Posts

Showing posts from September, 2024

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
রতিকান্তর জীবন রাত্রির কাছে আশ্চর্য ঋণী হয়ে আছে। রাত যেন তার কাছে অদ্ভুত মায়া নিয়ে হাজির হয়। রতিকান্ত বলে মায়া চাদর। সেই মায়া চাদর গায়ে দিয়ে সে জীবনের সমস্ত তিমিরহননে প্রয়াসী হয়। পরিকল্পনা করে। সে জানে অন্ধকারই আসলে তাকে হাত ধরে আলোর দরজার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করায়। তারপরে আলতো স্পর্শে খুলে যায় দরজা। দরজায় দাঁড়িয়ে রতিকান্ত অপেক্ষা করে। বাইরে কাক ডেকে উঠল কোথাও। কাক ডাকার শব্দে বড় অস্বস্তি হয় রতিকান্তর। অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেছে আর মাথার ভিতরে একরাশ চিন্তা, একরাশ মাকড়শা অজস্র পায়ের দাপটে হেঁটে বেড়িয়েছে। ফলে ঘুম না আসা অবশ্যম্ভাবী। তবু একটা মিহি তন্দ্রার আবেশ সবে তাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে তখনই কাক ডাকল। মনে হলো ভীত-সন্ত্রস্ত কাক মৃত্যুযন্ত্রণার মতো হিমডাকে স্তব্ধ অন্ধকারকে ফালা ফালা করে দিচ্ছে। রতিকান্ত সত্বর বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়িটির কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। বাগানে নতুন কিছু গাছ বসানো হয়েছে। নতুন এক মালি রেখেছে সে। বাইরে বেরিয়ে দেখল নিকষ অন্ধকার। সে বাগানে নেমে এসে মাথার উপরে আকাশের দিকে তাকায়। কোথাও কোনও আলোর চিহ্নমাত্র নেই। সে বুঝতে পারল সারা আকাশ গভীর কালো মেঘে ঢেকে আছে। এক তুমুল ...

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
উঠোন থেকে দোতলার বারান্দায় উঠে এল বিন্ধ্যবাসিনী। আজকাল একটানা সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে আসতে হাঁপ ধরে যায়। খাড়া খাড়া ধাপ। পুরোনো বাড়ি। তবে ঢের মজবুত। বারান্দায় বেতের আরাম চেয়ারে বসে একটু দম নিয়ে নিল সে। সামনে ফিটফাট আকাশ। একেবারে ছবির মতো নীল। তবে এককোণে পাকা করমচার মতো রঙ ধরেছে। বিকেল নামছে। বিন্ধ্যবাসিনী সোজা হয়ে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। ষাটের চৌকাঠ পার করেও এখনও তার শরীর টানটান। গড়পড়তা বাঙালি মহিলাদের তুলনায় বেশ লম্বা। তাই হয়ত তাকে একটু দুবলা লাগে। তীক্ষ্ণ চোখ, টিকালো নাক। মাথায় অঢেল চুল এখনও, যেন কবেকার অন্ধকার নিশা। শুধু কালো চুলের মাঝে মাঝে দু’একটা রুপালি রেখা টেনে দিয়েছে বুড়ো বয়েস।  বিকেলে বসে বসে সে শুধু ভাবে। কী ভাবে! ভাবনার কি কোনও হিসেব আছে? আকাশ পাতাল আছে? এই যে বাড়িটা? কোন এক যুবতী বয়েসের উপার্জন। হ্যাঁ, উপার্জন কথাটাই ঠিক ঠিক মানায়। বাকি সব বিচ্ছিন্ন হেঁয়ালি ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা আগাছার লৌকিকতা। তবে জমিদার বাড়ির বউ— এমন তকমাও আদতে মিছে কথা নয় যদিও। বউ ও বউয়ের সীমানার কাছে চৌকাঠ অবধি তো সত্যি। যে যুবতীরর চানঘরে পরপুরুষ! পরপুরুষ কথাটা ভাবলেই আবার থমকে যায় বিন্ধ্যবাস...

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
শ্রাবণের মাঝামাঝি। তবু বাংলার বুকে বর্ষার আগমনের পদশব্দ শোনা যাচ্ছে না। গত দুই বছর বর্ষণ হয়নি তেমন। শুখা গিয়েছে। ফলে ধানের ফলন হয়নি একেবারে। মানুষ আশঙ্কা করতে শুরু করেছে, ওড়িশার দিক থেকে আকাল এবার বাংলার দিকে সরে আসতে চাইছে। দুই বছরের অনাবৃষ্টিতে সম্পন্ন চাষির ঘরেও ধানের মজুত তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গরীব মানুষের অবস্থা তথৈবচ। যারা পারছে ঘরবাড়ি ছেড়ে নগর কলিকাতার দিকে যাত্রা করছে। তাদের ধারণা নগরে বুঝি ঢের সম্পদ, ঢের বৈভব— সেই বৈভবের ছিটেফোঁটা যদি ছিটকে এসে তাদের ক্ষুধার্ত মুখের সামনে পড়ে, তবে তারা বেঁচে যাবে। কিন্তু সে আশা মরুভূমিতে মরূদ্যানের দেখা পাবার মতো। রতিকান্ত বার দুই কলিকাতা ঘুরে এসে দেখেছে মেদিনীপুর, হুগলির গ্রাম থেকে পেটের টানে আসা মানুষদের ঠাঁই হয়েছে নগর কলিকাতার এঁদো অলিতে-গলিতে। কলিকাতা তাদের গ্রহণ করেনি। এহেন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেও রতিকান্ত ভাবে তাকে কলিকাতা যেতে হবে। চাঁদ বণিকের মতো তাকে একদিন ভিনদেশি হয়েও কলিকাতা বন্দরে পদার্পণ করতে হবে। সপ্তগ্রাম বন্দরে গঙ্গার জলের কিনারায় বসে ক্রমশ ঘনায়মান অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে আওড়াল,   ছয় পুত্র লয়ে চান্দ শীঘ্রগতি চলে...

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
সিপাহী বিদ্রোহের পরবর্তী কালের কলকাতা। বাংলার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষত কলকাতার বাঙালি-জীবনে চমকপ্রদ রূপান্তর ঘটে যাচ্ছে। কতিপয় বাঙালি চাইছে ফিরিঙ্গি বণিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাণিজ্য করতে। প্রাচীন এক মঙ্গলকাব্যের চরিত্র চাঁদ বেনে যেন বদলে দিতে চাইছে ছোট্ট রতিকান্তর জীবন। ‘খণ্ডপ্রহর’ আখ্যানের আবর্তে আছে রতিকান্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষা—তার শৈশবের প্রেম—তার উত্থান—পাপ-পুণ্য আর আশ্চর্য সময়ের কুহেলি।  সমান্তরাল আর এক আখ্যানে বর্তমানের কলকাতা বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে সাত্যকির জীবন। তার যাবতীয় পরিচয়। আর আছে কাশীদাসী মহাভারতের ছেঁড়া তিনটি পাতা। ইতিহাস, স্বপ্ন, বাস্তব, অবাস্তবের সমাবেশে কী সংযোগ এই দুই আখ্যানের? খণ্ড খণ্ড সময়ের অভিঘাত পারবে কি তাদের মিলিয়ে দিতে? ........................... খণ্ডপ্রহর অবিন সেন ........................... প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত মুদ্রিত মূল্য : ২৮০ টাকা সুপ্রকাশ

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
সবাই বলছে সময়টা এখন খারাপ। সময়টা ঠিক কবে ভালো ছিল, তা মনে করতে পারে না সাত্যকি। সত্যই কি সময় কোনও দিন ভালো ছিল? তার?  শ্যামা বলল, ‘তুমি আজকাল বড্ড ভাবুক হয়েছ। আগে তো এমনটা ছিলে না। কি এতো ভাবো বল তো?’ সাত্যকি ঘাড় ঘুরিয়ে পূর্ণদৃষ্টিতে শ্যামার দিকে তাকাল। শ্যামাকে কি তার আগের থেকে আরও রোগা মনে হচ্ছে! হয়ত শীর্ণ মুখ আরও ধারালো হয়েছে। আরও যেন বেশি করে শ্যামলা মনে হচ্ছে তাকে। ঠিক মেঘলা দুপুরের মতো। কোঁকড়ানো চুল রুক্ষ। টিকালো নাকের উপরে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ভাসা ভাসা চোখের গভীরে ক্লান্তি। সাত্যকি এমনি করে আগে কখনও কি তাকিয়ে থেকেছে শ্যামার দিকে! সে ভাবে। ভাবতে ভাবতে আবার অন্যমনস্ক হয়ে যায়। শ্যামা আজকাল হন্যে হয়ে একটা চাকরির জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, সাত্যকি ঠিক জানে না। তবে জানে অস্থির শ্যামা অনবরত, অবিরত ঘুরে বেড়াচ্ছে— আস্তাকুঁড় থেকে দেবালয়— কোথায় নয়! মিনিবাস-পাবলিক বাস-মেট্রো প্রতিটা যানবাহন যেন জেনে যাচ্ছে শ্যামার এই দৌড়। সাত্যকি অন্যমনস্ক ভাবে তাকিয়ে থেকে শ্যামার চোখের ভিতরে সেই অসীম ক্লান্তি দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সাত্যকি নিশ্চিত জানে, একটা ভদ্রগোছের চাকরি কেউ দিতে প...

যেসব গল্প ছোটো থেকে বড়ো হয়।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।। সুপ্রকাশ।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর কিশোর গল্প সংকলন 'যেসব গল্প ছোটো থেকে বড়ো হয় ' পড়ে লিখেছেন অর্ক আচার্য।  ............................... পাঠপ্রতিক্রিয়া: অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর লেখা "যেসব গল্প ছোটো থেকে বড়ো হয়"পড়া সমাপ্ত হলো। সত্যি বলতে কিভাবে ভালোলাগার প্রতিক্রিয়া দেবো তা ভাষায় বর্ণনা দুঃসাধ্য। এটুকু বলতে পারি কি ভালো লেখেন অর্দ্ধেন্দুশেখরবাবু❤️.. এভাবে নস্টালজিয়া জীবন্ত করতে কজন পারে?! 'জানোয়ারের দেশে' এবং 'শান্তা আর দস্যির গল্প' পড়ে চোখের জল চেপে রাখা দায়। 'অম্বুদের পাঠশালা' এবং 'ভয়' - কিছুক্ষণের জন্য হলেও হারানো ছেলেবেলা ফিরিয়ে আনে। 'উন্মোচন'- হোস্টেলজীবনের আমাদের দস্যিপনাকে চোখের সামনে উদ্ভাসিত করে। 'রাজা ও তস্কর' কাহিনীর আড়ালে জীবনের শিক্ষা প্রদান করে। 'তিন কান্ড হনুমান' পড়ে হাসবে না যে সে নির্ঘাত রামগরুড়ের ছানা!! আর শেষে 'ফাঁসির মঞ্চে ভাগ্যবান' ভগৎ সিং এর জীবনআলেখ্যকে বড় সুন্দরভাবে বর্ণনা করে যা ইতিহাসপ্রেমী আমায় আবিষ্ট করেছে। শেষে বলি লেখক ও প্রকাশক উভয়কেই ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর এ...

একটি শিশির বিন্দু (বাটানগর - বজবজ অঞ্চলের ছুঁয়ে থাকা গল্প - কথা - রাজনীতি - ইতিহাস)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শুভদীপ চক্রবর্ত্তীর অঞ্চলচর্চা গ্রন্থমালার বই ' একটি শিশির বিন্দু ' পড়ে ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন দিশা ( Bhootu Bhootu )। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ................................. একটি শিশির বিন্দু (বাটানগর - বজবজ অঞ্চলের ছুঁয়ে থাকা গল্প - কথা - রাজনীতি - ইতিহাস) লেখক ~ শুভদীপ চক্রবর্তী পার্সোনাল রেটিং ~ 5 নিজের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের নাড়ি নক্ষত্র জানার অভ্যাস আমার সেই ছেলেবেলা থেকে। একবার যে জায়গায় বসবাস শুরু করি সেই জায়গার প্রতিটা অংশ যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার মুখস্ত হয়ে যাচ্ছে ততক্ষন ঠিক যেন শান্তি পাই না। আর একবার যদি জায়গাটাকে ভালোবেসে ফেলি তাহলে তার বর্তমানের সাথে সাথে ইতিহাস জানার আগ্রহ সমানে বেড়ে যায়। ছোটবেলায় ঠাকুমা, ভালোমাকে জ্বালাতাম নিজের বাড়ির, গ্রামের গল্প শোনার জন্য, কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বাড়ি পাল্টেছে বেশ কয়েকবার, এখন তাই সব ভরসা বই আর চোখের উপর। মাঝে মাঝে তাই হাঁটতে বের হলে সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলি একটা ভাঙা দেওয়াল থেকে শুরু করে গঙ্গার ঘাট ও কত শত গল্প বলে শুধু পড়তে পারলেই হলো। তাই একদিন ফেসবুক থেকে যখন এই ব...

নষ্ট চাঁদের আলো।। অলোক সান্যাল।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।। সুপ্রকাশ।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অলোক সান্যালের উপন্যাস ' নষ্ট চাঁদের আলো ' পড়ে লিখেছেন শুভঙ্কর। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  .................................. নষ্ট চাঁদের আলো লেখক: অলোক সান্যাল প্রকাশক: সুপ্রকাশ মুল্য: ₹590 আঠারো শতকের আটলান্টিকে ব্ল্যাকবিয়ার্ড এর দস্যুতার কাহিনী। সেই লুট করা ধনসম্পদ উদ্ধার করতে যাওয়া এক বিজ্ঞানী এমা মিলার ও তার স্পন্সর জোনাথন ডারওয়ার্ড এর অনুসন্ধান এর কাহিনী। গুপ্তধনের ক্লু, এমার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ফাদার সাইমনের হঠাৎ করে কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠা সব কিছু মিলিয়ে শেষ এক সপ্তাহ ধরে এই রোমাঞ্চকর অভিযান প্রতিটি ক্ষণে শুধুই শিহরিত করে তুলেছে। ভালো, শিক্ষিত সমাজের মুখোশ, বর্বর দস্যুদের হৃদয় তথা সখ্য, সর্বোপরি সমাজের সমস্ত মানুষদের চেহারা গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কোনো ভাষা নেই এই সুন্দর কাহিনীকে প্রকাশ করার মত। এককথায় মুগ্ধ। বইটি পড়লে আসল স্বাদ পাওয়া যাবে।

বিপ্লব হারানোর শহরে ছায়ামহলের কথা।। শিলিগুড়ির হারানো সিনেমা হল।। সৌমিত্র ঘোষ।। নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।।

Image
"আমাদের ছোটবেলা, অর্থাৎ কিনা ষাটের শেষ, সত্তরের মাঝামাঝি। সে সময়ে সিনেমা দেখা খুব সহজ কিছু ছিল না। বাড়ির বড়রা সিনেমায় যেতেন, সুতরাং বাড়িতে ও পাড়ায়, তৎসহ কাগজের পাতায় সিনেমার কথা, বিজ্ঞাপন, ছবি। নিছক সিনেমা নিয়ে একাধিক জনপ্রিয় পত্রিকার আনাগোনা ছিলই বাড়িতে, উল্টোরথ, প্রসাদ, জলসাঘর ইত্যাদি, পরে আনন্দলোক। বোঝাই যায়, পরিস্থিতি ও পরিবেশ সিনেমা-অনুকূল ছিল। কিন্তু সে বড়দের, বা বখে যাওয়া স্কুল পালানো ছোটদের জন্য। দু'দলের কোনটাতেই পড়তাম না, সিনেমা দেখবার সুযোগও হতো না। বড় হওয়ার আগে, মানে ইস্কুল ছেড়ে কলেজে পা দেওয়ার আগে, অর্থাৎ শিলিগুড়ির মফস্বল ছেড়ে সত্যিকারের কলকাতা শহরে পাড়ি দেওয়ার আগে পর্যন্ত, সিনেমা হলে ঢোকার সুযোগ হয়েছে খুব কম। খুব মাঝেমধ্যে, কালেভদ্রে যে দু'একটা সিনেমা ছোটদের দেখার মতো বিবেচিত হতো, ছাড়পত্র মিলতো শুধু সেগুলোই দেখার, নইলে লবডঙ্কা। বলা বাহুল্য, খুব সুখের ছিল না ব্যাপারটা। ইস্কুল ও পাড়ার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই কী করে যেন টাকা বা পাস জোগাড় করে সিনেমা দেখতে চলে যেত! চুলোয় যাক স্কুল বা বাড়ি! নতুন হলে লাগা 'বই' নিয়ে লাগাতার কথা বলার শেষ নেই যেন, যাকে আজকাল বলে স...

লেলানু।। শুভজিৎ ভাদুড়ী।। নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।।

Image
জুলাই মাসের কোনও একদিন  বিকেল ০৫: ৫২ এখন মাথার উপর কেবল একটা মস্ত আকাশ। যতদূর চোখ যায় শুধুই আকাশ। খানিক আগের সব বিচিত্র আকৃতির মেঘপিণ্ড এখন কেমন ম্লান হয়ে গিয়েছে। কেউ যেন তার নিজস্ব আকার ধরে রাখতে পারছে না। একেকটা মেঘপিণ্ড গিয়ে মিশে যাচ্ছে পাশেরটার সঙ্গে। সে তারও পাশেরটার সঙ্গে। আকাশ যেন একটা অনন্ত পট। নির্জনতা প্রিয় কোনও এক শিল্পী তার তুলির টানে ধূসর করে দিচ্ছে সবটা। শেষ কবে এরকম ভাবে আকাশ দেখেছে কেউ, এত অখণ্ড এক অবসর যাপন করতে করতে! অবসর! হাসি পায়! হ্যাঁ, অবসরই তো। অনন্ত অবসর। এখনই তো সময় জীবনের লাভ ক্ষতির হিসেবগুলো কষে নেবার। মনে পড়ে কত কথা। এই অসীম আকাশের নীচে শুয়ে কত কথা মনে পড়ে। আকাশ কি স্মৃতির প্রতিনিধি? কে দেবে উত্তর! কেউ দেবে না! অনুমান করে নিতে হবে। হয়। যেমন কোনওমতে শরীরটাকে একটু নড়িয়ে সে অনুমান করতে পারছে তার প্যান্টের পকেটটা হালকা। ফোন নেই। টাকার বান্ডিলগুলো নেই। টাকা! হাসতে কষ্ট হলেও একটু হাসল সে। এই টাকার জন্য তাকে এককালে কত কথাই না শুনতে হয়েছে... টাকা কী গাছে ধরে না মাটি খুঁড়লে পাওয়া যায়! বাজার ফেরত টাকা থেকে দশ টাকার কোল্ড ড্রিংক খেয়েছিল বলে জগন্নাথ মণ্ডল কী মারটাই ...

ভেরনিকা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।।

Image
"ঠাণ্ডা আর ধূসর, ভীষণ নীরক্ত সবেমাত্র বিকেলবেলায় সৌভিক চোখ মেলে বুঝল তার বিছানা ঘামে ভেসে যাচ্ছে, ফলত সে মাথা তুলে ফ্যানের ফুলস্পিড আর এসির কুড়ি ডিগ্রি দেখে নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট ধরাল। তার মনে আসেনি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা, বরং খুশি হল, কারণ পরপর দুইবার সার্ভিসের যে লোকগুলো এসে এসি ঠিকঠাক কাজ করছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে, তারা আসলেই অপদার্থ, সে বুঝেছিল। অফিস শুরু হতে এখনো ঘণ্টা দেড়েক বাকি। সেদিন বিকেল ছিল ছায়াময়, আর বিজয়গড় অগ্রগামী ক্লাবের সামনে আড্ডার বেঞ্চগুলো ইতিমধ্যে পাতা হয়েছিল। জানালা দিয়ে সৌভিকের চোখে পড়েছিল চায়ের দোকানে উনুনে আঁচ পড়ছে আর মাথা নুইয়ে একটা বুড়ো অটো হেলতে দুলতে পল্লিশ্রীর দিকে চলে গেল, তখন সিগারেটের ধোঁয়ারা ঘরের ভেতর জমাট কুয়াশা তৈরি করছিল, সৌভিকের মনে হল এরা তাকে বেশ ঢেকে দিলে হয়, যেন ধোঁয়ার জালের ভেতর সে ঢুকে যাবে, পুরনো দিনের বলিউডি ভূতের ছবিতে যেমন দেখাত। পাশের ঘর থেকে ক্রমাগত দরজা আঁচড়াবার সেই পরিচিত আওয়াজটা আসছিল, কিন্তু সৌভিকের আলস্য লাগছিল বরাবরের মত। ফ্ল্যাটের বাইরে বেরবার তো প্রশ্নই নেই, এই ঘর থেকেও তার বেরতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ির বাইরে শেষ বেরিয়েছিল ...

সময়-অসময়ের চালচিত্র।। মিহির সেনগুপ্ত।। নির্মুখোশ শারদ ১৪৩১।।

Image
"সময় অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছিল। আমি যথেষ্ট বয়স্ক, পুরনো ধ্যানধারণার মানুষ। সেকালে দেখেছি, এ অঞ্চলে কি হিন্দু, কি মুসলমান কোনও সমাজেই অনাত্মীয় নারী পুরুষ তা তারা যে বয়সেরই হোক এ রকম, এতটা বা মোটামুটি মুক্তভাবে মেলামেশার কথা ভাবতে পারত না। রহিমারা এতটা সাহস অর্জন কী ভাবে করল? রহিমা বিএ পর্যন্ত পড়েছে। কথাবার্তায় চৌখস। পড়াশোনাও মোটামুটি ভালোই। তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বেশ লাগছিল। বুঝলাম, মাসিমা না থাকলেও, তাঁর মানুষ গড়ার ধারাটা লুপ্ত হয়নি, বিশেষত মেয়েদের মুক্তচিন্তায় উত্তীর্ণ করতে। সবটা বা সব স্থানের অবস্থা জানার সুযোগ হয়নি। শুধুমাত্র আমার এই একদার ভূমির এই অঞ্চলটুকুতে যে অগ্রগামিতা লক্ষ করলাম, তা বেশ আশাব্যঞ্জক। রহিমা যে কোনও কথা প্রকাশ করে বলতে দ্বিধা করে না। তবে তার রসিকতার মাত্রাবোধটা মাঝে মাঝে অস্বস্তির সৃষ্টি করছিল। মাঝে মাঝে বুঝতে পারছিলাম না এ ব্যাপারটা তার ব্যক্তিগত স্বভাব-চাপল্য অথবা বর্তমান সমাজে এখানের সার্বিক প্রবণতা। এ অঞ্চলে, সাধারণের বাকবিধি বা আচরণে আমার 'সেকালে' অপরিসীম স্থূলতা ছিল দেখেছি। শিক্ষিত ভদ্র সমাজে, শহর-গ্রামে তাকে 'অসোইব্য কথা' বলা হত। তখন শিক্...