টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ
"ইমলির বীজ দিয়ে প্রথমে তারিক বাকিদের সঙ্গে গুলির প্র্যাকটিস করত। এভাবেই শুরু করে সবাই। তিতু ছিল তার সতীর্থ। গুলির অভাব তার একান্তই ছিল। কিন্তু, গুলির প্রাথমিক ব্যবস্থা তিতুই করে। টুক্কার ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তারিক ওস্তাদ হয়ে ওঠে। তিতু তাকে গুলি ধার দিয়েছিল। সে তিতুর গুলি দ্বিগুণ তিনগুণ, ধীরে ধীরে বহুগুণ করে তোলে। তারপরে তারা গুলির রঙিন স্ফটিকসাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়ে যায়। গুলির অভাব থেকে অঢেল প্রাচুর্য একসময় রাস্তাও বাতলে দেয়। একদিন সদরঘাটের বাপির সঙ্গেই গোপনে লেনদেন শুরু করে তারিক। দশ পয়সায় চারটে থেকে পাঁচটায় রফা হয়। বাপি নিজের দোকানে দশ পয়সায় দুটো বেচে। এভাবে আপাতত পাঁচটাকা বারোয়ানার মালিক আজ তারিক। কিন্তু টাকা বাড়তে চায় না। খিদের সঙ্গে লড়াই যুঝতে পারে না টুক্কার অনিয়মিত অর্জন। খিদে। যখন তখন খিদে পায়। তার খিদে। ভাইয়ের খিদে। বোনের খিদে। তার বাপের অধিক আয় উড়ে যায় রক্ষিতার জন্য। তাছাড়া গুলির আসর কমই বসছে আজকাল। তিতু-তারিক যুগলকে দেখলে মহল্লার নাবালকেরা খেলার আসর ছেড়ে দেয়। কিংবা, গোপনে আসর জমায়।
তার বাপ মকবুল হেড-রাজমিস্ত্রি। তারিককে মাঝেমধ্যে জোরজার করে ডাকে কাজে। লেবার খাটার কাজে তারিক গেলে ঘরের টাকা ঘরেই থাকে, সে যতই আনকোরা লেবার হোক না কেন। কিন্তু, এতে তারিকের ফায়দা কোথায়? সে দুপুরের খাবারটুকু পায়। তার পেমেন্ট তো তার বাপই মেরে দেয়। গজগজ করে মকবুল, তার কাজে অনীহা দেখে। অথচ, সে আঠারো বিশ বছর বয়সী লেবারের ইঁট বওয়ার কাজ বিন-আয়াসে করে দেয়। সহজেই উঠে যায় ভারা বয়ে। এমনকী সিমেন্টের মশলা সে কোদালে অবলীলায় মেশায়। মিস্ত্রির খুনে বয় মিস্ত্রির খুন। মকবুল বলে। মকবুলের বাপও রাজমিস্ত্রিই ছিল।
টাকা চাই তার। অন্তত কিছুটা, সাময়িক। টাকাই অওকাত। ভটভটিতে চাংকি পান্ডে হয়ে স্টার্ট দেওয়ার অওকাত। শামসের মিঞার বাড়ির শানবাঁধানো লাল সিঁড়িতে ওঠার আত্মবিশ্বাসী অওকাত।
ব্রিজের ওপাশে রিক্সাওয়ালাদের, পয়সা দিয়ে গুলির আদলে, জুয়ার আসর বসে। মার্বেলের জায়গায় কয়েন। সিকি, আধুলিতে আসর জমে। তিতুকে সে বলে, ওখানে খেলতে চায়। অনেকটা আয়ের সুযোগ। তিতু না করে। বলে, হারাম ওসব, পাপ। পাড়ার বয়োবৃদ্ধরা বলে, জুয়া হারাম। তারিক পাল্টা বলে, তাদের গুলির অর্জিত পয়সাও তাহলে হারাম। তিতু তার কথা মানতে চায় না।
তারিকের পয়সা দরকার। এক লপতে কিছু টাকা, যা তাকে সামান্য অওকাত এনে দেবে।"
.
.
.
টুক্কা
কৌশিক ঘোষ
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
মুদ্রিত মূল্য : ২৯০ টাকা
সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment