস্তাফা। ওই ঝোলায় হাত দিলে নিশ্চয় পাওয়া যাবে তাঁর কবিতার ডায়েরি। মজনু নামটা ষাট, সত্তর, আশির দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত শহরকে আলোড়িত করেছিল। কবিতায় ছিল সরলতা। আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করতে ভালোবাসতেন। পেশায় ছিলেন ইংরেজির শিক্ষক। নেশায় কবি। আরেকটা নেশাও ছিল। রাত একটু বাড়লে অথবা না-বাড়লে তিনি আসবাসক্ত হতেন। তখন তিনি উদ্দাম। বয়সের শিকল খুলে ছুড়ে ফেলে দিতেন শহরের পথে। বুকের ভেতর জমে থাকা সমস্ত অভিমান ক্রন্দন হয়ে ছড়িয়ে পড়ত। বামপন্থায় ছিল বিশ্বাস, আবার বামপন্থার তীব্র সমালোচকও বটে। শহরের এক এক মানুষের কাছে তাঁর এক এক গল্প। তাঁর পৃথিবী ত্যাগের চল্লিশ বছর পরেও তিনি একইরকম সজীব শহরের বৃত্তে। একটু উসকে দিলেই শোনা যাবে তাঁর কাণ্ডকারখানা। জাত বোহেমিয়ান। আমি বলি, উড়নচণ্ডী। তিনি বলতেন, রাঁবো ছিল তার প্রিয়। রাঁবোর মতোই তিনি উদ্দাম। ভণিতা...

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'প্রতিযাত্রা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন ফারজানা রহমান। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................................................ বই : প্রতিযাত্রা লেখক : দুর্লভ সূত্রধর প্রকাশক : সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০ টাকা   বিনয় মুখোপাধ্যায় (যাযাবর) তার দৃষ্টিপাত বইয়ে লিখেছিলেন, "ডিসেম্বরের সাঁইত্রিশ ডিগ্রির শীতে গালে ঠান্ডা জল দেবার চাইতে চড় দেয়া ভালো"। দুর্লভ সূত্রধরের "আহাম্মকের খুদকুড়ো" এবং "অনন্যবর্তী" এর ম্যাজিকে মোহাচ্ছন্ন হয়ে যখনই "প্রতিযাত্রা" ধরবেন, তখনই অনুভব করবেন সেই ঠান্ডা চড়! দুর্লভ সুত্রধর তার "প্রতিযাত্রা" দিয়ে শুরুতেই পাঠককে একটা পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেন। প্রতিযাত্রার সবচেয়ে উজ্জ্বল চিহ্ন তার ভাষার স্বকীয়তা। পাঠক তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন; অনুভব করবেন। এহেন ভাষার স্বকীয়তা এবং পাশাপাশি উপমা-রূপকে সজ্জিত মায়াজাল পাঠককে চাবুকের মতো আঘাত করবে। কারন পূর্ববর্তী দুটো বই পাঠ শেষে খুব স্বাভাবিকভাবেই পাঠক একটু আয়েশ...

টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত কৌশিক ঘোষের বই 'টুক্কা’ পড়ে মতামত জানিয়েছেন কৌশিক বাজারী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ........................................................................... সেইসব দিনের কথা,  যা আবার একদিন ফিরে আসবে বলে আমাদের মতো মানুষ অপেক্ষায় বসে থাকে। আমাদের মতো, মানে আমরা যারা পঞ্চাশ পেরোচ্ছি। সেই অতি ধীর সকাল, শান্ত দুপুর, আর হলুদ বিকালের দিন। যখন কাচের গুলি-মার্বেল পকেটে  নিয়ে কেউ রাজা কেউ ফকির। সেই পুচিল, সেই প্রিয় টল মার্বেল যা দিয়ে টুক্কা মারা হবে। সেই জলসার রাত, যখন রফি আর লতাকন্ঠী দুজনেই পুরুষ মানুষ,  আর আমরা হতবাক হয়ে দেখতাম একটা গাল বসে যাওয়া খোঁচা দাড়ির লোক কোঁচকানো  পাঞ্জাবী গায়ে মাইক হাতে দুলে দুলে গাইছে— সিসা হো ইয়া দিল টুট যাতা হ্যায়… একদম হুবহু লতা! আরেকজন লম্বা মতো ফর্সা লোক গাইছে— আ যা তুঝকো পুকারে মেরে গীত… দর্শক হৈহৈ করে উঠছে পিছন থেকে… আর?  আর ধীরে ধীরে দিন বদলে যাচ্ছে, গল্পের চরিত্র (আসলে গল্প নয়) নিমাই পাত্র হেরে যাচ্ছে। সাবোতাজ হচ্ছে দলের মধ্যেই। ৮৯ এ বার্লিন প্রাচীর ভেঙে গেল, সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েতে...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
আমাদের তখন হাফপ্যান্টের বয়স। সেইসময় পুরো স্কুলজীবনটাই হাফপ্যান্টে কেটে যেত। কলেজে ঢুকলে ফুল প্যান্ট পরার অধিকার জন্মাত। তা সেই বয়সে, আমরা তখন নবম শ্রেণি। তখনই কালু চলে গেল। বীভৎসভাবে। তখনও মৃত্যু সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। বাংলার নবাবি আমলের সূর্য অস্ত গেল যে পলাশির যুদ্ধে, বহু বছর পর্যন্ত তার স্মৃতি ছড়িয়ে ছিল যে গ্রামে এবং এখনও একটি স্মৃতিস্তম্ভ বিরাজ করছে, সেই বিস্তৃত পলাশির এক অংশে চিনির কারখানা। সেই কারখানার সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে কর্মীদের আবাসন। এসবই কারখানার মালিকের। আছে হাসপাতাল, সমবায় দোকান এবং কারখানার মালিকের পৃষ্ঠপোষকতায় একটা হাইস্কুল। সেই স্কুল অবশ্য সরকারপোষিত এবং আজও দীপ্যমান। পলাশি সুগার মিল কলোনি নামে সন্নিকটস্থ গ্রামের মানুষের কাছে পরিচিত হলেও, আসলে সে ছিল এক উপনগরী। সেই উপনগরীর একদিকে সমবায়িকার পাশেই তাদের দুই কুঠুরি আবাসন। চলতি কথায় কোয়ার্টার। পড়ত পলাশি হাইস্কুলে। আমাদের সহপাঠী। একসঙ্গে খেলাধুলো, একসঙ্গে ইস্কুল। রবীন্দ্রজয়ন্তী কি স্বাধীনতা দিবস— সবখানেই কালু আছে সঙ্গে। তা, সেই কালুও চলে গেল। সে গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের শেষদিকের ঘটনা। বাংলা জুড়ে খাদ্য আন্দোলন হয়ে গে...

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের বই 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' পড়ে মতামত জানিয়েছেন মৈনাক সরকার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................ #পাঠ_অনুভূতি        দুর্লভ সূত্রধর বাবুর লেখা 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এক টাইম মেশিনে চেপে নিজের অতীত জীবনে পৌঁছে গিয়েছি, তারপর ফেলে আসা জীবনের প্রতিটা ধাপ যেন আবার নিজের চোখে ঘটতে দেখছি। এই বই যেন এক দর্পণ। আসলে বিংশ শতাব্দীর পূর্বে জন্মানো ছেলেপুলেদের ছোটবেলায় মুঠো ফোনের বাড়াবাড়ি বা অভিশাপ ছিল না, তাই মা ও প্রকৃতির আঁচলের ছায়ায় বেড়ে ওঠার গল্পগুলো, তাদের ছেলেবেলা, স্কুলজীবন, কৈশোর পার করার গল্প গুলো কমবেশি প্রায় একই রকম। লেখক নিজেকে যেরকম আহাম্মক মনে করেছেন, সে সময় সেই রকম আহাম্মকের সংখ্যা আসলেই অনেক বেশি ছিল। বইটির প্রথম পৃষ্ঠা থেকে হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করে হাঁটতে হাঁটতে কখন যেন বড় হয়ে শেষ পৃষ্ঠায় চলে এলাম অথচ ঘোর সেই বইয়ের মধ্যেই রয়ে গেল।       বইয়ের পৃষ্ঠা এবং ছাপার কোয়ালিটি অত্যন্ত ভালো। আর প্রচ্ছদটিও আলাদাভাব...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ

Image
আলবার্তো মোরাভিয়া ‘আমার দেখা ভারত’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘নৌকো পৌঁছোলো ঘাটে, একটি লরি, একটি কি দুটি গো-যান, কয়েকটি পরিবার, কয়েকজন ভবঘুরে উঠলো নৌকোর উপর। যেন যা এলো তাই গেল ফিরে, পারাপারের প্রয়োজনটাই যেন ফালতু হয়ে যায়।’ (বঙ্গান্তর : ফাদার দ্যতিয়েন) এই নৌকাই তো সেই জীবন-নৌকা, যা ভবঘুরের মতো উড়নচণ্ডী জীবনকে এপার-ওপার করে, ঘাটে ঘাটে ভিড়িয়ে দেয়। আসলে, জীবনটাই তো জীবন-ছুট। এ জীবন মেলে তো ও জীবন মেলে না। জীবনে জীবনে যোগ করার কত কথাই তো শুনি। কিন্তু, সত্যি হয় কি? বোধ হয় না। আর, হয় না বলেই চিরকাল উড়নচণ্ডী হয়ে ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়ালাম। এই ঘুরে বেড়ানো বা উড়ে বেড়ানোর বয়সও তো কম হল না। সেই সকাল থেকে বিকেলের দিকে গড়াচ্ছিল যখন বয়স, তখনই বাবা বলেছিল, উড়নচণ্ডীর মতো ঘুরে বেড়ালে চলবে? একটা কাজকামের চেষ্টা করো। চেষ্টা ছিল না এমন নয়, সকলেরই যেমন চেষ্টা থাকে, সেই জৈবিক চেষ্টা হয়তো ছিল, কিন্তু জীবনটাকে এতোল-বেতোল করে দিতেই আনন্দ ছিল ঢের। কিন্তু, সুয্যি মাঝমাঠ থেকে পেনাল্টির দিকে বল গড়িয়ে দেবার আগেই ঘাটের মাঝি নৌকাটাকে বেঁধে ফেলল খুঁটিতে। পায়ে পড়ল ভদ্দরলোকের বেড়ি। কিন্তু, মন যেখানে রাখাল রাজা, সেখানে বেঁধে রাখে কা...

নৈশ অপেরা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের বই 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন কুর্চি সুমনা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ....................................................... ঝাড়খণ্ড রাজ্যের একটি ছোট টাউন। একসময় মিনি ইংল্যান্ড হিসেবে পরিচিত ছিল এই শহরটি। কিন্তু সময়ের স্রোতে শহরটি হারিয়েছে এর বিদেশি জৌলুস। টাউনটি এখন মৃ ত গঞ্জ যেখানে বাস করে মাত্র কয়েকটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার আর সেই অঞ্চলের কিছু আদিবাসী মানুষ। শোনা যায়, এই গঞ্জে যারা বাস করেন, তার মধ্যে অনেক মানুষই মৃ ত। যেন তারা বেঁচে থাকে ছায়ায়। জীবিত ও মৃ তদের না কী আলাদা করা যায় না। এর মধ্যে গঞ্জে লুকিয়ে থাকা কাঠ মাফিয়াদের নিয়ে খবর করতে আসেন ক্রাইম রিপোর্টার তনয়া ভট্টাচার্য ( "শেষ মৃ ত পাখি"তে উল্লিখিত সাংবাদিক)। তনয়া থাকতে শুরু করেন গঞ্জের জঙ্গলের ভেতর চার্চের পাশে ডেভিড ব্রাউনের স্যাংচুয়ারি হোমস্টেতে যার এখন মালকিন ডেভিড কন্যা বারবারা। এই বাড়ি থেকে বহু বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল বারবার ভাই এডওয়ার্ডের দুই বছরের শিশু ক্রিস, যদিও ক্রিসকে সেই বাড়ির জলাভূমির কাছে এখনও প্রায়ই দেখা যায়। ...