অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' অলৌকিক বাগান ' পড়ে লিখেছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
...............................................................

"..... এখানে এখনো মফস্বল প্যাড পরে মরণপণ জেদে ক্রিজ কামড়ে আছে। "

এই একটা লাইন যেন আসলে আমার নিত্যদিনের যাতায়াতের এলাকাকে পরিষ্কার তুলে ধরে। প্রতি রবিবার সকালে অগ্রাসীর মাঠ (পুরনো কিশোর সংঘের মাঠ) পেরিয়ে পশুপতি ভট্টাচার্য্য রোড টপকে মজলিস আরা রোডে ঢুকলেই একখন্ড মফস্বল উঁকি দেয়। প্রতি নিয়ত বদলে যাওয়া চারপাশ আরও বেশি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সেই সব বাড়ি, প্রায় জঙ্গলে পরিণত হওয়া বাগান, বড় তাল গাছ, আম গাছ, সুপারি গাছে ঢাকা এলাকাকে। কচুরী পানায় ভর্তি ঝিল, সেখানে মাছ ধরা পড়ে এখনো। গাছে নজর রাখলে এখনও কাঠ ঠোকরা বা ঝিলের জলে মাছরাঙা দেখা যায়। বছর পাঁচেক আগে বক ও দেখেছি। 

আর আছে খটাস, ভাম, বেজী। সর্বোপরি আছে এক অন্য বেহালা। পুরোনো, পলেস্তারা খসা। স্মৃতি হাতড়াতে থাকা বেহালা। আমি রোজ দেখি। প্রাচীন গঙ্গার ক্ষুদ্র শাখানদী থেকে প্রাকৃতিক দ'মোহনী খাল থেকে অজস্র ছোট বড় মজে যাওয়া পুকুরের ভগ্নাবশেষের বেহালা, রাস্তার ওপর ক্রিকেট খেলা শিশুদের পায়ের তলার পিচ রাস্তার নীচে চাপা পড়া চড়িয়াল খালের বেহালা ------ সর্বোপরি ষাট সত্তরের উদ্বাস্তু বাম নকশাল আন্দোলনের স্মৃতি কাতরতাময় বেহালা - যেখানে আজও হানা দেয় নবারুণের কবিতার নীল। সিড়িটি শ্মশানের কালীমূর্তির অন্ধকারে জ্বলতে থাকা চোখ, সেখানে দেওয়াল থেকে মুছে গেছে 'বদলা' লেখা। টালি নালায় আর দেহ ভেসে আসে না।

আসলে এ হলো "... কিছুতেই উন্নয়নের গড্ডালিকায় মাথা না গলাতে চাওয়া নন-কনফর্মিস্ট গ্রামের মধ্যে নো-ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে যাওয়া ভ্যাবাচ্যাকা  এক অনস্তিত্ব"। 

সেই অনস্তিত্বের জাদু বাস্তব উপাখ্যান রোজ অনুভব করি। যা আরেকবার গ্রন্থাকারে ধরলো Sakyajit দার উপন্যাস ' অলৌকিক বাগান ' । সুপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত। 

কিন্নর রায়ের ' প্রকৃতিপাঠ ' এর পরে এই এলাকা নিয়ে আরেক উপন্যাস। এও এক নতুন প্রকৃতি পাঠ।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।