একটি শিশির বিন্দু (বাটানগর - বজবজ অঞ্চলের ছুঁয়ে থাকা গল্প - কথা - রাজনীতি - ইতিহাস)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শুভদীপ চক্রবর্ত্তীর অঞ্চলচর্চা গ্রন্থমালার বই ' একটি শিশির বিন্দু ' পড়ে ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন দিশা ( Bhootu Bhootu )। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
.................................

একটি শিশির বিন্দু
(বাটানগর - বজবজ অঞ্চলের ছুঁয়ে থাকা গল্প - কথা - রাজনীতি - ইতিহাস)

লেখক ~ শুভদীপ চক্রবর্তী

পার্সোনাল রেটিং ~ 5

নিজের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের নাড়ি নক্ষত্র জানার অভ্যাস আমার সেই ছেলেবেলা থেকে। একবার যে জায়গায় বসবাস শুরু করি সেই জায়গার প্রতিটা অংশ যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার মুখস্ত হয়ে যাচ্ছে ততক্ষন ঠিক যেন শান্তি পাই না। আর একবার যদি জায়গাটাকে ভালোবেসে ফেলি তাহলে তার বর্তমানের সাথে সাথে ইতিহাস জানার আগ্রহ সমানে বেড়ে যায়। ছোটবেলায় ঠাকুমা, ভালোমাকে জ্বালাতাম নিজের বাড়ির, গ্রামের গল্প শোনার জন্য, কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বাড়ি পাল্টেছে বেশ কয়েকবার, এখন তাই সব ভরসা বই আর চোখের উপর। মাঝে মাঝে তাই হাঁটতে বের হলে সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলি একটা ভাঙা দেওয়াল থেকে শুরু করে গঙ্গার ঘাট ও কত শত গল্প বলে শুধু পড়তে পারলেই হলো। তাই একদিন ফেসবুক থেকে যখন এই বইটার খোঁজ পেলাম কয়েকদিনের মধ্যেই কলেজস্ট্রিট থেকে গিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। যে জায়গার উপর দিয়ে হাঁটছি, ঘুরছি, ট্রেনে করে কলেজ যাচ্ছি রোজ, ঘুমাচ্ছি, নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছি সেই একই জায়গার উপর দিয়ে এককালে কত শত ইতিহাস বয়ে গেছে, কত বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, কত স্বপ্ন সত্যি হতে হতেও হয়নি সেসব পড়লে কেমন একটা গায়ে কাঁটা দেয়। দুদিন আগেই পড়ে শেষ করেছি কিন্তু কিভাবে ঠিক রিভিউ লেখা যায় সেটা বুঝতে পারছিলাম না তাই রিভিউ না লিখে পাঠ প্রতিক্রিয়ায় লিখলাম। তিনবছর আগে তাই যখন কলেজের জন্য কলকাতায় থাকার প্রয়োজন পরলো আমি শহর ছেড়ে এই শান্ত মফস্বলকেই বেছে নিয়েছিলাম। এই তিনবছরে বাটানগর কখন আমার বাড়ি হয়ে উঠেছে বুঝতে পারিনি। ফেসবুকে বইটা প্রথম দেখি, পরে কলেজস্ট্রিটে গিয়ে দু এক পাতা উল্টে আর লোভ সামলাতে পারিনি আমার চেনা জায়গাটিকে আরো একটু বেশি চিনতে পারার। নুঙ্গি স্টেশনের কৃষ্ণচূড়া গাছটা আমারও খুব প্রিয়, বাটা কম্পানির সাইরেনের মত ভালো এলার্ম ঘড়ি আমি জীবনে দুটো পাইনি। মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে বসে ভাবি সারাজীবন এইখানে থেকে যেতে আমার আর কোনো আপত্তি নেই। জানিনা ভবিষ্যতে কী হবে তবে বাটা ছাড়লেও আমি এই বইটা সারা জীবন সাথে নিয়ে ঘুরবো। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এই আপাদমস্তক শান্ত অথচ মায়া আর ইতিহাস দিয়ে ভরা মফস্বলটাকে নিয়ে লেখার জন্য।



Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

এক যে ছিল গ্রাম। বাগাল গুরুর পাঠশালা