Posts

নষ্ট চাঁদের আলো।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
বাজারের সবচেয়ে জমজমাট এলাকা। গোল করে ঘিরে রয়েছে সাদা চামড়ার মানুষ। মাঝের উঁচু পাটাতনে একে একে তোলা হচ্ছে বন্দি দাসেদের। কালো লোহার শেকল ছাড়া কারোর গায়ে একটা সুতো নেই। পাশাপাশি সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা তাদের দু'হাতে অসহায় যৌবনকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। একটু পাশে বেত হাতে দাঁড়িয়ে আছে যে, তার গায়ের রং-ও কালো, অথচ কী চমৎকার নির্বিকারে সে আঘাত করছে স্পর্ধিত হাতে! সঙ্গে অকাতরে বিলিয়ে চলছে অশ্রাব্য ভাষা। ক্রেতা যারা, সবটা দেখেশুনে তবেই না উপযুক্ত দর দেবে। ঘিরে থাকা মুখগুলো যেন মানুষের নয়, বুনো কুকুরের। রক্তের নোনতা স্বাদ পাওয়া কোনো নরখাদক। দৃশ্যগুলো কল্পনা করে মাগাতার চোখদুটো জ্বলে উঠল। হা ঈশ্বর! আফ্রেয়া, কোনো এক সুখের মুহূর্তে যার জন্ম, যার কাছে নিজের সমস্ত জীবন সমর্পণ করেছিল মাগাভা, রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার এমন দুর্দশা! কত গ্লানিই না সহ্য করতে হয়েছে মেয়েটাকে। আরও কত করতে হবে। এর চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। একদিন ভোলটা নদীর পাশে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল দু'জনায়, এখন তাদের ভবিষ্যত সমুদ্রের মতো অনিশ্চিত। শেষের কয়েকদিন ধরে ভুডু আগবে-এর কাছে অহোরাত্র প্রার্থনা করছে মাগাভা—ওঠো হ

মগ্নপাষাণ।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যর উপন্যাস 'মগ্নপাষাণ' পড়ে মতামত জানিয়েছেন Journal of a Bookworm। আমরা তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ____________________________________________ #পাঠপ্রতিক্রিয়া মগ্নপাষাণ লেখক - সূর্যনাথ ভট্টাচার্য প্রকাশক - সুপ্রকাশ  মুদ্রিত মূল্য - ৩৯০ টাকা বছরের ৩৩ নম্বর উপন্যাস ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস মগ্নপাষাণ।। সুলেখক সূর্যনাথ ভট্টাচার্য এর লেখা এর আগে আরেকটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস পড়েছিলাম এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম, আর তখনই ঠিক করি এনার লেখা সবকটি উপন্যাসই পড়তে হবে।। সুপ্রকাশ প্রকাশনীর ৩০% এর ছাড়বেলায় সংগ্রহ করি মগ্নপাষাণ ও ধ্রুবচন্দ্রিমা। এই উপন্যাসের কাহিনী'র কেন্দ্রবিন্দু সম্রাট অশোক।। কাহিনীর কোথাও যদিও তাঁকে এই নামে অভিহিত করা হয়নি। চণ্ড এবং প্রিয়দর্শী হিসাবেই সম্রাটের সাথে পাঠক পরিচিত হয়েছে।। ♦️ পটভূমি -  খ্রিস্ট জন্মের ২৭০ বছর আগে মগধের সিংহাসন অলংকৃত করেছিলেন মৌর্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোক। পিতা বিন্দুসারের অগ্রমহিষীর পুত্র সুসীমকে অতিক্রম করে কিভাবে অশোক মগধ সম্রাট হয়েছিলেন, সেই ঘটনা আজ বিস্মৃতির অতলে। পাঠ্য পুস্ত

শারদ নির্মুখোশ ১৪৩১।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
শারদ নির্মুখোশ ১৪৩১ পড়ে আলোচনা করেছেন শুভ রায়চৌধুরী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ................................................. শারদ নির্মুখোশ ১৪৩১ পড়া শুরু করেছি। প্রথম ছ'টি ছোটগল্পের পাঁচটি এবং দুটি উপন্যাস পড়লাম। ভেবেছিলাম সব গল্পগুলো আর উপন্যাসিকার অন্তত একটা পড়ে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব। কিন্তু সে আর হল না।  কারণ, শুভজিৎ ভাদুড়ী'র উপন্যাস 'লেলানু'।  কোনও লেখক বা লেখাকে মহৎ/ভালো বা জঘন্য/মন্দ বলার অধিকার আমাকে কেউ দেয়নি। আর সেটা বলাও যায় না। কিন্তু এই উপন্যাসটির পাঠ-অভিজ্ঞতা ভাগ করে না নিলে, নিজের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি হবে। তাই, দু'-চার কথা লিখলাম। উপন্যাসটি অনেকটা পিকারেস্ক ধারার (আপনি অস্বীকার করতে পারেন)। প্রথমেই এই কথাটা বললাম, কারণ লেখক একটা সময়ের কথা তুলে আনতে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রকে নায়ক করে তুলেছেন, এবং তার চারপাশের পঙ্কিল সমাজ-রাজনীতিকে জুড়েছেন। কোন সময়ের কথা লেখক এনেছেন? মোটামুটি গত দুই দশকের সময়কাল, যেখানে বাম রাজনীতির অবসান ঘটে তৃণমূল দল শাসনে আসছে এবং ধীরে ধীরে তাদের ক্ষমতা ও দুর্নীতি জনমানসে প্রভাব ফেলছে। এর পাশাপাশি

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
রতিকান্তর জীবন রাত্রির কাছে আশ্চর্য ঋণী হয়ে আছে। রাত যেন তার কাছে অদ্ভুত মায়া নিয়ে হাজির হয়। রতিকান্ত বলে মায়া চাদর। সেই মায়া চাদর গায়ে দিয়ে সে জীবনের সমস্ত তিমিরহননে প্রয়াসী হয়। পরিকল্পনা করে। সে জানে অন্ধকারই আসলে তাকে হাত ধরে আলোর দরজার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করায়। তারপরে আলতো স্পর্শে খুলে যায় দরজা। দরজায় দাঁড়িয়ে রতিকান্ত অপেক্ষা করে। বাইরে কাক ডেকে উঠল কোথাও। কাক ডাকার শব্দে বড় অস্বস্তি হয় রতিকান্তর। অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেছে আর মাথার ভিতরে একরাশ চিন্তা, একরাশ মাকড়শা অজস্র পায়ের দাপটে হেঁটে বেড়িয়েছে। ফলে ঘুম না আসা অবশ্যম্ভাবী। তবু একটা মিহি তন্দ্রার আবেশ সবে তাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে তখনই কাক ডাকল। মনে হলো ভীত-সন্ত্রস্ত কাক মৃত্যুযন্ত্রণার মতো হিমডাকে স্তব্ধ অন্ধকারকে ফালা ফালা করে দিচ্ছে। রতিকান্ত সত্বর বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়িটির কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। বাগানে নতুন কিছু গাছ বসানো হয়েছে। নতুন এক মালি রেখেছে সে। বাইরে বেরিয়ে দেখল নিকষ অন্ধকার। সে বাগানে নেমে এসে মাথার উপরে আকাশের দিকে তাকায়। কোথাও কোনও আলোর চিহ্নমাত্র নেই। সে বুঝতে পারল সারা আকাশ গভীর কালো মেঘে ঢেকে আছে। এক তুমুল

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
উঠোন থেকে দোতলার বারান্দায় উঠে এল বিন্ধ্যবাসিনী। আজকাল একটানা সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে আসতে হাঁপ ধরে যায়। খাড়া খাড়া ধাপ। পুরোনো বাড়ি। তবে ঢের মজবুত। বারান্দায় বেতের আরাম চেয়ারে বসে একটু দম নিয়ে নিল সে। সামনে ফিটফাট আকাশ। একেবারে ছবির মতো নীল। তবে এককোণে পাকা করমচার মতো রঙ ধরেছে। বিকেল নামছে। বিন্ধ্যবাসিনী সোজা হয়ে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। ষাটের চৌকাঠ পার করেও এখনও তার শরীর টানটান। গড়পড়তা বাঙালি মহিলাদের তুলনায় বেশ লম্বা। তাই হয়ত তাকে একটু দুবলা লাগে। তীক্ষ্ণ চোখ, টিকালো নাক। মাথায় অঢেল চুল এখনও, যেন কবেকার অন্ধকার নিশা। শুধু কালো চুলের মাঝে মাঝে দু’একটা রুপালি রেখা টেনে দিয়েছে বুড়ো বয়েস।  বিকেলে বসে বসে সে শুধু ভাবে। কী ভাবে! ভাবনার কি কোনও হিসেব আছে? আকাশ পাতাল আছে? এই যে বাড়িটা? কোন এক যুবতী বয়েসের উপার্জন। হ্যাঁ, উপার্জন কথাটাই ঠিক ঠিক মানায়। বাকি সব বিচ্ছিন্ন হেঁয়ালি ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা আগাছার লৌকিকতা। তবে জমিদার বাড়ির বউ— এমন তকমাও আদতে মিছে কথা নয় যদিও। বউ ও বউয়ের সীমানার কাছে চৌকাঠ অবধি তো সত্যি। যে যুবতীরর চানঘরে পরপুরুষ! পরপুরুষ কথাটা ভাবলেই আবার থমকে যায় বিন্ধ্যবাসিনী।

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
শ্রাবণের মাঝামাঝি। তবু বাংলার বুকে বর্ষার আগমনের পদশব্দ শোনা যাচ্ছে না। গত দুই বছর বর্ষণ হয়নি তেমন। শুখা গিয়েছে। ফলে ধানের ফলন হয়নি একেবারে। মানুষ আশঙ্কা করতে শুরু করেছে, ওড়িশার দিক থেকে আকাল এবার বাংলার দিকে সরে আসতে চাইছে। দুই বছরের অনাবৃষ্টিতে সম্পন্ন চাষির ঘরেও ধানের মজুত তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গরীব মানুষের অবস্থা তথৈবচ। যারা পারছে ঘরবাড়ি ছেড়ে নগর কলিকাতার দিকে যাত্রা করছে। তাদের ধারণা নগরে বুঝি ঢের সম্পদ, ঢের বৈভব— সেই বৈভবের ছিটেফোঁটা যদি ছিটকে এসে তাদের ক্ষুধার্ত মুখের সামনে পড়ে, তবে তারা বেঁচে যাবে। কিন্তু সে আশা মরুভূমিতে মরূদ্যানের দেখা পাবার মতো। রতিকান্ত বার দুই কলিকাতা ঘুরে এসে দেখেছে মেদিনীপুর, হুগলির গ্রাম থেকে পেটের টানে আসা মানুষদের ঠাঁই হয়েছে নগর কলিকাতার এঁদো অলিতে-গলিতে। কলিকাতা তাদের গ্রহণ করেনি। এহেন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেও রতিকান্ত ভাবে তাকে কলিকাতা যেতে হবে। চাঁদ বণিকের মতো তাকে একদিন ভিনদেশি হয়েও কলিকাতা বন্দরে পদার্পণ করতে হবে। সপ্তগ্রাম বন্দরে গঙ্গার জলের কিনারায় বসে ক্রমশ ঘনায়মান অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে আওড়াল,   ছয় পুত্র লয়ে চান্দ শীঘ্রগতি চলে।  উপনীত

খণ্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
সিপাহী বিদ্রোহের পরবর্তী কালের কলকাতা। বাংলার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষত কলকাতার বাঙালি-জীবনে চমকপ্রদ রূপান্তর ঘটে যাচ্ছে। কতিপয় বাঙালি চাইছে ফিরিঙ্গি বণিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাণিজ্য করতে। প্রাচীন এক মঙ্গলকাব্যের চরিত্র চাঁদ বেনে যেন বদলে দিতে চাইছে ছোট্ট রতিকান্তর জীবন। ‘খণ্ডপ্রহর’ আখ্যানের আবর্তে আছে রতিকান্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষা—তার শৈশবের প্রেম—তার উত্থান—পাপ-পুণ্য আর আশ্চর্য সময়ের কুহেলি।  সমান্তরাল আর এক আখ্যানে বর্তমানের কলকাতা বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে সাত্যকির জীবন। তার যাবতীয় পরিচয়। আর আছে কাশীদাসী মহাভারতের ছেঁড়া তিনটি পাতা। ইতিহাস, স্বপ্ন, বাস্তব, অবাস্তবের সমাবেশে কী সংযোগ এই দুই আখ্যানের? খণ্ড খণ্ড সময়ের অভিঘাত পারবে কি তাদের মিলিয়ে দিতে? ........................... খণ্ডপ্রহর অবিন সেন ........................... প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত মুদ্রিত মূল্য : ২৮০ টাকা সুপ্রকাশ