মগ্নপাষাণ।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যর উপন্যাস 'মগ্নপাষাণ' পড়ে মতামত জানিয়েছেন Journal of a Bookworm। আমরা তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
____________________________________________
#পাঠপ্রতিক্রিয়া

মগ্নপাষাণ
লেখক - সূর্যনাথ ভট্টাচার্য
প্রকাশক - সুপ্রকাশ 
মুদ্রিত মূল্য - ৩৯০ টাকা

বছরের ৩৩ নম্বর উপন্যাস ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস মগ্নপাষাণ।। সুলেখক সূর্যনাথ ভট্টাচার্য এর লেখা এর আগে আরেকটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস পড়েছিলাম এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম, আর তখনই ঠিক করি এনার লেখা সবকটি উপন্যাসই পড়তে হবে।। সুপ্রকাশ প্রকাশনীর ৩০% এর ছাড়বেলায় সংগ্রহ করি মগ্নপাষাণ ও ধ্রুবচন্দ্রিমা। এই উপন্যাসের কাহিনী'র কেন্দ্রবিন্দু সম্রাট অশোক।। কাহিনীর কোথাও যদিও তাঁকে এই নামে অভিহিত করা হয়নি। চণ্ড এবং প্রিয়দর্শী হিসাবেই সম্রাটের সাথে পাঠক পরিচিত হয়েছে।।

♦️ পটভূমি - 

খ্রিস্ট জন্মের ২৭০ বছর আগে মগধের সিংহাসন অলংকৃত করেছিলেন মৌর্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোক। পিতা বিন্দুসারের অগ্রমহিষীর পুত্র সুসীমকে অতিক্রম করে কিভাবে অশোক মগধ সম্রাট হয়েছিলেন, সেই ঘটনা আজ বিস্মৃতির অতলে। পাঠ্য পুস্তক গুলোতেও এর বিস্তৃত বর্ণনা সেরকম পাওয়া যায় না। বিন্দুসারের মৃত্যু এবং সম্রাট অশোকের মগধ এর সিংহাসনে অভিষেকের মাঝে চার বছর ব্যবধান ছিল। কি কি ঘটেছিলো এই সময়ে? কিভাবে কুমার সুসীম শিকার হয়েছিলেন এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের। কেনই বা সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে মত্ত হয়েছিলেন। শুধুই কি কলিঙ্গ যুদ্ধের রক্তপাত না আরও কিছু ঘটনা ছিল , যার কারণে চন্ড নামে খ্যাত অশোকের মনোজগতে পরিবর্তন হয়েছিলো। সম্রাট অশোকের সিংহাসনের আরোহণের পেছনে ছিল অশ্মলেখা ওরফে কারুমালির এক অনন্য অবদান, যে ছিল  একাধারে মগধের নগরনটি এবং সম্রাট অশোকের দ্বিতীয় রানী কারুবাকির অগ্রজা ...তার খোঁজ রাখেনি কোনো বাজার চলতি ইতিহাস বই । সেই সকল ঘটনা জানতে হলে, অবশ্যই মগ্নপাষাণ পড়তে হবে। 
সম্রাট ছাড়াও আরও কিছু চরিত্র আবর্তিত হয়েছে কাহিনী জুড়ে। সম্রাট পিতা বিন্দুসার, ভ্রাতা সুসীম, মিত্র সুবর্ণ, ভ্রাতুষ্পুত্র সুমীর, কারুবালি-কারুমালি দুই তিন্দারী কন্যা যার মধ্যে আবার কারুমালি হলেন সম্রাটের বিবাহিতা মহিষী। আরও আরও চরিত্ররা আছে।
পিতা বিন্দুসারের মৃত্যুর পর কে হবেন মগধাধিপতি, সেই নিয়ে দুই গোষ্ঠী তথা প্রিয়দর্শী এবং সুসীম এর মধ্যে চলতে থাকল গুপ্ত হত্যার হোলি খেলা। যে মগধ এ একসময় শান্তি বিরাজ করত, তথাগতের আশিসে ধন্য হয়েছিল যে মগধ সেই মেতে ওঠে স্বজনের রক্তে রাঙানো হোলি খেলায়। সেসময়কার মগধ এ ছিল চূড়ান্ত বিশৃখলা সহ গুপ্ত হত্যার কাজ। স্বাভাবিক ভাবেই মগধ ছিল অশান্ত। অশান্তির কারণ? অবশ্যই সিংহাসন। 

♦️ পাঠ প্রতিক্রিয়া -

ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস মানেই, ইতিহাসের আবিষ্কৃত অনাবিষ্কৃত সব জায়গার ফাঁকেই লেখকের কল্পনাসূত্র।। এই উপন্যাসেও লেখক সেই পথেই হেঁটেছেন।। আর এই পথে লেখকের সঙ্গী হলেন সম্রাট অশোক।। কাহিনীটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও প্রধান উপাদান ছিল সম্রাটের শিলালিপিগুলো।। সম্রাট বিন্দুসারের মৃত্যুর চার বছর পর রাজ্যাভিষেক হয় অশোকের। কনিষ্ঠ কোনও এক রানীর পুত্র হিসেবে তাঁর রাজা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। উপরন্তু তাঁর সামনে ছিল সম্রাট বিন্দুসারের জ্যেষ্ঠ পুত্র সুসীম। তবে কেন সম্রাটের মৃত্যুর পরেই সুসীম রাজা হলেন না এবং চার বছর অরক্ষিত রইল মগধের সিংহাসন, আর কিভাবেই বা চার বছর পর প্রিয়দর্শন হলেন মগধরাজ সম্রাট অশোক, ইতিহাসের সেই অজানা অলিখিত পৃষ্ঠাগুলির ফাঁক লেখক নিজের কল্পনায় ভরিয়েছেন। লিখেছেন তাঁর প্রিয় ইতিহাস নায়কের এক অন্য জীবন আখ্যান।
এই বইটি প্রচারের আড়ালে থাকা ইতিহাসের অজানা ,বিস্মৃত, অবহেলিত তথ্যের আকর। যারা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, অবশ্যই বলবো এই বইটি পড়তে...হতাশ হবেন না।।

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।