সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ
মানববর্জ্য এবং আবর্জনায় ভরে রয়েছে সংকীর্ণ গলিপথ। তাঁর নিজের নৈতিকতা-বিবর্জিত, উৎকোচে ভরা এবং অজস্র অযোগ্য বিচারে কলুষিত জীবনের মতোই দুর্গন্ধময় পথটুকু পিলেত নিঃসংকোচে পার করলেন। শহরের দুই প্রধান রাস্তার সংযোগকারী সংকীর্ণ গলির অপরপ্রান্তে পৌঁছে বিদ্রোহী ফুসফুসকে শান্ত হতে কিছুটা সময় দিলেন তিনি। উদ্বিগ্ন দৃষ্টি মেলে জরিপ করে নিলেন এ প্রান্তের পরিবেশ। স্বাভাবিক। কয়েক পা দূরে রাস্তার পাশে পরপর কয়েকটা দোকান। এক বৃদ্ধা সম্ভবত তাঁর বংশজকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত। ব্রোঞ্জের তৈরি একটা ছোট্ট ঘোড়া নিয়ে দোকানির সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। স্বস্তির শ্বাস নিলেন বর্তমানে রোমের সবচেয়ে চর্চিত মানুষটি।
'তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো।' সন্ত্রস্ত ভৃত্যদের নির্দেশ দিয়ে পিলেত গলিমুখ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। তারপর ক্লান্ত পায়ে দরদামে নাছোড় দোকানির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সম্ভ্রান্ত পোশাকে উঁচুদরের ক্রেতা ভেবে দোকানি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল।
'আমি কি এখানে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে পারি?' ভেঙে পড়া স্বরে অনুরোধ জানালেন এক সময়ের আদেশকারী জুডেয়ার প্রশাসনিক প্রধান। দোকানিকে প্রথমে হতাশ দেখাল। কয়েক মুহূর্ত সে নিষ্পলকে চেয়ে রইল মুনাফার মোটা দাঁও ভেবে বসা সম্ভ্রান্ত পোশাকের মানুষটির দিকে। তারপরেই প্রবল উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল, 'পিলেত! জুডেয়ার পয়েন্টাস পিলেত! তাহলে খবরটা মিথ্যে নয়!'
যে বৃদ্ধা এতক্ষণ ধরে সাজিয়ে রাখা পসরা থেকে সঙ্গের শিশুটির নতুন পছন্দ খোঁজায় ব্যস্ত ছিলেন, দোকানির আচমকা চিৎকারে চমকে উঠলেন। আতঙ্কিত নজরে ধূসর চুলের বৃদ্ধ পিলেতকে আপাদমস্তক মেপে পাশের অত্যুৎসাহী শিশুকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর যেন ভয়ংকর কোনো জান্তব শক্তি তাঁকে তাড়া করেছে এমনভাবে ছুটতে শুরু করলেন। একইসঙ্গে পয়েন্টাস পিলেতের নাম ঘৃণাভরে দু-পাশে ছড়িয়ে দিতে ভুললেন না।
'হা ঈশ্বর!' হাহাকারের মতো শোনাল পিলেতের কণ্ঠস্বর। 'নিশ্চিতভাবে পৃথিবীর সমস্ত ইহুদিদের কাছে আমি নরপিশাচ! সকলের কাছে অস্পৃশ্য।'
.........................................
সৌভাগ্যশলাকা
অলোক সান্যাল
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত 
মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা
সুপ্রকাশ প্রকাশিতব্য। 
Comments
Post a Comment