‘দার্জিলিং পাহাড় ও নিচের সমতলের, অর্থাৎ তরাই-ডুয়ার্স এলাকার যে সব বন এখন আমরা দেখি, যেখানে লোকে বেড়াতে আসে, সেই বনের বেশিরভাগটা সায়েব আমলের। ভালো কাঠের ও উৎকৃষ্টতর মুনাফার খোঁজে সায়েবমালিকেরা পুরোনো বনের পুরোটাই প্রায় বদলে ফেলেছিলেন। সাদা সায়েব বিদায়ের পর দিশি সায়েবদের কাল শুরু, সে সময় বাকিটাও মোটামুটি গেলো। বন বদলানো, অর্থাৎ যুগপৎ বন কাটা ও বন তৈরির এই অভিযান টঙিয়া ভিন্ন সম্ভব হতো না। টঙিয়া ব্যাপারটা খোলসা করা যাক। সায়েবরা এ দেশের জমি জঙ্গল নদী নালা পাহাড় সমতল সব যখন কব্জা করে ফেলেছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল দখলে আসা এলাকা থেকে কত তাড়াতাড়ি কত বেশি খাজনা আদায় হতে পারে। খাজনা আদায় ও রাজস্ব বা রেভিন্যু বাড়ানোর দুর্মর তাড়নায় বনটন সবকিছুতে যে অমোঘ লুঠেরা থাবা চেপে বসেছিল, সে কথা পূর্বে বলা হয়েছে। শুধু বাংলা নয়, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের সর্বত্র এক ঘটনা ঘটেছে, অন্তত বন নিয়ে তো বটেই। দেদার লুটপাটের পর সায়েবরা যখন ঠিক করলেন, শুধু বন কাটলেই চলবে না, বন বানাতেও হবে, কাজটা আদৌ সহজ হলো না। বন সাফ করে কাঠ বেচে দেওয়া সহজ, বনের জমিতে প্রজা বসানোও কঠিন নয়। বন বানানোটা একেবারে অন্য কিসিমের ব্যাপার, ব
দোমোহানি জায়গাটা পুরোনো, ইংরেজ আমলে রেল কোম্পানির ঘাঁটি, ইটের পুরোনো বাড়িঘর এখনও দু-একটা দেখতে পাওয়া যায়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানতেন, দোমোহানি জায়গাটাতে যারা থাকে, তারা সবাই মানুষ নয়, তাদের গা থেকে সন্দেহজনক গন্ধ ছড়ায়। সেই পুরোনো ভূতুড়ে দোমোহানি পুরো ডুবে গিয়েছিল, শোনা যেত, সেখানে শুশুকেরা সাঁতার দিচ্ছে। ঊনসত্তরের গোড়ায় জলপাইগুড়ি গিয়ে দেখি বাড়িতে বাড়িতে বাইরের দেয়ালে পলি জমাট হয়ে আছে তখনও, শহরের বাসিন্দাদের মন থেকে তিস্তার ভয় তখনও শুকোয়নি। সবাই বলছেন, কী করে বাঁধ ভেঙে মুহূর্তে ধেয়ে এসেছিলো পাগলা জল। তিস্তা তো বটেই, এমন-কী করলার মতো নিরীহ শান্ত নদীও ক্ষেপে গিয়েছিল। দেয়ালে পলির দাগ বহুদিন অবধি পড়া যেত। আটষট্টির আগে পঞ্চাশের বন্যা, ভূমিকম্প। আমার বাবা সেসময় কি তার আগে থেকেই এ অঞ্চলের বাসিন্দা, তাঁর কাছ থেকে গল্প শুনতাম কালিম্পঙ যাওয়ার ছোটো রেলগাড়ির। তিস্তার জল ছুঁয়েই প্রায় সে গাড়ির লাইন শিলিগুড়ি থেকে গেইলখোলা অবধি যেতো। গেইলখোলার আগের স্টেশন রিয়াং। মংপু যেতে হলে সেখানে নামতে হতো। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং রিয়াং স্টেশনে নেমেছিলেন বারকয়েক, সে গল্প মৈত্রেয়ী দেবীর লেখায় পাওয়া যায়। তার কিছু পরে, দ্
"নদীর কথা ভাবলেই তিস্তার কথা মনে পড়ে। আর তিস্তার কথা মনে করলেই মনে পড়ে যায় প্রথম তিস্তা দেখার কথা। বাড়ি থেকে দুপুরবেলায় বেরিয়ে কালিম্পঙ যাওয়া হয়েছিল। পাহড়ের ধার দিয়ে খাড়া সরু পথ, ডানদিকে অনেক নীচে নদী, মেঘে কুয়াশায় আচ্ছন্ন অন্ধকার। নীচে তাকাতে ভয় করে। যদি পড়ে যাই? তাহলে কী হবে? সেই থেকে কতদিন চলে গেল, সরু পথ চওড়া হলো, পাহাড় নদী কিছুই আর আগের মতো থাকলো না, কিন্তু তিস্তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলো ভয়, অচ্ছেদ্য বন্ধনে। ফি বছর খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে প্রায় নিয়ম করে নদীতে পড়ে যায় ছোটো-বড়ো গাড়ি, মানুষ। নদী যাদের নেয় তাদের সবাইকে খুঁজে পাওয়া যায় না, বিশেষত বর্ষায়। ডুবুরি নামে, ভেলা নামে, নৌকা নামে, জল তোলপাড় করে ফেলা হয়, তবু পাওয়া যায় না। তিস্তার কথা মনে করলে দ্বিতীয় যে বিষয়টা মনে পড়ে সেটা আটষট্টির বন্যা। তখন পুজোর ছুটি চলছে, আমরা অনেক দূরের চুনারে, একটা পাথুরে টিলার মাথায় একটা ছোটো বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছি। তখনও ওইরকম বেড়ানো হতো। অতদূর থেকে এদিকে কী হচ্ছে খবর পাওয়া যেত না, তাও খবরের কাগজ কিংবা রেডিও কিছু একটা মারফত জানা গেল বন্যায় তছনছ হয়ে যাচ্ছে পাহাড়-ছো
Comments
Post a Comment