Posts

Showing posts from February, 2025

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

Image
মহাবনস্থিত তাঁদের বনস্থলী হতে রওনা দেবার পর দ্বিতীয় দিবসে নির্বিঘ্নে নিরুদককান্তার অতিক্রম করার জন্য উল্লাস উপভোগের পর ক্ষণিক বিমনস্কতার ফলে তৃতীয় দিবসে অরণ্যমধ্যে পথভ্রষ্ট হয়ে অষ্টপ্রহরাধিক কাল তাঁরা তরুরাজির মধ্যে ইতস্তত বিচরণ করেছেন। অবশেষে যাত্রভেদক অপভ্রমণ করতে করতেই তাঁরা একটি বনসবতির দেখা পান। প্রথমে এই মানুষগুলিকে অপযক্ষ বলে ভ্রম হয়েছিল— নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অধিকাংশজনই ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, পাথুরে বলশালী চেহারা, কৃষ্ণপ্রস্তরে গড়া প্রতিরূপের মতো— অরণ্যতরুর আড়াল হতে পঞ্চ-ভিক্ষুককে তারা লক্ষ্য করছিল। ভয় পেয়েছিলেন দীপ্তঙ্করও। কিন্তু বনচারী মানুষগুলি অনেক অভিজ্ঞ, এই বনপথে যাতায়াতকারী বৌদ্ধভিক্ষু তারা অনেক দেখেছে। সন্ন্যাসীদের ভাবভঙ্গি দেখেই তারা অচিরেই বোঝে যে, এই ভিক্ষুদল বনধাঁধায় পথ হারিয়েছেন। শূন্য হতে আবির্ভাবের মতো আড়াল ছেড়ে ত্রস্ত সন্ন্যাসীদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল এক নারী ও পুরুষ। নিরস্ত্র। দু-জনেরই দুই হাত অর্ধভঙ্গিতে ওপরে তোলা। মধ্যবয়স্ক সেই পুরুষ ও নারীর পরনে তরুবল্কল হতে তন্তুনিষ্কাষণ করে তাইতে গড়া হ্রস্বমাপের কটিবস্ত্র, পুরুষটির উর্ধাঙ্গ অনাবৃত, নারীর উর্ধাঙ্গে পটিবক্ষবন্ধনী। ত...

নষ্ট চাঁদের আলো।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
জেমস ফোর্টকে পাশে রেখে কিছুটা এগিয়ে গেলে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাবেজ পাম গাছগুলো চোখে পড়ে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের দল তালের মতো ঢ্যাঙা গাছেদের আড়লে লুকোচুরি খেলছিল। কোকো ওদেরই একজন। ঝাঁকড়া চুল। দুষ্টুমি ভরা হাসি। ভীষণ ছটফটে ছেলেটা তার এবং আইয়ানার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাকে দেখতে পেয়েই খেলা ছেড়ে ছুটে এসেছিল কোকো। তারপর ব্যস্তসমস্ত ভাবে বলেছিল, 'আইয়ানা নেই। কিটচি মানিতোউ-এর কাছে চলে গেছে।' বলেই ছুটে একটা ক্যাবেজ পামের পেছনে আড়াল নিয়েছিল। অ্যালগংকুইনদের আরাধ্য দেবতা হলেন কিটচি মানিতোউ। কোকোর বলা কথাগুলো অনেকক্ষণ পিটারকে নড়তে দেয়নি। পৃথিবী বুঝি নিজের নিরন্তর আবর্তন থামিয়ে দিয়েছিল ওই সময়টুকুর জন্য। তারপর কখন যে তার অবাধ্য পা নুড়িমাখা পথ ধরে আইয়ানাদের গ্রামের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছিল, পিটার নিজেও জানে না। মাথায় রঙিন কাপড়ের ফেটির ভাঁজে লম্বা পালক গোঁজা এক সুদেহী তরুণ সবাইকে সরিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল। যেন জীবন্ত আগ্নেয়গিরি! তার পরেই প্রবল জিঘাংসায় ফেটে পড়ল। শক্ত হাতে পিটারের জ্যাকেট ধরে তাকে ছুঁড়ে ফেলল মাটিতে। ঘিরে থাকা ভীড়ের মধ্যে থেকে কেউ সজোরে লাথি কষাল তার পেটে। পিটার জা...

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্তী।। সুপ্রকাশ।।

Image
বঙ্গভঙ্গ আটকাতে যে বিপুল উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল কলকাতা শহরে এবং তার যে পরিমাণ প্রচার হয়েছিল, সেটার প্রায় কিছুই হয়নি যখন মানভূমকে বাংলার বুক থেকে কেটে নিয়ে বিহারের অংশ করে দেওয়া হয়। তবে মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী সম্প্রদায় একদমই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি এই বিচ্ছেদ। যে হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে বর্তমানে এত তোলপাড় সারাদেশে, ভাবলে অবাক লাগে এই একই আন্দোলন সেই সময় মানভূমের মানুষ শুরু করেছিলেন মোটামুটি ১৯১২ সাল থেকে, যা চলে স্বাধীনতার পর অবধিও! বহু ভাষাতত্ত্ববিদ এবং ঐতিহাসিক গবেষকেরাও স্বীকার করেছেন, ভাষার অধিকারের জন্য মানভূমের এই আন্দোলনকে পৃথিবীর দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন বলাই যায়। মানভূমের বাংলাভাষী বাসিন্দারা স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার পরে আবার তাঁরা ফিরে আসবেন বাংলার বুকে। কিন্তু দীর্ঘ প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা এলেও, তাঁদের সেই দাবীদাওয়া পূরণ হল না একটাও। অতএব এবার আন্দোলন শুরু হল স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর থেকেই। মানভূমের বাঙালিদের মধ্যে তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়ল ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন। শেষে ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে চরমে পৌঁছোয় আন্দোলনের তীব্রতা। মাথার উপর গনগন...

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে (পরিবেশ সম্পর্কিত আক্রমণ-হত্যা: ইতিহাস-বর্তমান)।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।।

Image
'আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমি রবার গাছ বাঁচাতে লড়ছি, তারপর মনে হল আমি আমাজন রেইনফরেস্ট বাঁচাতে লড়ছি। এখন আমি বুঝতে পারছি আমি আসলে মানবতাকে বাঁচাতে লড়াই করছি...' চিকো মেন্ডিস  .......................................................... চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে (পরিবেশ সম্পর্কিত আক্রমণ-হত্যা: ইতিহাস-বর্তমান) অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য প্রচ্ছদের ছবি : অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য প্রচ্ছদ রূপায়ণ : সৌজন্য চক্রবর্তী মুদ্রিত মূল্য : ৩৯০ টাকা সুপ্রকাশ

বাংলার দ্বাদশ ভৌমিক ও সমকালীন ভূমি ব্যবস্থা।। উৎপল চক্রবর্তী।। সুপ্রকাশ।।

Image
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব প্রশাসনের সূত্রে দ্বাদশ ভৌমিকদের সময়কালটি বাংলার আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে নানা কারণে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। কৃষক বঞ্চনা এবং তার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ কৃষক বিদ্রোহও এই সময়কালের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই সময়কালের ভূমি ব্যবস্থা ভারতের অন্যান্য অংশের মতো বাংলাতেও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছিল, যা সামাজিক সম্পর্কগুলিরও নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল। অনেক পরে ইংরেজ শাসকরা এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যেই এক অবিচ্ছেদ্য ক্ষুদ্র প্রজাতন্ত্র (লিটল্ রিপাবলিক) কে অনুসন্ধানের প্রয়াস নিয়েছিলেন। একদিকে দেশীয় পরম্পরা, অন্যদিকে ভিনদেশীয় শাসকের প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি, এই দুইয়ের মাঝখানে বাংলার ষোড়শ শতকের শেষ থেকে আঠারো শতকের সূচনা পর্যন্ত সময়কালটি বেশ বিচিত্র এবং জটিল হয়ে উঠেছে। ভূমিসম্পর্কের ভিতর দিয়ে এই সময়কালের একটি নিবিড় পাঠ নেওয়াই এই বইয়ের উদ্দেশ্য। বাংলার দ্বাদশ ভৌমিক ও সমকালীন ভূমি ব্যবস্থা উৎপল চক্রবর্তী প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা সুপ্রকাশ 

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

Image
কলকাতাসহ মফস্বলের অধিকাংশ লেটারপ্রেসই ছিল ক্ষুদ্র বা মাঝারি। এমন প্রেস মফস্বল শহর, গ্রাম বা গঞ্জের অলিতে-গলিতে ছিল যেগুলি ছিল মুখ্যত ঐ 'ওয়ান-ম্যান' লেটারপ্রেস বা একক শ্রমনির্ভর—পুরোপুরি হস্তসাধক এবং প্রাথমিকতম প্রযুক্তিরও ছোঁয়াচহীন। এই ধরনের প্রেসের প্রত্যক্ষ উদাহরণ ছিল দাদাঠাকুর নামে খ্যাত শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (১৮৮১-১৯৬৮)-এর 'পণ্ডিত প্রেস'। নিজের প্রেস ও পত্রিকা নিয়ে তাঁর রোমহর্ষক সংগ্রাম উল্লেখ করবার মতো। তা গ্রামবার্ত্তার প্রেস নিয়ে হরিনাথের সংগ্রামের মতোই অত্যাশ্চর্য, কৌতূহলোদ্দীপক। শৈশবে পিতামাতাকে হারিয়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে শরৎচন্দ্র পণ্ডিত জঙ্গিপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে আর বেশিদূর প্রথাগত পড়াশুনোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ১৯০২-১৯০৩ সাল নাগাদ তাঁর অভিভাবক, পিতৃব্য রসিকলাল পণ্ডিতের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় স্বাধীন জীবিকার সন্ধানে তিনি স্থাপন করেন পণ্ডিত প্রেস, জঙ্গিপুর মহকুমার প্রথম (নিমতিতার জমিদারবাড়ির নিকটবর্তী 'গোবিন্দ প্রেস'-এর কথা বাদ দিলে) ছাপাখানা। এই প্রেস স্থাপনার ইতিহাস যেমন কৌতূহলোদ্দীপক তেমনই কৌতুকপূর্ণ। বস্তুত দাদাঠাকুর যে-বয়সে প্রে...

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

Image
বুদ্ধ্যাসনে তর্জনী এবং কনিষ্ঠ অঙ্গুলি তুলে এবং অপর অঙ্গুলিগুলি ভাঁজ করে মধ্যমার সঙ্গে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ স্পর্শ করে করণমুদ্রায় আসীন ছিলেন উপাচার্য মহাপ্রভাতি। সাধারণভাবে এই মুদ্রা অসুস্থতা বা নেতিবাচকতার হ্রাস ঘটাতে সহায়তা করে বলে কথিত আছে। কিন্তু করণমুদ্রায় আসীন হয়েও মহাপ্রভাতির অবস্থানিক অস্বস্তি মহাঅনিন্দ্যর নজর এড়ালো না। জিজ্ঞাসাপর্বের পরিসমাপ্তি ঘোষণার মতো করে ভিক্ষু পরিপালক বললেন—'ভদন্ত, আপনি আমাদের প্রাত্যহিক উপদেশ করুন।' আচার্য মহাকনককাঞ্চন ক্ষণিকের জন্য চক্ষু মুদিত করলেন, অতঃপর উন্মীলন করে বললেন—'আমার সাধ্য কি উপদেশ করার। সেই মহাকারুণিক আমাদের ক্ষমা করুন। ভিক্ষুর প্রচ্ছাদন ধারণ করে বিনাশ্রমে অসৃজন সুখ ভোগ করছি আমরা। সঙ্ঘজীবনে সম্বিৎটুকু ব্যতিরেকে 'নিজন্ত' কিছুর প্রকৃত অস্তিত্ব না-থাকা সত্ত্বেও আমরা ক্রমাগত একে অপরের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে চলেছি—আজ হোক সেই অভীপ্সিত ভিক্ষু-কথা—'ভিক্খুবগগো'—' 'ভিক্খুবগগো'-র শ্লোকসমূহ বহুপঠিত ও কণ্ঠস্থ থাকা সত্ত্বেও আচার্যের সুমধুর কণ্ঠস্বরে সুপুণ্যকের 'মজ্জভাগ' ও অন্তঃস্বরের চিত্তাত্মা চমকে উঠল যেন! আচা...

বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর উপন্যাস 'বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য' পড়ে মতামত জানিয়েছেন তপন সামন্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।। ............................................................................................................................. শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য' পড়লাম। শুরুতে বেশ হতাশ হয়েছিলাম। ভাষার সঙ্গে সড়গড় হতে একটু সময় লাগল। কিন্তু শেষ করে একটা দিশা পেলাম। ধৈর্যের দিশা, অপেক্ষার দিশা, লক্ষ্যে স্থির থাকার দিশা।  নাম শুনে মনে হবে বইটা বুঝি থ্রিলার। আসলে পরতে পরতে আছে সমাজ ও রাজনীতি, ব্যক্তি মানুষকে কিভাবে পরিচালিত করে তারই ইতিবৃত্ত। সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদের দ্বন্দ্বে পুঁজির জয় নিশ্চিত এবং সে জয়ের জন্য পুঁজি কত নির্মম হতে পারে, তার জীবন্ত ছবি এঁকেছেন শাক্যজিৎ।  সব থেকে ভালো লেগেছে খুব সংক্ষেপে বামফ্রন্ট সরকারের মূল্যায়ন। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা আর চরিত্র হিসাবে নকুল কাঁটাল কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী আর বীরেশ্বর সামন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপ জোতদার, সা...