Posts

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
সংকীর্ণ পথ, এঁকেবেঁকে যেন পাহাড়ের গর্ভে ঢুকে গেছে। যাওয়ার পথে ডাইনে-বাঁয়ে তৈরি করছে আরও কিছু শাখা। এগুলো অবশ্য ধাঁধা তৈরি করার জন্য বের করা। এমন পরিকল্পনা অ্যাডোনিস ছাড়া কার উর্বর মস্তিষ্কের ফসল হতে পারে? সুযোগ পেলে স্থপতি হিসেবে জেনেরিয়াসের নাম আরও উজ্জ্বল করতে পারত সে। পিতার, নিজের নামকে ইতিহাসের পাতায় খোদাই করার পরিবর্তে অ্যাডোনিস বেছে নিয়েছে অন্য পথ। এক মহান আদর্শকে রক্ষা করার পথ। আর এই পথ নির্মাণের নকশা এঁকে দিয়েছেন আরিমাথিয়ার জোসেফ। 'ঈশ্বরের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে'— এই কথার মধ্যে দিয়ে বৃদ্ধ জোসেফ আদতে বিশ্বাসকে রক্ষা করার দায়িত্ব সঁপেছেন তাঁদের কাঁধে। পরিকল্পিত প্রচার, জটিলতা, রহস্যের গভীরতা সেই বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার অন্যতম মন্ত্র। একদিন যেভাবে সকলে প্রভু জিশুর পুনর্জীবন লাভের কথা শুনেছিল, এমনকী কেউ কেউ দেখেওছিল, সেভাবেই মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর পান করা পাত্র, তাঁর পোশাকে কিংবা রোমান সেঞ্চুরিয়ানের বর্শাফলকে শুকিয়ে লেগে থাকা পবিত্র রক্তের দাগকে অনশ্বর করে যেতে হবে। প্রধান সুড়ঙ্গপথকে মশালের আলো মাখিয়ে রাখা হয়েছে। খুঁজে নিতে ভুল হয় না। অবশ্য আলো না থাকলেও একটানা ভেসে আসা পাথ...

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের বই 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' পড়ে গুডরিডস্-এ মতামত জানিয়েছেন রোনেল বড়ুয়া। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................... এক কথায়-আহাম্মকের শক্তিশালী জীবনী। যা শৈশব, ছাত্রজীবন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখকের চিন্তা ও অনুভূতির চিত্র তুলে ধরে। লেখক সমাজ ও দেশ সম্পর্কে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন, বিশেষ করে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপারের স্কুল ছাত্রদের মানবিক দায়িত্বের প্রসঙ্গে। বইটি শিক্ষার গুরুত্ব, ভালো শিক্ষকের প্রভাব এবং গ্রাম্য জীবন নিয়ে এক অন্তরঙ্গ আলোচনা। লেখক- জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সোজাসাপটা, কিন্তু প্রাণবন্ত ভাষায় তুলে ধরেছেন। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং তার মানসিক বিকাশের প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। ......................................... আহাম্মকের খুদকুড়ো  দুর্লভ সূত্রধর  সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অভিজিৎ সেনের উপন্যাস 'রহু চণ্ডালের হাড়' পড়ে মতামত জানিয়েছেন গৌতম মুখার্জি। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................... রহু চণ্ডালের হাড়  অভিজিৎ সেন সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য ২৯৫ টাকা বাজিগর একটি জাতি, তারা যাযাবর। তারা না হিন্দু না মুসলমান। তারা গরুও খায়, আবার শুয়োরও খায়।তাদের কোন স্থিতি নেই। গোরাখপুর থেকে শুরু করে উচ্ছেদ হতে হতে তারা মালদা পৌঁছবে। ভূমিহার, জমিদার ও  বড়লোক তাদের দিয়ে জঙ্গল আবাদ করে ক্ষেত বানায়, তারপর তাদের অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করে জমি বিক্রি করে দেয়। তাদের জীবিকা নানা রকম— বান্দর, কুকুর নিয়ে খেলা দেখানো কিম্বা ভিক্ষা করা। তাদের মেয়েরা ধর্ষিত হয় কিন্তু তারা কোন বিচার পায়না।     ইংরেজ শাসন থেকে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তাদের  কয়েক পুরুষের জীবন কাহিনী এই উপন্যাসের মূল বক্তব্য। তারা স্থিত হতে চাইবে, বিচার চাইবে, কৃষি কাজ করবে, এমন কি কিছু লোক মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করবে— কিন্তু তবু তারা যাযাবর থাকবে। তাদের বিশ্বাস, তাদের জীবন শৈলী, তাদের সংঘর্ষ বড় করুণ। বার বার ...

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত বরুণদেবের বই 'শঙ্কর মাস্টার' পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌরজিৎ বসাক। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................... বইয়ের নাম : শঙ্কর মাস্টার লেখকের নাম : বরুণদেব প্রকাশক : সুপ্রকাশ  মুদ্রিত মূল্য : ২০০ টাকা প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পী : অদ্বয় দত্ত, শান্তনু দাস ‘গদ্য অথচ গল্প নয়, কাব্যি অথচ কবিতা নয়’ — গোড়াতেই এমন বক্তব্য বোধহয় বিভ্রান্তিকর। কিন্তু ছোট্ট আকারের এই বইটির বিষয়ে কোনওরকম অনুভূতি প্রকাশ করতে হলে গোড়ার বক্তব্যটিই ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’।  নদীয়া জেলার একটি জনপদ ‘মাটিয়ারি’। সেই মাটিয়ারির আদিলগ্নের ইতিহাস থেকে শুরু করে, গ্রাম্য সংস্কৃতির মৃন্ময়ী-montage গড়ে তোলা অবধি এই বইয়ের লেখনীর বিশাল বিস্তৃতি। এবং সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু : মঞ্চের উপর জেগে ওঠা যাত্রা। যাত্রার সঙ্গে জড়িত মাথাদের রোজনামচায় গড়ে উঠেছে হাড়ের কাঠামো, সামাজিক ঐক্যের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকা যাত্রার প্রস্তুতিপর্ব দিয়ে গড়ে উঠেছে দেহের যা-কিছু মাংসল। এহেন শরীরের হৃদয়টুকুর একচ্ছত্র স্রষ্টা ‘শঙ্কর মাস্টার’, মাস্টারির পাশাপাশি যে চরিত্রটি আমৃত্যু নিজের সবকিছ...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ

Image
পালাতে চাইছে গায়াস। প্রাণপণে ছুটে চলেছে। পিছনে, খুব কাছে চলে এসেছে ভয়ংকর প্রাণীটা! অতিকায় চেহারা। হাওয়ায় উড়ছে সোনালি কেশর। বিরাট মুখগহ্বর থেকে মুহুর্মুহু হুংকার বেরিয়ে আসছে। প্রতিবার সেই গর্জনে কেঁপে উঠছে গায়াসের পায়ের নীচের মাটি। তার উত্তপ্ত নিশ্বাস নিজের শরীরে অনুভব করতে পারছে গায়াস। আর সামান্য পথ। ওই তো, সামনেই বয়ে চলেছে টাইবার নদী। একবার, কোনোক্রমে একবার যদি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, তাহলেই বেঁচে যাবে সে। 'দ্রুত... আরও দ্রুত!' গায়াস নিজেকে চিৎকার করে বলল। ক্লান্ত পা দুটো তার কথা শুনতে আপত্তি জানাচ্ছে। মনের শাসন মানছে না। কামড়ে ধরছে পায়ের পেশি। পাঁজর ভেঙে ফুসফুস বুঝি বেরিয়ে আসতে চাইছে। 'আর মাত্র একশো পা।' কথাটা বললেও প্রতিরাতের মতো আজও এই একশো পা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারল না গায়াস। প্রবল জিঘাংসায় উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল পশুরাজ। তার শরীরের ভার নিয়ে ঘাসে লুটিয়ে পড়ল রোমান সেঞ্চুরিয়ান গায়াস কাসিয়াস। হাতের খাটো বর্শা দূরে ছিটকে পড়ল। সুতীক্ষ্ণ বঁড়শি যেভাবে লোভী মাছকে গেঁথে ফেলে, হিংস্র পশুটির নখপ্রান্ত ঠিক সেভাবে রোমান সেঞ্চুরিয়ানের ধাতব বর্ম ভেদ করে শরীরে চেপে বসল। তীব্র ...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ

Image
মানববর্জ্য এবং আবর্জনায় ভরে রয়েছে সংকীর্ণ গলিপথ। তাঁর নিজের নৈতিকতা-বিবর্জিত, উৎকোচে ভরা এবং অজস্র অযোগ্য বিচারে কলুষিত জীবনের মতোই দুর্গন্ধময় পথটুকু পিলেত নিঃসংকোচে পার করলেন। শহরের দুই প্রধান রাস্তার সংযোগকারী সংকীর্ণ গলির অপরপ্রান্তে পৌঁছে বিদ্রোহী ফুসফুসকে শান্ত হতে কিছুটা সময় দিলেন তিনি। উদ্বিগ্ন দৃষ্টি মেলে জরিপ করে নিলেন এ প্রান্তের পরিবেশ। স্বাভাবিক। কয়েক পা দূরে রাস্তার পাশে পরপর কয়েকটা দোকান। এক বৃদ্ধা সম্ভবত তাঁর বংশজকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত। ব্রোঞ্জের তৈরি একটা ছোট্ট ঘোড়া নিয়ে দোকানির সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। স্বস্তির শ্বাস নিলেন বর্তমানে রোমের সবচেয়ে চর্চিত মানুষটি। 'তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো।' সন্ত্রস্ত ভৃত্যদের নির্দেশ দিয়ে পিলেত গলিমুখ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। তারপর ক্লান্ত পায়ে দরদামে নাছোড় দোকানির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সম্ভ্রান্ত পোশাকে উঁচুদরের ক্রেতা ভেবে দোকানি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল। 'আমি কি এখানে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে পারি?' ভেঙে পড়া স্বরে অনুরোধ জানালেন এক সময়ের আদেশকারী জুডেয়ার প্রশাসনিক প্রধান। দোকানিকে প্রথমে হতাশ দেখাল। কয়েক মুহূর্ত সে নিষ্পলকে চে...

উড়নচণ্ডীর পাঁচালি।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।। সুপ্রকাশ।।

Image
অনেকদিন পর স্মৃতির শহরে পা দিয়ে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। অবিরত চেনামুখগুলো কোথাও ধূসর, কোথাও ছায়া ভেঙে সামনে চলে আসে। কখনো আবার কোনো প্রাচীন ঘোলাটে চোখ তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তারপর দন্তবিহীন মাড়ি ছাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে, কীরে, কেমন আছিস? কবে এলি? তখন তার ঘোলাটে চোখ চকচক করে ওঠে। বেরিয়ে আসতে চায় দ্যুতি। ছুটোছুটি করতে চায় সামনে ছড়িয়ে থাকা সবুজ মাঠের ওপর। তাকিয়ে থাকি আমিও। উত্তর দিই, ভালো। কাল এসেছি। তুমি কেমন আছ? —এই আছি। তোর ঘরের খবর কী? সব ভালো তো? কুশল সংবাদ বিনিময় চলছে, আর আমি ভেতরে ভেতরে হাতড়ে চলেছি নাম। এই প্রাচীনের নামটা মনে করতে পারছি না। প্রাচীনত্ব কিছুক্ষণ দম ধরে বসে রইল। তারপর পেনাল্টি কিক মারার মতো শব্দ ছিটকে দেয়, ‘মনাটা মরে গেল।’ কোনো আবেগ নেই। দুঃখ নেই, শুধু সংবাদ। সেই ছিটকে আসা শব্দ দু-হাতে লুফে নিয়ে বললাম, ও তো আলাদা বাড়ি করেছিল। —বড়দাকে মনে আছে? সুনীলদা? সেও মারা গেছে। —শুনেছি। কথাটা বলার সঙ্গেসঙ্গে নামটা ভেসে উঠল-- নীরজদা। ভালো ফুটবল খেলত। শহরে প্রথম ডিভিশনে খেলত। কাজ করত কারখানায়। খেলা, কাজ আর সংসার নিয়েই ছিল তার যাপন। এখন, এই প্রাচীন বয়সে বাড়ির সামনে একটা গুমটি চায়ের দোক...