মল্লভূমের দশাবতার তাস।। রামামৃত সিংহ মহাপাত্র।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত রামামৃত সিংহ মহাপাত্রের 'মল্লভূমের দশাবতার তাস' পড়ে মতামত জানিয়েছেন মধুশ্রী মাহিন্দার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
..........................................................................
পাঠপ্রতিক্রিয়া
বইয়ের নাম : মল্লভূমের দশাবতার তাস 
লেখক : রামামৃত সিংহ মহাপাত্র 
প্রকাশক : সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য : ২৮০/-

আঞ্চলিক চর্চা বিষয়ক প্রকৃত তথ্যভিত্তিক বই পড়তে পছন্দ করি। দু-চার পাতা নাড়াচাড়া করার পর মনে হল বইটি একবার অন্তত পড়া দরকার। মল্লভূমের এই দশাবতার তাস সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানা ছিল না। শেষভাগে আকর্ষণীয় সব তাসের ছবি আর আমায় রুখতে পারল না।

"আগাডোম বাগাডোম
 ঘোড়াডোম সাজে
 ঢাক ঢোল ঘোঙর বাজে
 বাজতে বাজতে চলল ঢুলি..." —সেইসময় মল্লরাজাদের যুদ্ধযাত্রার বর্ণনা মেলে প্রচলিত এই গ্রাম্য ছড়ায়। ইতিহাস বই পড়ে জানা যায় ৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে (১০১ বঙ্গাব্দ) মল্লরাজাদের একাধিপত্য স্থাপিত হয়েছিল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। রাজা রঘুনাথ মল্ল প্রতিষ্ঠা করেন এই রাজবংশ। তখন থেকে নতুন সাল গণনার পদ্ধতি বা মল্লাব্দর সূচনা হয়। তাঁদের পদবী অনুযায়ী বিষ্ণুপুরের নাম হয় মল্লভূম। সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হিসাবে বীর হাম্বীর মল্লের নাম জানা যায়। রাজাদের বংশলতিকাও সাল অনুযায়ী উল্লিখিত। এইটুকু ছোট্ট বইয়ে এত তথ্য!

বিষ্ণুপুর সংগীত-ঘরানা, টেরাকোটার মন্দির-স্থাপত্যর সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এমনকী আলতা, শাঁখা-সিঁদুর, লোহা, শোলার কাজ, মাদুলি শিল্পের কথাও অনেকে জানেন। এই ফাঁকে বলে নিই পিয়াল বীজের বাদাম দিয়ে তৈরি মতিচুর, যার জগৎজয়ী খ্যাতি এখানেই তার উৎপত্তি। কিন্তু জানেন কি রাজ ঘরানার বিচিত্র এবং বহুমুখী জীবনচর্যায় বিনোদনের মাধ্যম ছিল দশাবতার তাস ও নক্সা তাস? বিষ্ণুর দশ অবতারের নামে গঞ্জিফা হল এই দশাবতার তাস। বর্তমানে এই তাসশিল্প বিলুপ্তপ্রায় বলা চলে। তাস খেলার চলও অবলুপ্তির পথে। তাস নির্মাণ খরচও অনেক বেশি এবং পরিশ্রমসাধ্য পেশা। তবে কিছু শৈল্পিক রুচিসম্মত মানুষ অন্দরমহলের অঙ্গসজ্জার জন্য এখনও এই তাস কেনেন বা খোঁজ করেন।

ঐতিহ্যবাহী এই তাসের উৎস, নির্মাণ কৌশল, খেলার নিয়মাবলি, বিবর্তন ও কারিগরের পরিচয় জানতে পারলাম। আমার তো পড়ে বেশ ভালো লাগল। গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নোট করে নিয়েছি। দশাবতার তাস নির্মাতা শিল্পী শীতল ফৌজদার এবং গঙ্গা ফৌজদারের সাক্ষাৎকার বইটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। তবে দুঃখের বিষয় রাজ-পৃষ্ঠপোষকতা অপসৃত হওয়ার পর বাধ্য হয়ে এই তাসশিল্পীদের বিকল্প জীবিকা বেছে নিতে হয়েছে এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে অচিরেই হারিয়ে যাবে। এই ব্যাপারে লেখকের সঙ্গে আমিও একমত।

নব্বই-ঊর্ধ্ব দাদামশায়কে বৈশাখী উপহার দেব বলে বইটি বাছাই করেছি। আশা করি ওঁর পছন্দ হবে। উনি নিজেও একজন স্বনামধন্য লেখক। আরও কিছু বাড়তি গল্প শোনা যাবে। আপনারাও পড়ে দেখুন। কেমন লাগল জানাবেন। ধন্যবাদ। 🙏

©মধুশ্রী

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।