ধ্রুবচন্দ্রিমা।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্য লিখিত ঐতিহাসিক আখ্যান 'ধ্রুবচন্দ্রিমা' পড়ে লিখেছেন গঙ্গোত্রী গুপ্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
.
.

#পাঠ_অনুভুতি
#ধ্রুবচন্দ্রিমা
লেখক- সূর্যনাথ ভট্টাচার্য

মহারাজ সমুদ্রগুপ্ত তাঁর শাসনকালে রাজ্যে এক অখন্ড শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর শাসনের শেষকালে রাজধানী উজ্জয়িনীর নিকটবর্তী জয়স্কন্ধাবারে শকদের সঙ্গে যুদ্ধের নিস্পত্তি দেখে যেতে পারেননি। যদিও যে শর্তে তাঁর নিস্পত্তি সমুদ্রগুপ্তের জ্যেষ্ঠপুত্র রামগুপ্ত করেছিলেন তা দেখলে হয়তো তিনি তৎক্ষণাৎ নিজের মৃত্যু কামনা করতেন। রামগুপ্ত ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, উচ্ছৃঙ্খল, সুরাসক্ত এবং হঠকারী। শকদের সঙ্গে সন্ধি করেন চরম অপমানকর এক শর্তের বিনিময়ে। এ গল্পের শুরু সেখান থেকেই। 

কাহিনীসূত্রে একে একে জুড়ে যায় অকম্পন, মউলি, রানি ধ্রুবাদেবী, মহামাত্য বিশঙ্কদেব, ছোটকুমার চন্দ্রগুপ্ত। সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীকে পরদিনই ছেড়ে অকম্পন যখন রওনা হয় উড়ালির পথে তখনও সে জানেনা রাজনীতির কোন জটিলতম জালে সে জড়িয়ে পড়তে চলেছে। তাঁকে রওনা করে দেবার পর মহারানি জানতে পারেন অকম্পন তাঁরই প্রিয়পাত্রী মধুমল্লিকা বা মউলির সদ্যবিবাহিত স্বামী। অনুশোচনায় ভরে ওঠে তাঁর মন। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এদিকে অকম্পন ফের মৃত্যুমুখে পতিত হয় কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বেঁচে ওঠে এবং পুনরায় বন্দি হয় রাজ্যের শত্রু সেই প্রতিহিংসাকামী শকদেরই হাতে, গহীন অরণ্যে যাদের গোপন শক্তিবৃদ্ধি দারুকল্পের নেতৃত্বে। সেখান থেকে কুমার চন্দ্রগুপ্ত শকদের পরাজিত করে উদ্ধার করেন তাঁকে এবং রক্ষা করেন রাজ্য। পরবর্তীতে ধ্রুবাদেবীকে বিবাহ করে রাজ্যের ভার নিজের হাতে তুলে নেন চন্দ্রগুপ্ত। বহু অরাজকতা এবং অপমান পেরিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় “ধ্রুবচন্দ্রিমা”। 

লেখক তাঁর কথামুখে বলেছেন এ কাহিনী তিনি পেয়েছেন প্রাচীন কাব্যকার বিশাখদত্তের “দেবীচন্দ্রগুপ্তম” নাটক থেকে। পূর্ণাঙ্গ রচনাটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও পরবর্তী অন্যান্য রচনার মাঝে রয়ে গেছে তার খণ্ডিত কিছু উদ্ধৃতি। বিশাখদত্তের কাহিনিতে কতখানি ঐতিহাসিক সত্যতা আছে তার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়না। লেখকও ইতিহাসকে পুঙ্খানুপুঙ্খ খুঁজতে যাননি, তিনি কল্পনা করতে চেয়েছেন ইতিহাসের কঠোর বাস্তবতার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া মনগুলোকে, যারা বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ভালোবাসার টানে ফিরে ফিরে আসে প্রিয়জনের কাছে। 

কাহিনীর প্লট বা চরিত্রদের নিয়ে কিছুই বলার নেই। অত্যন্ত সুখপাঠ্য ঐতিহাসিক ফিকশন “ধ্রুবচন্দ্রিমা”। পরিশেষে একটাই ব্যক্তিগত মতামত- কিছু কিছু জায়গায় ঘটনার বিস্তার একটু কম হলে গল্পের ধার ও ভার একটুও কম হতোনা বলেই আমার মনে হয়েছে। “নীভ” “আর-পার” শব্দগুলো আমি আমার এযাবৎকালের বাংলার পঠনে পাইনি। তাই একটু চোখে লাগলো।

#গঙ্গোত্রী

প্রকাশনা- সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য- ৩৯০/-

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।