Posts

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
দু'জনের কারোর কথাই এমার কানে ঢুকছিল না। সে একমনে টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আবার আগের ফ্রেম। অন্ধকার গুহার মাঝামাঝি উঁচু হয়ে থাকা বেদী, অথবা সমাধি। যাইহোক না কেন, তার গায়েও বিচিত্র কিছু ছবি পাথর কুঁদে তৈরি করা। এমা দু আঙুলে মোবাইলের ছবিকে জুম ইন করল। অদ্ভুত ছবি! মাটারডামের দৃশ্য নয়। যুদ্ধেরও নয়। মুখোমুখি দুজন মানুষ। একজনের শরীর সম্ভবত মাটিতে অর্ধেক প্রোথিত। অন্যজন তার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশে আরও একটা দৃশ্য। উঁচু মিনারে পাশাপাশি দুজন মানুষ। মাঝখানে পাহাড় বা ত্রিভুজ জাতীয় কিছু আঁকা। নিচে আবার সেই বিজাতীয় ভাষা খোদাই করা। ‘এই ছবিগুলোর কোনো অর্থ থাকতে পারে। চেনা দৃশ্য নয়। সেন্ট-মরিসে চার্চ থেকে শুরু করে লাইব্রেরি, সব জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিশুর জীবনের ঘটনা এবং মাটারডামের দৃশ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গুহার দেয়ালেও তাই। কেবলমাত্র পাথরের বেদীতে অন্যরকম ছবি। কেন?’ কাউকে নয়, প্রশ্নটা নিজেকেই করল এমা। তবে তার কথাগুলো কৌতূহলী করে তুলল ঘরের বাকি দু'জনকেও। জোনাথন দরজার মুখ থেকে সামান্য সরে চোখ রাখলেন দেয়ালের ঝুলন্ত টিভি-তে। এলিনও ফ্রিজের কাছ থেকে সরে এমার কাছে গিয়ে দাঁড়াল...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
এমাদের প্রথমে উতরাই, তারপর চড়াই ভাঙতে হলো। মিনিট দশ-বারো হাঁটল তারা। আঁটোসাঁটো সুড়ঙ্গপথ একটা প্রশস্ত গুহায় এসে থেমেছে। এখান থেকে পাশাপাশি কতগুলো মুখ নতুন কোনো গন্তব্যের দিকে হাঁটা দিয়েছে হয়তো। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না। মুখগুলো যেন হাঁ করে অন্ধকার বমি করবে বলে মুখিয়ে আছে! দুটো মুখে আবার ইস্পাতের মোটা রড দিয়ে তৈরি দরজা। 'কয়েদখানা! এখানে তার কী প্রয়োজন?' প্রশ্নটা এমার মগজে আঁচড় কাটল। বোঝাই যাচ্ছে গুহাটার অবস্থান পাহাড়ের ঢালে। একেবারে মাথায় পাথর কেটে নিখুঁত বৃত্তাকার গর্ত তৈরি করা। লম্বাটে সেই গর্ত দিয়ে কোনাকুনি দৃষ্টি আকাশকে ছুঁতে পারে। এলিন বলল, 'বাইরে আলো মরে আসছে। এত তাড়াতাড়ি!' 'দিনের খুব কম সময়ের জন্য সূর্য উপত্যকার এদিকে পা রাখতে পারে।' সুড়ঙ্গে প্রবেশের পর থেকে সামিরা প্রায় পুরো রাস্তা নিজের উপস্থিতি জাহির করেনি। দুই ভাইবোনও বিস্ময় এবং রোমাঞ্চের আধিক্যে তার উপস্থিতি ভুলেই বসেছিল। এতক্ষণে বুঝি তাদের মনে পড়ল অভিযানে তৃতীয় একজনও আছে। 'আপনি কি আগেও এই পথ ব্যবহার করেছেন?' সামিরা এলিনের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল, 'গুহার পাঁচটা মুখ। কোন মুখ নেওয়া উচিত হবে বলুন তো, ...

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর স্মৃতিকথন 'হাফ প্যাডেলের কাল' পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শাফিন মাসফিকুল আলম। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  অধিকাংশ ভালো বই আন্ডাররেটেড কেন, পাঠকের ভাবা প্রয়োজন। ............................................................................................................ এই লেখক কোথাও একবার লিখেছিলেন— শৈশব ও শৈশবোত্তর সময়ের কিছু কিছু স্মৃতি নিউরনের কোষে কোষে প্রস্ফুটিত ফুল হয়ে বসত করে। আজীবন সঙ্গী এই স্মৃতিমালার হাত থেকে নিস্তার পেতে মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় মানুষকে। তবে কিছুটা স্বস্তি মেলে যদি এগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। হয়তো এ জন্যই তাঁর কলমে রচিত হয়েছে— হাফ প্যাডেলের কাল। খুবই মায়াকাতর এই লেখা। লেখক অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী উপন্যাসের আঙ্গিকে লিখেছেন তাঁর বালক বয়সের কয়েক বছরের স্মৃতি। সময়কাল ষাটের দশক। লেখক গ্রাম ভালুকখুল্যা থেকে দুর্গাপুর এসেছেন তাঁর দাদা গোস্বামীবাবুর কাছে থেকে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হতে। গোস্বামীবাবু চাকরি করেন ডিভিসি, এক সরকারি সংস্থায়, থাকেন এর জন্য নিয...

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে (পরিবেশ সম্পর্কিত আক্রমণ-হত্যা: ইতিহাস-বর্তমান)।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ

Image
পরিবেশ-সচেতনতার ঠাণ্ডা ঘরের ঢক্কানিনাদের ভেতর সেইসমস্ত শরীরগুলো শনাক্ত করা দরকার, যারা ভেসে গেছিল। রামধনু, নৌকো, সূর্য-পরিবেশ আন্দোলনের অতিসরলীকরণের ওপর ঠাণ্ডা চাদর। অথচ শরীরগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। মিলান কুন্দেরা বলেছিলেন— 'দ্য স্ট্রাগল অফ ম্যান এগেইন্সট পাওয়ার ইজ দ্য স্ট্রাগল অফ মেমোরি এগেইনস্ট ফরগেটিং'। বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির এই অসম লড়াইয়ের ইতিহাস-বর্ণনার ছোট্ট একটি চেষ্টা পরিবেশ সংক্রান্ত আ ক্রমণ-হ .ত্যার সংকলন। ইতিহাস ঘেঁটে বিশেষ কিছু রাষ্ট্র-ভিত্তিক আ ক্রমণের ইতিহাস ও সাম্প্রতিকতার অন্বেষণ, সেইসমস্ত দেশে যেখানে সরকার নিজে পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর নয়, যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তলানিতে, যেখানে দুর্নীতির লেখচিত্র ক্রমশ ওপরের দিকে, যেখানে আইনের শাসন খুবই সামান্য, বিচারব্যবস্থা ধুঁকছে। পরিবেশকর্মী হ .ত্যার তথ্যে কিছু বিশেষ দেশ, অঞ্চল চিহ্নিত যেখানে লেখচিত্রের অদলবদল ঘটলেও বছর থেকে বছর তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য আশার বাক্স খোলার খবর পাওয়া যায় না। গ্লোবাল উইটনেস, মোঙ্গাবে, গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্স বা এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস অ্যাট...

হাম প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর বই 'হাফ প্যাডেলের কাল' পড়ে গুডরিডস্-এ মতামত জানিয়েছেন ফারজানা রহমান। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................. বই : হাফ প্যাডেলের কাল লেখক : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী প্রকাশনী : সুপ্রকাশ মূল্য : ৩৫০ রূপী ম্যাজিক মাশরুম। শ্রুমস! অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর 'হাফ প্যাডেলের কাল পড়ে এটাই মনে হলো— ম্যাজিক মাশরুম। এ এক অন্য ধরনের স্বচ্ছতা, অন্য জগতের ঘোর। ফেলে আসা সময়ের স্কেচ। স্মৃতিকথা বা আত্মজৈবনিকমূলক লেখার উত্তম পুরুষের চেনা পাঠ থেকে পাশ কাটিয়ে লেখক যখন প্রথম পুরুষে বলে যান "আজন্ম খালিপদ পাড়াগেঁয়ে বালকটির" কথা— তখন ডটপেনে লেখা অদৃশ্য নাম সাদৃশ্য হয়ে ওঠে পাঠকের মনেও। প্রথম পুরুষে বয়ানের কারনেই এর রূপটি হয়ে ওঠে উপন্যাসের। বালকের সাদৃশ্যতা যে সরল ছকে ধরা দেবে পাঠকের সামনে, সেখানে হয়তো পার্সোনাল ম্যাগনেটিজম আরোপ হবে না, তবে বালকের সেই স্বচ্ছতাই ম্যাগনেটের মতো আঁকড়ে ধরবে পাঠককে। "হাফ প্যাডেলের কাল" বর্তমান আর ফেলে আসা ছেলেবেলাম মাঝে ক্রমশ মিশে যাওয়া ক্লোজআপ...

বাঘাচাঁদের কথাকাব্য।। অনিল ঘোষ।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অনিল ঘোষের বই 'বাঘাচাঁদের কথাকাব্য' পড়ে 'আজ কাল পরশু, শারদ ২০২৫' পত্রিকায় আলোচনা করেছেন তপন কুমার মণ্ডল।  ................................................................................... বাঘাচাঁদের কথাকাব্য : ইতিহাস ও মিথের আশ্চর্য বিনির্মাণ  শুরুতেই চমক— “কার এঁজ্ঞে? বাঘাচাঁদের এঁজ্ঞে—" মনে হল পঞ্চাশ বছর আগে কোনো এক বটতলায় বসে কোনো গল্পকথক বাঘাচাঁদের স্মরণ নিয়ে তার গল্পের ঝাঁপি খুলছেন। সুন্দরবনের গল্প। সুন্দরবন অপার রহস্য ও বিস্ময়ের এক আশ্চর্য লীলাক্ষেত্র। বাঘ, কুমির, বাদাবন যেমন তার চিরায়ত চরিত্র, তেমনি বৈচিত্র্যময় তার জঙ্গল হাসিলের ইতিহাস, সামাজিক বিবর্তনের ইতিবৃত্ত এবং ভূখণ্ডের মানুষের সংঘর্ষবহুল জীবনযাত্রা। সুন্দরবন অনুভবের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে অনেক অনেক লোককথা, লোকবিশ্বাস ও কিংবদন্তী যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুন্দরবনের জনপদ গঠন থেকে শুরু করে তার ও তার মানুষজনের বিবর্তনের নানা প্রসঙ্গের উদযাপন  গোষ্ঠীগত,সামাজিক বা পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে ধরা থাকে যার মধ্যে দিয়ে এক একটা কিংবদন্তীর জন্ম হয় এবং সেগুল...

সৌভাগ্যশলাকা।। অলোক সান্যাল।। সুপ্রকাশ।।

Image
সংকীর্ণ পথ, এঁকেবেঁকে যেন পাহাড়ের গর্ভে ঢুকে গেছে। যাওয়ার পথে ডাইনে-বাঁয়ে তৈরি করছে আরও কিছু শাখা। এগুলো অবশ্য ধাঁধা তৈরি করার জন্য বের করা। এমন পরিকল্পনা অ্যাডোনিস ছাড়া কার উর্বর মস্তিষ্কের ফসল হতে পারে? সুযোগ পেলে স্থপতি হিসেবে জেনেরিয়াসের নাম আরও উজ্জ্বল করতে পারত সে। পিতার, নিজের নামকে ইতিহাসের পাতায় খোদাই করার পরিবর্তে অ্যাডোনিস বেছে নিয়েছে অন্য পথ। এক মহান আদর্শকে রক্ষা করার পথ। আর এই পথ নির্মাণের নকশা এঁকে দিয়েছেন আরিমাথিয়ার জোসেফ। 'ঈশ্বরের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে'— এই কথার মধ্যে দিয়ে বৃদ্ধ জোসেফ আদতে বিশ্বাসকে রক্ষা করার দায়িত্ব সঁপেছেন তাঁদের কাঁধে। পরিকল্পিত প্রচার, জটিলতা, রহস্যের গভীরতা সেই বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার অন্যতম মন্ত্র। একদিন যেভাবে সকলে প্রভু জিশুর পুনর্জীবন লাভের কথা শুনেছিল, এমনকী কেউ কেউ দেখেওছিল, সেভাবেই মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর পান করা পাত্র, তাঁর পোশাকে কিংবা রোমান সেঞ্চুরিয়ানের বর্শাফলকে শুকিয়ে লেগে থাকা পবিত্র রক্তের দাগকে অনশ্বর করে যেতে হবে। প্রধান সুড়ঙ্গপথকে মশালের আলো মাখিয়ে রাখা হয়েছে। খুঁজে নিতে ভুল হয় না। অবশ্য আলো না থাকলেও একটানা ভেসে আসা পাথ...