Posts

টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ

Image
"মূল বড় রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে গিয়ে বাজারের রাস্তা যেখানে পড়ে, সেখানে এখন সাদা পোশাকের সার্জেন্ট নেই… দুদিকের দুটি সমান্তরাল পথ, অথচ বিপরীতমুখী, দুদিকে ছোটে মানুষ। কেউ কেউ সিগন্যাল থামার ও শুরু হওয়ার অনতিপরে সমকৌণিক, জেব্রা ক্রসিং ধরে অন্য এক রাস্তায়। এখান থেকে রাধুর মনে হয়, আসলে দিক বলে কিছু নেই, গন্তব্য একটাই—সময় ক্লান্তিহীন যেদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই যে দেখতে দেখতে তার চুল দাড়িতে আজ পাক ধরে যাচ্ছে, সময়কে তবুও বৃদ্ধ মনে হয় কখনও? অমেয় শক্তিতে সে কাউকে ঠেলছে দক্ষিণে, কাউকে উত্তরে… তবু একটাই, একটাই দিক আসলে—চিরতরুণ সময় গন্তব্য স্থির করে সকলের।" ............................................................................. সাতচল্লিশের কেয়ারটেকারের একটি দিন ............................................................................. টুক্কা কৌশিক ঘোষ প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী  অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত  মুদ্রিত মূল্য : ২৯০ টাকা সুপ্রকাশ

বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'বীরেশ্বর সামন্তর হ ত্যা রহস্য' পড়ে মতামত জানিয়েছেন তিয়াষা রায় ব্যানার্জি। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................................... এই উপন্যাসটি অনেকেই পড়েছেন, অনেক সমালোচনা, আলোচনা লক্ষ্য করেছি..সুতরাং কী, কেন কিভাবে বলব না...  কিছু উপলব্ধি বলতে চাই...  পড়তে পড়তে স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম... চিত্রকল্পগুলো বিবমিষার উদ্রেক করেছিল... মাছের কাঁটার রঙের ভোর... কালো মেঘের পেট চিরে রক্তের মতো সূর্য.... একটি মাছিভরা মৃ তদেহ.. গাছ থেকে ঝুলছে.. কাদা মাখা.. বিভৎস হাসি তার মুখে আর ঠোঁটের পাশ দিয়ে র ক্ত ঝরছে.. জিভটা দুটুকরো হয়ে গেছে প্রায়..  খু  নী কে বা কারা জানা যায় প্রথমেই.. কেনটাই হলো উপন্যাসটির মূল বিষয়.. পড়তে পড়তে অদ্ভুত একটা রাগ হয়.. অসহায় একটি রাগ...  দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কিছু মানুষ.. যাদের ঘর থেকে মেয়েদের টেনে নিয়ে গিয়ে নিরন্তর ধর্ষণ করা হতে থাকে.. যারা অভিশাপ দেয়, হাতে ছুরি থাকলেও তা বসিয়ে দিতে পারে না.... সেই অভিশাপের উপকথা..  জমি দখল, অত্যাচার.. খ...

নৈশ অপেরা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।।

Image
সেদিন রাত্রে অতিথিরা বিদায় নিলে আমি পোড়ো মাঠের দিকে মুখ রেখে জেগে ছিলাম অনেকটা সময়। আমার হাতে ধরা ছিল একটা বাইবেল। শীতের রাত্রে জমাট মেঘ অবসাদের মতো ঘনিয়ে এসেছিল। মশাদের কোরাস বাড়িটাকে নিঃসঙ্গতায় ফাঁপিয়ে তুলছিল। কে দাঁড়িয়ে ছিল জলাভূমির ওপাশে? হাওয়ার গুঞ্জন বাদে অন্য কিছু কানে আসেনি। এখানে আসার পর থেকে রোদের তাপ কমে গিয়েছিল। শান্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফিসফিস আমার চারপাশ ভরিয়ে তুলেছিল অবোধ্য গুঞ্জনে। তাদের আমি কান পেতে শুনতে চেয়েছিলাম। সত্যিই কি আমি এগোব? আমার কী লাভ এতে? আমি তো গোয়েন্দা নই। এসেছি নিছক ঘুরতে। একটা অ্যাবসার্ড রহস্য, অবিনাশ যাদব যেমন বলে গেলেন, আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটা পূর্বশর্তকে যা হা-হা স্বরে উড়িয়ে দেয়, তার পেছনে ছুটে কী লাভ? কেন আমরা সবাই ইতিহাসে বাঁচব? সময়, যে যতই বলুক, কোনো চ্যাপটা বৃত্ত নয় যার ভেতর ঘুরে ঘুরে আমাদের সেই কাজ, একই কাজ এবং আবার ও বার বার একই কাজ করে যেতে হবে। ক্রিস ব্রাউন হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে। তার রহস্যের সমাধান হয়নি। ফলত, এতদিন পরে কেন নাড়াঘাঁটা করব তাকে? আমি একজন পোড়খাওয়া ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিক। আমার কী এসে যায় বহু বছর আগের এক ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নিয়...

নৈশ অপেরা।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ

Image
আমি স্যাংচুয়ারিতে থেকে গিয়েছিলাম, দশদিন ছাড়িয়ে আরও পাঁচদিন। বাড়িটাকে তামার পয়সা ঘষা কাচের মতো অস্বচ্ছ মনে হত আমার। বাড়ির ডান দিকের ভগ্নস্তূপে চোখ চালালে ঘর, স্টোররুম, গাড়িবারান্দার অনুপস্থিত ছায়া। বামদিকের যে অক্ষত অংশে আমরা ছিলাম, তার বন্ধ ঘরগুলোর দরজায় কান পাতলে নৈঃশব্দ্যকে অন্তর্ভেদী ও হাহাকারময় লাগতে পারত। সস্তা পর্দার দল প্রবল হাওয়ায় ওড়াউড়ি করত। বাড়ির পেছনে পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। তার ওপাশে নাকি কোনো একসময়ে একটা জঙ্গল ছিল, একশো বছর আগে পুড়ে যায়। এখন একটা আগাছা ভরতি দিগন্তবিস্তৃত বিরাট মাঠের আকার নিয়েছে যার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে গভীর কাদা, জলাভূমি, বুকসমান বুনোঘাসের সারি। একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ির কঙ্কাল জলার অপরপ্রান্তে বসে আছে। মাঠ ও জলার ভেতর ইতিউতি মাথা উঁচু করে থাকে গাছের গুঁড়ি, আমগাছের হাত মেলা কঙ্কাল। অঞ্চলটা আকারে এতই বিশাল ও স্থানে স্থানে অগম্য যে, তার অপরপ্রান্তের জঙ্গলকে আকারে বামন লাগে, শালগাছকে মনে হয় কোমরসমান। স্যাংচুয়ারির অক্ষত অংশের মাথায় টালি। সেখান দিয়ে বুনো লতা নেমেছে। বাড়ির সামনে, পেছনে অনেকটা জায়গা ঘিরে বাগান। সেখানে যত্নের অভাবে আগাছা। শিশু কোলে মেরির ছোট্ট মন্দির, মুরগি...

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে গুডরিডস্-এ মতামত জানিয়েছেন ফরজানা রহমান। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ......................................................... বই : অনন্যবর্তী লেখক : দুর্লভ সূত্রধর প্রকাশক : সুপ্রকাশ পৃষ্ঠা : ২৩৬ মূল্য : ৩২০ রুপি ইউটোপিয়ান ঘরনার গল্প দুর্লভ সূত্রধর-এর "অনন্যবর্তী"। আমাদের জীবন অবশ্যই সেই ঘরনার নয়। আমাদের স্বপ্নে অবশ্য আমরা ইউটোপিয়ান কিছুর চারপাশে কুয়াশা মাখা কিছুর কংকাল দেখি। বেগুনি পেরেকে বিদ্ধ এই জীবনের জটিলতার উত্তাপে স্বপ্নে ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিশেষ কিছু কথা উৎসাহ নিয়েই ঘুম আসে। আবার ঘুম শেষে হারিয়ে যায় স্বপ্নটা নিজের ছায়ার মতো। আদতে আমরা কি খুব সাধারন একটা গল্পের কাছে সমর্পিত হই? আমাদের পড়া গল্পের প্লটটাও যেন জটিল হতে হয়। খুব সাধারন একটা হাওয়াই মিঠাই টাইপ গল্প তারপরও আমাদের সমর্পিত হতে বাধ্য করে। দুর্লভ সূত্রধর-এর "অনন্যবর্তী" সেই গোলাপি হাওয়াই মিঠাই। নান্দনিক। উপন্যাসটি গভীর নয়, আবার গভীর জীবনবোধের অভাবে দুষ্ট নয়। হালকা, তবে ওজনহীন নয়। 'অনন্যবর্তী' অনেকটা আমাদের ...

টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ।।

Image
সন্ধে নামে। নিমাই তার দলবল নিয়ে মাঠে বসে। কার্তিক নিমাইয়ের কোণাকুণি নিকটবর্তী অবস্থানে, বিড়ি ধরায়। নির্বাচন-ফলাফল নিয়ে আলোচনা চলছে। চারু রান্নাঘরের কাছে গিয়ে বলে, "বৌমা, সন্ধ্যাটা দিয়ে দাও।" দাওয়ায় এসে দাঁড়ায় চারু। ভেতর থেকে তিনবার প্রলম্বিত শাঁখের শব্দ ভেসে আসে ও থেমে যায়। চারু টের পায়, অন্ধকারে জটলা, মাঠ থেকে নিমাইয়ের গলা ভেসে আসছে। ভেতরের ঘরে খাটে বসা রানির কাছে যায় চারু, বলে, "তোর বাপ মাঠে বসে, তাকে একবার ডাক না!" —"আমি যেতে পারব না এখন। অনেক লোক।" চারু গজগজ করে পায়চারি করে, "সে কদবা ঘরকে আসবে? সারাদিনে খাইছে সে?" এদিকে নিমাই মাঠে বক্তৃতা দিচ্ছে— "শুধু এই ওয়ার্ডের ব্যাপার নয়। আমরা লড়াই করেছিলাম। কিন্তু, এই পৌরনির্বাচনে বামফ্রন্ট ও বামপন্থী প্রার্থীরা হেরে গেছে। উনিশটি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র পাঁচটা জিতেছি আমরা। চারটিতে সিপিআইএম, একটিতে সিপিআই। ফলে, কংগ্রেস বোর্ড গঠন করবে। কিন্তু খেটেখাওয়া মানুষের জন্য আমাদের লড়াই জারি থাকবে। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।" তারপর গলা উঁচু করে স্লোগান দেয়— "বামপন্থী ফ্রন্ট ঐ...

টুক্কা।। কৌশিক ঘোষ।। সুপ্রকাশ।।

Image
‘আমি ভাবছি যে’, লোকটা এবার বলে, ‘যে সবার শেষে নিজের নামটা দেখবে তার কী হবে?’ কথাটা শুনেই আমি থমকে গেলাম। —‘যে কোনো পরীক্ষায় তো কেউ না কেউ লাস্ট হবেই। এতে মহাভারত উল্টে যায় না।’ আমি বললাম। —‘সেটা ঠিক। কিন্তু, ব্যাপারটা একটা তীব্র মানসিক চাপ তৈরি করবে না কি? যদি এত প্রেসার সে সামলাতে না পারে?’ এরপর লোকটা নিজের জীবনের গল্প খুলে বসলো। ফুটবল খেলোয়াড় ছিল সে। একদিন নিজের শৈশবের বন্ধু, গোলকিপার তোতার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সে একটি দুর্বল শট নেয়। অবিশ্বাস্যভাবে বলটা তোতার হাত ফসকে জালে ঢোকে। ম্যাচ হেরে তোতা বাদ পড়ে যায় দলে, হয়ে ওঠে বিদ্রূপের লক্ষ্য। অল্পদিন পর রেললাইনে তার মৃত্যু—অ্যাক্সিডেন্ট না আত্মহত্যা, কেউ জানে না। লোকটা থেমে বললো, ‘এর পর থেকে আমি যখনই গোলের কাছে যেতাম, দেখতে পেতাম তোতা দাঁড়িয়ে আছে—অসহায়, কাকুতি-মিনতি করছে। আমার শটগুলো জালে যেত না আর। আমিও বাদ পড়ে গেলাম খেলায় থেকে। জীবন থেকে।’ ........................................... পাখিদের পাঠশালা ........................................... টুক্কা কৌশিক ঘোষ প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী  অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত  মুদ্রিত মূল্য : ২৯০ টা...